‘ফ্যামিলি ফ্যান’ এর ‘ভূতুড়ে’ ছবি
বলিউডের এক এবং অদ্বিতীয় শক্তিশালী অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী এবার প্রবেশ করতে চলেছেন একেবারে অচেনা ঘরানার ছবিতে— হরর কমেডি। ছবির নামই বলিউডি ঢঙে ভৌতিক অথচ মজাদার— ‘পুলিশ স্টেশনে ভূত’। সোমবার, ১লা সেপ্টেম্বর এই ছবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়েছে। প্রকাশ্যে এসেছে ছবির মোশন পোস্টারও, যা প্রকাশের পর থেকেই দর্শক-সমালোচক মহলে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন।
পোস্টারে দেখা যাচ্ছে মনোজ বাজপেয়ীকে— কড়া পুলিশ অফিসারের পোশাকে, হাতে এক অদ্ভুত ভাঙাচোরা পুতুল, যেটি কাদামাটি ও রক্তে মাখামাখি। সেই পুতুলের অস্বাভাবিক বড় বড় চোখ যেন ক্যামেরার বাইরে দর্শকের শরীর শিহরিয়ে দেয়। একদিকে বাস্তবের পুলিশ স্টেশনের কঠোরতা, অন্যদিকে ভৌতিক আবহ— এরকম এক নতুন ঘরানার ককটেল নিয়ে হাজির বাজপেয়ী, যা হররপ্রেমীদের পাশাপাশি কমেডির দর্শকদেরও টানবে বলেই মনে করছে ইন্ডাস্ট্রি।

মনোজ নিজেই এক্স (সাবেক টুইটার)-এ শেয়ার করেছেন মোশন পোস্টার। লিখেছেন— “পুলিশ স্টেশন মে ভূত-এর শুটিং শুরু হল। সত্যা থেকে আজ পর্যন্ত… কোনও কোনও যাত্রা পূর্ণতা পেতেই হয়। প্রায় তিন দশক পর ফের একসঙ্গে কাজ করতে পেরে রোমাঞ্চিত। এই ছবি আমার কাছে বিশেষ।” এই বক্তব্যই ইঙ্গিত দিচ্ছে, ছবিটি কেবল একটি জঁরা-পরীক্ষা নয়, বরং বাজপেয়ী-বর্মা জুটির এক আবেগমাখা পুনর্মিলন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে রাম গোপাল বর্মার আইকনিক ছবি ‘সত্য’-তে ভিড়ের মধ্যে এক ‘ভিকু মাতরে’-র চরিত্রে মনোজ বাজপেয়ীর বিস্ফোরক অভিনয় তাঁকে রাতারাতি বলিউডে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। সেই ছবিই তাঁকে এনে দেয় কাল্ট-স্ট্যাটাস। এরপর কেটে গিয়েছে প্রায় তিরিশ বছর। অবশেষে আবার সেই পরিচালক-অভিনেতার জুটি ফিরছে, তবে এবার একেবারে অন্য ধারার পরীক্ষামূলক ছবিতে।
এই ছবির আরেক বড় আকর্ষণ নিঃসন্দেহে অভিনেত্রী জেনেলিয়া দেশমুখ। দীর্ঘদিন পর বড় পর্দায় প্রত্যাবর্তন ঘটছে তাঁর। সম্প্রতি তাঁকে দেখা গিয়েছিল ‘সিতারে জমিন পর’ ছবিতে। কিন্তু হরর কমেডি ঘরানায় বাজপেয়ীর পাশে তাঁকে দেখা যাবে— এই খবরে বলিউড-ভক্তরা ইতিমধ্যেই উচ্ছ্বসিত।
শিল্পমহলের মতে, বলিউডে যেখানে হরর-কমেডি ঘরানায় বড় বাজি খুব একটা খেলা হয় না, সেখানে মনোজ বাজপেয়ী ও রাম গোপাল বর্মার এই সহযোগিতা নিঃসন্দেহে এক সাহসী পদক্ষেপ। পোস্টারের শীতল-দৃষ্টির তীব্রতা আর ব্যাঙ্গাত্মক নাম— সব মিলিয়ে ‘পুলিশ স্টেশন মে ভূত’ ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
এখন বলিউডবাসীর অপেক্ষা— ভিকু মাথরে-র পর এবার ভূত-হাসির খেলায় মনোজ কীভাবে মুগ্ধ করেন দর্শককে।
শাহিদের ‘বিশাল’ ঘোষণা
বলিউডে শাহিদ কাপুর মানেই অভিনয়ের নতুন এক জগৎ। আর তাঁকে ঘিরে যদি থাকেন ভরদ্বাজ–অর্থাৎ পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ, তবে দর্শকরা ধরে নিতে পারেন যে কিছু আলাদা, কিছু চমকপ্রদ আসছে। ঠিক তাই ঘটল আবারও। রবিবার নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি শেয়ার করে শাহিদ ঘোষণা করলেন—শেষ হয়েছে তাঁর আসন্ন ছবির শুটিং, যা বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে তাঁর চতুর্থ সহযোগিতা।
শাহিদ লিখেছেন, “এবারও এক নতুন জগৎ, একেবারে ভিন্ন চরিত্রে আমাকে দেখা যাবে। এটাই আমার চতুর্থ কাজ বিশাল স্যারের সঙ্গে। উত্তেজনার মাত্রা আকাশ ছুঁইছে।” এর আগে এই জুটির তিনটি ছবি— কামিনে (২০০৯), হায়দার (২০১৪) এবং রংগুন (২০১৭)—বলিউডে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল। বিশেষ করে হায়দার শাহিদকে এনে দিয়েছিল জাতীয় পুরস্কারের স্বীকৃতি।
সবচেয়ে বড় কথা, বিশাল ভরদ্বাজের সিনেমায় একাধিকবার মুখ্যচরিত্রে দেখা গেছে শাহিদকে। অভিনেতা নিজেই লিখেছেন, “আমি ছিলাম এক জন ‘কামিনে’, আমি ছিলাম ‘হায়দার’, আর এবার আমি...”—এই রহস্যময় ভঙ্গিমাতেই ঘোষণা করলেন নতুন চরিত্রের ইঙ্গিত। নাম এখনও প্রকাশ্যে আসেনি, কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে, এ ছবিতেও কেন্দ্রীয় চরিত্রে নজর কাড়বেন শাহিদ।
এবারের ছবিতে রয়েছেন আরও শক্তিশালী কাস্ট। বুলবুল খ্যাত তৃপ্তি দিমরি, অভিজ্ঞ নায়ক নানা পটেকর, প্রবীণ অভিনেত্রী ফরিদা জলাল, প্রতিশ্রুতিমান অভিনব তিওয়ারি এবং দিশা পটানি। এক ছাদের তলায় এত নামী মুখ একত্র হওয়ায় ছবির প্রত্যাশা আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। বিশাল ভরদ্বাজ বরাবরই সাহিত্যের ছায়া মিশিয়ে ব্যতিক্রমী গল্প বলতে ভালবাসেন। হায়দার ছিল শেক্সপিয়রের হ্যামলেট-এর রূপান্তর। কামিনেয় তিনি উপহার দিয়েছিলেন এক দুর্দান্ত ক্রাইম-ড্রামা। ফলে দর্শকদের কৌতূহল—নতুন ছবির ন্যারেটিভ এবার কোন দিকে যাবে? জব উই মেট থেকে কবীর সিংপ্রতিটি ছবিতে তিনি নিজেকে নতুনভাবে প্রমাণ করেছেন শাহিদ। আর বিশাল ভরদ্বাজের মতো পরীক্ষানিরীক্ষার পরিচালক তাঁর অভিনয়শক্তিকে সবসময়ই অন্য মাত্রা দিয়েছেন। তাই চতুর্থবারের এই জুটি নিঃসন্দেহে বলিউডপ্রেমীদের কাছে অমূল্য উপহার হতে চলেছে।
এখন অপেক্ষা শুধু সরকারি ঘোষণার—কবে আসবে এই ছবির নাম, আর কবে মুক্তির দিন জানানো হবে। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত, শাহিদ–বিশাল জুটি আবারও আলোড়ন তুলতে প্রস্তুত।
ঐশ্বর্য-আরাধ্যার গণেশ পুজো
গণেশ চতুর্থীর রঙে রঙিন বলিউড। মহারাষ্ট্র জুড়ে চলা উৎসবের আমেজে প্রতিবারের মতো এ বছরও তারকাদের চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি ধরা দিল শহরের নানা প্যান্ডেলে। তার মধ্যেই বিশেষ নজর কেড়েছেন অভিনেত্রী ঐশ্বর্য রাই বচ্চন এবং তাঁর কন্যা আরাধ্যা বচ্চন।সম্প্রতি মুম্বইয়ের গৌড় সারস্বত ব্রাহ্মণ (জিএসবি) গণেশ উৎসব প্যান্ডেলে পাড়ি দেন মা-মেয়ে। তাঁদের উপস্থিতির ছবি ও ভিডিও ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। ভক্তদের মধ্যে তৈরি হয়েছে তুমুল উন্মাদনা।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভিড়ের মধ্যে দিয়ে আরাধ্যাকে শক্ত করে আগলে এগোচ্ছেন ঐশ্বর্য। ভক্তদের উদ্দেশে দু’জনেই হাত নাড়েন, হাসিমুখে সেলফিতেও পোজ দেন। ভক্তদের সঙ্গে এভাবে মিশে যাওয়া যেন আরও একবার প্রমাণ করল, রূপালি পর্দার তারকা হলেও বাস্তবে তিনি এক সাধারণ, মমতাময়ী মা।
ঐশ্বর্যর পরনে ছিল সাদা রঙের একটি ঐতিহ্যবাহী সালোয়ার-কামিজ, ঠোঁটে উজ্জ্বল লাল লিপস্টিক আর কপালে ছোট্ট লাল টিপ। অন্যদিকে, আরাধ্যা ঝলমল করছিলেন সর্ষে-হলুদ রঙের কুর্তা সেটে। মা-মেয়েকে একসঙ্গে ভক্তরা ক্যামেরাবন্দি করেন প্যান্ডেলের ভেতর প্রার্থনার সময়। প্রণাম ভঙ্গিতে দু’জনের ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। প্রসঙ্গত, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন প্রায় প্রতি বছরই গণেশ চতুর্থীর সময় জিএসবি প্যান্ডেলে আসেন গণপতির দর্শনে। গত বছরও তিনি এসেছিলেন আরাধ্যা ও তাঁর মা বৃন্দা রাইকে সঙ্গে নিয়ে। তবে এ বছরও স্বামী অভিষেক বচ্চন ছিলেন অনুপস্থিত। বলিউডের এই তারকা পরিবারের ভক্তদের কাছে এ যেন এক চেনা ছবি। প্রতি বছর উৎসবের ভিড়ে ঐশ্বর্য-আরাধ্যার এই উপস্থিতি মানুষের মনে উচ্ছ্বাস জাগায়। এবারের ছবিগুলোও সোশ্যাল মিডিয়ায় একইভাবে ঝড় তুলেছে।
গণেশ চতুর্থীর ভক্তি, ভিড় আর উজ্জ্বল রঙের আবহে মা-মেয়ের এই উপস্থিতি যেন আরও একবার প্রমাণ করল—গ্ল্যামারের আড়ালে আজও আছেন সেই সহজ-সরল, ভক্তিমাখা ঐশ্বর্য রাই বচ্চন।
