২০০৫ সালে রানি মুখোপাধ্যায় আর অভিষেক বচ্চন-অভিনীত ‘বান্টি অউর বাবলি’ মুক্তির পর গোটা দেশ ঝড় তুলেছিল সে ছবির গান ‘কাজরা রে’! অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বর্যা রাই ও অভিষেক বচ্চনকে নিয়ে তৈরি এই আইকনিক ট্র্যাক তৎকালীন চার্ট বাস্টারে একদম উঁচুতে ছিল। বিয়ে-বাড়ি থেকে পার্টি- সর্বত্র শোনা যেত সেই গানের সুর। আর গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন পপ সেনসেশন আলিশা চিনয়, যিনি এই গানের জন্য জিতেছিলেন সেরা গায়িকা হিসেবে নামীদামি ফিল্মি পুরস্কার। আজও ‘কাজরা রে’ বাজে, মানুষ নাচে তার তালে। তবে জানেন কি এই গান নিয়ে শঙ্কর মহাদেবনকে বড়সড় ‘সতর্কবার্তা’ দিয়েছিলেন অমিতাভ? কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার 'হুমকি' পর্যন্ত দিয়েছিলেন! সেই গল্পই এবার নিজের মুখে শোনালেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী গায়ক-সুরকার শঙ্কর মহাদেবন।
শঙ্কর মহাদেবনের কথায়, “বচ্চন স্যার তখন ‘কভি আলবিদা না কহেনা’ ছবির ‘রক অ্যান্ড রোল’ গানের শুটিং করছিলেন। আমরা গিয়ে গানটা শোনালাম। উনি এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে আমায় জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘কী ভাল গান-ই না তৈরি করেছিস!’ সেই মুহূর্তটা আমি কখনও ভুলব না।”
তবে ঘটনাটা এখানেই শেষ নয়। শঙ্কর হাসতে হাসতে বলেন, “আমি তখন একটা ওই গানের রাফ ডাব করেছিলাম, যাতে অভিষেকের অংশে জাভেদ আলি গেয়েছিলেন, আর অমিতাভজির অংশটা ফাঁকা রেখেছিলাম। পরে এক অনুষ্ঠানে ওঁকে অনুরোধ করলাম, ‘স্যার, দয়া করে এসে আপনার অংশটা ডাব করে দিন এই গানের, তাহলে মিক্সটা সম্পূর্ণ করতে হবে।’ উনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোন গান?’ আমি বললাম, “কাজরা রে।”
এরপরেই এল সেই ‘হুমকি’!“বচ্চন স্যার হেসে বললেন, ‘না, এই গানটা যেমন আছে, তেমনই থাকবে। তুই যদি হাত লাগাস, তোর কেরিয়ার নষ্ট করে দেব!’” হাসতে হাসতে শঙ্কর বলেন, “তিনি আসলে বলতে চেয়েছিলেন, গানটা এতটাই সুন্দর মনে হয়েছিল তাঁর যে, আর কোনও পরিবর্তন তিনি মেনে নিতে চাননি। ওটাই ছিল তাঁর স্নেহভরা আশীর্বাদ।”
শুধু কাজরা রে নয়, বচ্চন স্যার ঝুম বারাবার ঝুম-এর ক্ষেত্রেও একই রকম ভালবাসা দেখিয়েছিলেন বলে জানান শঙ্কর। তাঁর কথায়, “বিগ বি–র সেই কথাগুলো আমার কাছে এখনও আশীর্বাদের মতো। ওঁদের মতো শিল্পীরা না থাকলে বলিউডের সুরে এত জাদু থাকত না।”
প্রসঙ্গত, এই গানের নেপথ্যে রয়েছে আরও একটি গল্প। রীতিমতোএই মন্তব্য তুমুল বিতর্ক ছড়িয়েছিল সে সময়। নিজেই স্বীকার করেছেন,“তখন আমি বেশ সোজাসাপটা ছিলাম, জল মেপে-বুঝে ঠিক কথা বলিনি। মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম যে, টাকা দেয়নি। সেটাই বড় বিতর্ক হয়ে গেল।” তবে আজও কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় আলিশা। গায়িকার কথায়, “ওটা ঠিক আচরণ ছিল না। এখন তো আরও খারাপ অবস্থা, অনেক গায়ক নিজেদের মান নামিয়ে ফেলছে। ইন্ডাস্ট্রি ভাবে ওরা আমাদের সুযোগ দিচ্ছে, অথচ গায়কেরাই আসল প্রাণ।” চমকে দেওয়া গল্প। গায়িকার দাবি, এই গানগাওয়ার জন্য তাঁকে পারিশ্রমিক হিসেবে পাঠানো হয়েছিল মাত্র ১৫ হাজার টাকা! সম্প্রতি,এক সাক্ষাৎকারে আলিশা বললেন,“ ‘কাজরা রে’-এর পর আমি সত্যিই রেগে গিয়েছিলাম। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম,গায়িকাদের কোনও মূল্যই নেই নাকি? তখন আমি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’-র মতো হিট গানের গায়িকা। তবু শঙ্কর-এহসান-লয়-এর অনুরোধে গানটা গেয়েছিলাম, কারণ ওরা বলেছিল যশ রাজ ফিল্মসের প্রজেক্ট। কিন্তু পারিশ্রমিকের টাকার চেকটা যখন হাতে এল, তখন দেখি টাকার অঙ্কটা মাত্র ১৫,০০০ টাকার! আমি ওঁদের বললাম, ‘হ্যালো!’ এত বড় প্রযোজনা সংস্থা, আর পারিশ্রমিক মাত্র ১৫ হাজার টাকা! আমি সেটা নিইনি। ওরা কয়েকবার পাঠিয়েছিল, আমি ফেরত পাঠিয়েছি।’”
২০১০ সালে আরেক সাক্ষাৎকারে আলিশা আরও এক বিস্ময়কর তথ্য ফাঁস করেছিলেন। তিনি জানান, বিদেশে নিজের গানের অনুষ্ঠানে যখন “কাজরা রে” গাওয়ার পরিকল্পনা আঁটেন, তখন অনুষ্ঠানের আয়োজকদের তরফে জানতে পারেন যশ রাজ ফিল্মস নাকি ওই গানের ওপর স্বত্ব দাবি করছে! “আয়োজকরা আমাকে বলেছিল, আমি যদি ‘কাজরা রে’ গাই, তাহলে ওদের প্রযোজনা সংস্থাকে অনেক টাকা দিতে হবে। শুনে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম!”দাবি, আলিশার।
