২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘একটি নদীর নাম’ (The Name of a River) ছবিতে মুখ্যভূমিকায় দেখে গিয়েছিল পরিচালক-অভিনেতা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে। বলাই বাহুল্য, তখনও তিনি আজকের শিবপ্রসাদ হয়ে ওঠেননি। বরং বড়পর্দায় মুখ্যাভিনেতা হিসেবে ‘একটি নদীর নাম’ তাঁর প্রথম ছবি ছিল। এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেই ছবি প্রদর্শিত হবে। আগামী ৮ নভেম্বর শিশির মঞ্চে বিকেল চারটের সময় দেখানো হবে একটি নদীর নাম’।  এই ছবিতে শিবপ্রসাদকে দেখা গিয়েছিল এক ভারতীয় নাগরিকের ভূমিকায়, যিনি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করছেন,পায়ে হেঁটে।  কিন্তু এই যাত্রা শুধু ভৌগোলিক নয়, মানসিকও। তাঁর চরিত্রটি প্রতীক হয়ে ওঠে এক প্রজন্মের, যারা দেশভাগের পর হারানো শিকড়ের সন্ধান করে বেড়িয়েছে।


বৃহস্পতিবার এই ছবি প্রদর্শনীর কথা জানিয়ে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করলেন তিনি। লিখলেন, "একটি নদীর নাম"(in the name of a river) এই সিনেমাটি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আটই নভেম্বর শিশির মঞ্চে বিকেল চারটের সময় দেখানো হবে। ঋত্বিক ঘটকের শতবর্ষ উপলক্ষে এই প্রদর্শন। ১৯৯৬ সালে এই সিনেমার কাজ শুরু হয় ৯৮ সালে শুটিংয়ের কাজ শেষ হয়। অভিনেতা হিসেবে আমার প্রথম মুখ্য চরিত্রে অভিনয়। এই সিনেমাটি কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের জীবন ও কাজ নিয়ে প্রথম এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি চলচ্চিত্র। সিনেমার প্রযোজনা করেছিলেন এন এফ ডি সি, ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের আশীর্বাদ চলচ্চিত্র( শ্রী হাবিবুর রহমান) যিনি "তিতাস একটি নদীর নামের"ও প্রযোজক আর ভারতের মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স। চিত্র গ্রাহক ছিলেন কে কে মহাজন। মহাজন সাহেবের সাথে আমার এটি ছিল তৃতীয় কাজ।   সিনেমার পরিচালক শ্রী অনুপ সিং। পরিচালক নিজে ওইদিন থাকবেন। ধন্যবাদ অনুপ সিংকে, আমাকে ওই সময় ওই বয়সে এমন একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য। আর ধন্যবাদ কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের কমিটিকে যারা এই সিনেমাটিকে নির্বাচন করেছেন।"

(পোস্টের বানান অপরিবর্তিত রাখা হল)। 

 

 

একটি নদীর নাম ছবিটি কিংবদন্তি পরিচালক ঋত্বিক ঘটক-এর জীবন ও কাজকে শ্রদ্ধা জানিয়েই তৈরি। ঋত্বিকের ছবির মতোই এই ছবিতেও ফুটে উঠেছে নদীর প্রতীক, সীমান্তের যন্ত্রণা, এবং স্মৃতির গহিন সুর। শিবপ্রসাদের চরিত্রটি রয়েছে এই ভাবনার কেন্দ্রে। এমন এক মানুষ, যিনি নতুন সীমান্তের বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হতে নিজের অতীত, ইতিহাস আর অস্তিত্বকে নতুন করে খুঁজে পান।

একটি নদীর নাম-এ শিবপ্রসাদ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শামী কায়সার ও সুপ্রিয়া চৌধুরী। তাঁদের সঙ্গে শিবপ্রসাদের অভিনয় তৈরি করে এক গভীর, কাব্যিক পরিবেশ যেখানে নদী যেন কেবল জলের স্রোত নয়, এক সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের প্রতীক।

এই ছবিতে শিবপ্রসাদকে দেখা যায় একদম অন্য আঙ্গিকে।  তাঁর অভিনয়ের মধ্যেই যেন অব্যক্তভাবে মিশে আছে হারিয়ে যাওয়া দেশ, স্মৃতি, ভালবাসা ও বেদনার ছায়া।