প্রথমবার মুখোমুখি আলোচনায় ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস এবং নতুন পরিচালক গিল্ডের অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, বিদুলা ভট্টাচার্য সহ একাধিক পরিচালকেরা। একে অপরের সঙ্গে কী কথা বললেন? অবশেষে কী সমস্যা মিটল? ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মামলা কি এখনও জারি রাখবেন ১৩ জন পরিচালকেরা? কী বললেন সকলে?
গত বছর থেকে ফেডারেশন এবং নতুন পরিচালক গিল্ডের ঝামেলা আসে প্রকাশ্যে, বন্ধ হয়ে যায় শুটিং। এরপর পরিচালক বিদুলা ভট্টাচার্য ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মামলা করে হাইকোর্টের দারস্থ হন, সেই মামলায় এগিয়ে আসেন বাকি পরিচালকেরাও। তবে পরে সেই মামলা থেকে সরে এসে পুরনো পরিচালক গিল্ডে ফেরেন অধিকাংশ পরিচালক। এর মধ্যে কাজ করতে না পারার সমস্যায় পড়েছেন একাধিক পরিচালকেরা। অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে মুখোমুখি আলোচনায় বসলেন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস ও নতুন পরিচালক গিল্ডের পরিচালকেরা। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে হাজির ছিলেন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস, অরিন্দম শীল, রাহুল মুখোপাধ্যায়, অয়ন সেনগুপ্ত সহ একাধিক পরিচালকেরা। অন্যদিকে নতুন পরিচালক গিল্ডের পক্ষ থেকে হাজির ছিলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা রায়, বিদুলা ভট্টাচার্য সহ একাধিক পরিচালকেরা। আজ দুপুর দুটো থেকে নন্দনের রবীন্দ্র সদনে এই মিটিং হয়, সরকারের তরফ থেকেও উপস্থিত ছিলেন একাধিক উকিল।
এতদিন নানান সমস্যা হলেও দু'পক্ষ একসঙ্গে বসে আলোচনা করেননি। এটাই প্রথমবার, সেক্ষেত্রে আলোচনা কতটা সদর্থক হল? পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বললেন, “এই বৈঠকের অপেক্ষায় ছিলাম অনেকদিন ধরেই। আজ খুব ভালভাবে দুপক্ষের কথা শোনা হয়েছে, আমরাও আমাদের সমস্যার কথা জানিয়েছি। এরপর আবারও বসা হবে, আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ' অনির্বাণ ভট্টাচার্যের কথায়, “এই বৈঠক অত্যন্ত গণতান্ত্রিকভাবেই হয়েছে, সবাই সবার কথা বলতে পেরেছি, যেটা অত্যন্ত আশাজনক। যে সমস্যাগুলো ছিল আশা করি তা শেষের দিকে। পরবর্তী সময়ে আমরা দুই পক্ষ আবার আলোচনায় বসব, এই মিটিং অত্যন্ত সদর্থক হয়েছে বলেই আমার মনে হয়।”
সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেছেন, “কেন আদালত অবধি যাওয়া হয়েছিল তা আজও বুঝতে পারিনি। তবে দু’পক্ষই নিজেদের সমস্যার কথা আলোচনা করেছি। আশা করি, বৈঠকের পর আমরা আশানুরূপ ফল পাব, টলিউড ইন্ডাস্ট্রির অনেকগুলো ভাগ রয়েছে। আজ সিনেমা, ধারাবাহিক এবং ওয়েব সিরিজের পরিচালকরা উপস্থিত রয়েছেন। এই বৈঠক নিয়ে আমরা যথেষ্ট আশাবাদী '। তবে কি এবার ফেডারেশনের বিরুদ্ধে এই মামলা তুলে নেবে নতুন পরিচালক গিল্ড? এই ব্যাপারে পরিচালক বিদুলা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এই বিষয়টা আলোচনা সাপেক্ষ, এখনও অনেক আলোচনা হবে, বসে কথা হবে। তবে আজকের মিটিং অত্যন্ত সদর্থক বলেই মনে হয়।”
এর আগে ১৬ জুলাই একটি বৈঠক হয়েছিল অভিযোগকারী পরিচালকদের একটি বৈঠক হয় তথ্যসচিবের সঙ্গে। সেই টেকনিশিয়ানস গিল্ডের কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ছিলেন না স্বয়ং স্বরূপ বিশ্বাসও। গত ৩০ জুলাই করতে এই মামলার একটি শুনানি। সেদিন আদালতের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয় সেই বৈঠকে ফেডারেশনের তরফে প্রতিনিধিকে উপস্থিত থাকতে হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী আয়োজিত হয় এই বৈঠক তথ্যসচিবের সমন্বয়ে।
প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি মাসের এক শুক্রবার সকালে টলিপাড়ার শুটিংয়ের পরিস্থিতি দেখতে স্টুডিওপাড়ায় উপস্থিত হয়েছিলেন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। তারপরেই পরিচালকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “ইচ্ছাকৃতভাবে করল ওঁরা এটা। পুরোপুরি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র! প্রতিটি চ্যানেল আমাদের জানিয়েছেন তাঁরা কোনও ধারাবাহিকের শুটিং বন্ধ করতে চান না। প্রযোজকদেরও একই কথা। তাহলে কেন শুটিং বন্ধ হল, এই কৈফিয়ত দিতে হবে ডিরেক্টর্স গিল্ড-কে। এর বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতম সিদ্ধান্ত নেবে ফেডারেশন। আর সহ-পরিচালকেরা দিব্যি কাজ চালাতে পারবেন। কোনও অসুবিধা নেই তাতে।” পরিচালক সংগঠনের অভিযোগ তাদের ই-মেল কিংবা বৈঠকের আহ্বানে কোনও সদুত্তর দেয়নি ফেডারেশন। ফেডারেশন সভাপতির জবাব, “সংবাদমাধ্যমকে সবকিছু জানিয়ে তারপর ই-মেল করেছিলেন ওঁরা। ওঁরাই প্রশ্ন তুলছেন, জবাব-ও ওঁরাই দিচ্ছেন। এভাবে আলোচনা হয় নাকি?”
এরপর কড়া গলায় পরিচালক সংগঠনের উদ্দেশ্যে স্বরূপ বিশ্বাসের হুঁশিয়ারি আসে, "ফেডারেশনকে তার এক্তিয়ার শেখাতে আসবেন না। আগে নিজেদের এক্তিয়ারটা বুঝুন! আর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে কীভাবে সম্মান দেখতে হয়, সে জ্ঞান দয়া করে ফেডারেশনকে তা শেখাতে আসবেন না। উল্টে আপনারাই মুখ্যমন্ত্রীকে অসম্মান করছেন এই শুটিং বন্ধ করে দিয়ে। তাই আগে নিজেরা নিয়মটা মানুন।" সামান্য থেমে তিনি আরও বলেন, “আমরা তো আলোচনা-ই চাই। কে বলল, আমরা আলোচনাতে আগ্রহী নয়? কিন্তু কাজ বন্ধ করে কীভাবে আলোচনা সম্ভব? বন্ধ করে দিলে আলোচনা হয় নাকি? তবে হ্যাঁ, এখনও বলছি যেকোনও আলোচনায় ডাকলে ফেডারেশন উপস্থিত থাকবে।”
আসলে, সেদিনের আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেবেলায় পরিচালক সংগঠনের বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন শ্রীজিৎ রায়, ডিরেক্টর্স গিল্ডের সভাপতি সুব্রত সেন, সম্পাদক সুদেষ্ণা রায়, সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচাৰ্য-সহ উপস্থিত গিল্ড-এর একাধিক পরিচালক সদস্য। দীর্ঘক্ষণ বৈঠক চলে পরিচালকদের। এরপর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ডিরেক্টরস গিল্ড এর তরফে জানানো হয় আজকের এই বৈঠকে ফেডারেশনের কর্তা ব্যক্তিদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল তবে সেই তরফ থেকে কোনও সাড়া পাননি তাঁরা। না কোনও ফোন অথবা ই-মেল। ফলে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, শুক্রবার থেকে শুটিং ফ্লোরে যাবেন না পরিচালকেরা। তবে পরিচালকের সংগঠন চান না যে শুটিং বন্ধ হোক, তাই পরিচালক ছাড়া যদি ধারাবাহিক, সিরিজ, ছবির কাজ চলতে পারে তো চলুক। কিন্তু তাঁরা ফ্লোরে যাবেন না। তাঁরা সেটে ফিরবেন তখনই, যদি তাঁদের কয়েকটি শর্ত মেনে নিয়ে লিখিতভাবে জমা দেয় ফেডারেশন।
সেই পরিস্থিতির পর স্বভাবতই এদিনের এই বৈঠকের দিকে চোখ ছিল টলিপাড়ার। ফেডারেশন এবং ডিরেক্টর্স গিল্ড- এই দুই পক্ষের এই আলোচনায় এবার সমস্যা মিটবে বলেই মনে করছেন সকলে।
