মুক্তি পেয়েছে ‘ধূমকেতু’। ১৩ বছর পর ফের দেব-শুভশ্রীর পুরনো রসায়ন চাক্ষুষ করে যে জনতামহল দারুণ খুশি, তার হাতেগরম প্রমাণ ছবির বক্স অফিস কালেকশন। দুই তারকা অভিনেতার অনুরাগীরা আনন্দে বিহ্বল। নিশ্চিত করে বলা যায় যে এক যুগ অপেক্ষার পর অবশেষে পর্দায় জাদুকাঠি ছুঁইয়ে দিয়েছে ‘ধূমকেতু’।
এহেন আনন্দের আবহে সমাজমাধ্যমে কৌশিক গাঙ্গুলির ‘ধূমকেতু’ সংক্রান্ত একটি পোস্ট পড়ে চমকে উঠেছেন অনেকে। যা পড়ে অনেকের ‘গায়ে কাঁটা দিচ্ছে’। ‘ধূমকেতু’ ছবির একটি দৃশ্যের শটের ছবির সঙ্গে এক লম্বা লেখা লিখেছেন পরিচালক। জানিয়ে রাখা ভাল, সেই পোস্ট এই ছবি নয়, সংক্রান্ত বক্স অফিস কালেকশন নয়, বরং ইঙ্গিত দিচ্ছে অন্য কিছুর... কারণ এই ছবি পোস্ট করতে গিয়ে শিউরে উঠেছেন খোদ কৌশিক গাঙ্গুলিও!

কৌশিক গাঙ্গুলি লিখেছেন – “এই ছবিটা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । মন দিয়ে দেখুন ও লেখাটা পড়ুন। এটা ধূমকেতুর একটা দৃশ্যের শট্ । যেখানে নৈনিতালের একটা ক্যাফেতে দেব ও শুভশ্রীর দেখা হয়, কিন্তু শুভশ্রী চিনতে পারেনা বৃদ্ধ দেবকে। লক্ষ্য করবেন টেবিলে বসে আছেন দুজন ব্যক্তি । তাঁদের সামনের টেবিলে দুটো খালি জলের বোতল রাখা। সেই দুটো বোতলের পিছনে টুপি মাথায় একজন ও উল্টোদিকে বসে হাল্কা দাড়িমুখে আরেকজন। নিজেদের কাজে ব্যস্ত। এঁরা দুজনেই আমাদের ইউনিট মেম্বার ছিলেন নৈনিতালে। বাইরে কোথাও শুটিং করতে গেলে হামেশাই ফ্রেমের প্রয়োজনে ইউনিটের সহকর্মীদের অনুরোধ করে বসতে বা হেঁটে যেতে বলা হয়। এটাও তেমনি। টুপি মাথায় যিনি তাঁর নাম সঞ্জয় ভট্টাচার্য, প্রোডাকশন ডিপার্টমেন্টের বন্ধু ও উল্টোদিকে বসা ভদ্রলোক বিখ্যাত মেকআপ আর্টিস্ট বিক্রম গায়কোয়াড়জী। ১০ বছর পর যখন ধূমকেতু মুক্তি পেয়েছে, তখন ঐ টেবিলে বসা দুজন মানুষই আর আমাদের মধ্যে নেই।অন্যান্য টেবিলে আরো অন্য ইউনিট মেম্বার ফ্রেম ভরাট করতে বসেছিলেন। কিন্তু কেন যে ঐ দুজনকেই বেছে ঐ একই টেবিলে বসিয়েছিলাম তার কোনো উত্তর পাচ্ছিনা! ছবির ফাইনাল প্রিভিউ করতে গিয়ে এটা ধরা পড়ে আমার চোখে।সত্যি গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। আরো অস্বস্তি হয় সামনে রাখা দুটো খালি জলের বোতল দেখে।ওটা রূপক নাকি কাকতালীয়! আমরা তো আমাদের দৃশ্য সাজিয়েছিলাম আমাদের সিনেমার জন্য! কিন্তু অলক্ষ্যে কেউ কি টেবিল সাজিয়ে নিয়েছিলো তাঁর নিজের চিত্রনাট্য অনুযায়ী! নইলে ঐ একই টেবিলে বসা দুজনেই আজ কেন নেই আমাদের মধ্যে? দুটো খালি বোতল কেন ওখানেই রাখা? যতদিন সিনেমা বানাবো, এই ফ্রেমটা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে।
কাহিনী বলতে আমরা ঠাকুরমার ঝুলি থেকে যে কাঠামো চিনে এসেছি, তার বাইরেও প্রতিটা মুহূর্তও গল্প বলতে থাকে, প্রতিটা সাধারণ পরিস্থিতিও গল্প বলতে থাকে। কেউ বুঝতে পার, কেউ টেরই পায়না।
ধূমকেতুর প্রতিটা শোতে চিরকাল তোমাদের মিস্ করবো বিক্রমজী ও সঞ্জয়। প্রণাম”
(পোস্টের বানান অপরিবর্তিত রাখা হল)

‘ধূমকেতু’ পরিচালকের পোস্ট পড়ে, ছবি দেখে বাকরুদ্ধ নেটপাড়ার একাংশ। নেটপাড়ার বাসিন্দাদের অনেকেই পরিচালকের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। কেউ লিখেছেন, “গায়ে কাঁটা দেওয়ার মত ঘটনা।” আরেকজন লিখেছেন, “...কোনও একটা অদৃশ্য জায়গা থেকে তাঁরা দু’জনেই হয়তো এই ছবির মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন...আজ তাঁরাও খুব খুশি...খুব স্পেশ্যাল মানুষ বলেই হয়ত তাঁদের এক ফ্রেমে রাখা হয়েছে...যাঁরা বাস্তবে না থাকলেও এক ফ্রেমে থেকে যাবেন চিরকাল...সব কিছু তো আমাদের হাতে থাকে না....সত্যিই এ এক অসাধারণ দৃশ্য...”
চোখ কেড়েছে আরও দু’জন নেটিজেনের মন্তব্য, “সত্যিই কত কিছুই আমাদের জানাশোনা, বোঝার বাইরে থেকে যায়। আর থেকে যায় বলেই হয়ত জীবন এতটা রহস্যময়!”, “লেখাটা পড়ে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল যা ঠিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না...”
এই এক ফ্রেমেই যেন লুকিয়ে রইল ‘ধূমকেতু’র বাইরের অন্য এক গল্প, জীবনেরই অদৃশ্য চিত্রনাট্য।
