‘দ্য আনএক্সপেক্টেড’, দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এবং পরিচালিত প্রথম বাংলা ছবি নির্বাচিত হয়েছে ১৬তম শিকাগো সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের (CSAFF) জন্য। এই উৎসবে ছবিটির বিশ্বপ্রিমিয়ার হবে আগামী ১৪ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার শিকাগো শহরে।
ছবিটি প্রযোজনা করেছে ইস্টার্ন থেস্পিয়ানস উইম্বলডন। এটি লন্ডনের একটি স্বাধীন প্রযোজনা সংস্থা এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন কলকাতার চিকিৎসক দম্পতি—চান্দ্রেয়ী সেনগুপ্ত এবং দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে তাঁরা ইউকে-তে থাকেন এবং এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস)-এ কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন।
পরিচালক দেবাশিষ বলেন, “‘দ্য আনএক্সপেক্টেড’ আমাদের প্রডাকশন হাউস, ইস্টার্ন থেস্পিয়ান্স উইম্বল্ডনের প্রথম অর্থাৎ ডেবিউ প্রডাকশন। ছবিটি শিকাগো সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভেল ২০২৫ এ ইন কম্পিটিশনে প্রদর্শিত হওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছে। আমাদের প্রথম কাজটি এই বিখ্যাত ফেস্টিভ্যালে নির্বাচিত হওয়া আমাদের পক্ষে অত্যন্ত আনন্দের এবং সম্মানের। এবং আমাদের প্রথম প্রচেষ্টার এক গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।
বিষয়বস্তু, অভিনব কাহিনীবিন্যাশ এবং তার সঙ্গে মানানসই লন্ডন এবং ইস্টবর্নের প্রেক্ষাপট, সব মিলিয়ে ‘দ্য আনএক্সপেক্টেড’কে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। পরিচালকের কথায়, “এই ছবিতে পূর্ব এবং পশ্চিমের নান্দনিকতার একটি অনন্য সংমিশ্রণ তৈরি করেছে, যা আমরা আশা করি দর্শকরা উপভোগ করবেন।”

দেবাশিষ ছাত্রাবস্থা থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত– মঞ্চ এবং পর্দা, দুটোতেই। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে পড়াকালীন তিনি অভিনয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন কয়েকটি বিখ্যাত টেলিভিশন চ্যানেলদের জন্য। পরবর্তীতে লন্ডনে, চান্দ্রেয়ী এবং তিনি ২০১২ সালে লন্ডনভিত্তিক থিয়েটার কোম্পানি ইস্টার্ন থেসপিয়ানস শুরু করেন। এবং তার মাধ্যমে বাংলা এবং ইংরেজিতে বেশ কিছু সফল নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। তার মধ্যে একটি, ‘উত্তরাধিকার’ বিশ্ব বিখ্যাত এডিনবার্গ ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভ্যালে মঞ্চস্থ হয়। এবং সমালোচক-দর্শক উভয়ের প্রশংসা অর্জন করে। কিন্তু কোভিডের ভয়াবহ সময়ে তাঁদের থিয়েটার বন্ধ করতে হয়েছিল। সেই সময়ই চলচ্চিত্র নির্মানের ভাবনা মাথায় আসে। দুই শিল্পীর কথায়, “প্রথমে আমাদের পরিকল্পনা ছিল ছবিটি মোবাইল ফোনে শুটিং করে বানান হবে , কিন্তু ঘটনাক্রমে প্রকল্পটি যেন নিজেই নিজের রূপ নিতে শুরু করল। অবশেষে কোভিড লক ডাঊন শেষ হলে, ২০২২ সালে আমাদের ফিল্ম কোম্পানি, ইস্টার্ন থেসপিয়ানস উইম্বল্ডন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আমরা প্রথাগত চলচিত্র নির্মাণ পদ্ধতি অনুযায়ী ছবিটি নির্মাণ করি। এই ছবিটি সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব অর্থ এবং উৎসাহে তৈরি। আমাদের দলটি খুবই ছোটো কিন্তু প্রতিটি মানুষ অসম্ভব উৎসাহ এবং দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করেছে। তাদের প্রত্যেকের অবদান ছাড়া আমাদের এই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হত না। ফলে, একটি বিখ্যাত চলচিত্র উৎসবে আমাদের প্রথম ছবিটি জায়গা পাওয়াতে আমরা প্রত্যেকেই খুবই আনন্দিত এবং গর্বিত।”
ছবিটি যদিও বাংলায় তৈরি, তা সত্ত্বেও ছবিটির বিষয়বস্তু, প্রেক্ষাপট এবং চরিত্রবিন্যাশের মধ্যমে ছবিটি ভৌগলিক, প্রান্তিক এবং জাতিগত সীমানা অতিক্রম করতে পেরেছে বলেই আশা রাখছেন দেবাশিষ এবং চান্দ্রেয়ী।
