বলিউডের রোম্যান্স মানেই যদি কোনও একটি নাম চিরকাল জ্বলজ্বল করে, তা নিঃসন্দেহে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি আজ ৩০ বছর পূর্ণ করল। সময় বদলেছে, প্রজন্ম বদলেছে, কিন্তু রাজ আর সিমরানের প্রেম আজও অমলিন। আর সেই ঐতিহাসিক মাইলফলক উদযাপন করতেই এবার এক নজিরবিহীন সম্মান পেল ‘ডিডিএলজে’। লন্ডনের বুকে গড়ে উঠল এই ছবির স্মৃতিস্তম্ভ। বসল শাহরুখ-কাজলের ব্রোঞ্জের মূর্তি! শাহরুখ খান ও কাজল হাজির ছিলেন লন্ডনের লেস্টার স্কোয়ারে, যেখানে তাঁদের কালজয়ী ভঙ্গিমায় তৈরি একটি ব্রোঞ্জ মূর্তি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। এই প্রথম কোনও ভারতীয় ছবির জন্য ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে স্থাপন হল স্থায়ী ভাস্কর্য। এই মূর্তিতে ধরা রয়েছে ‘ডিডিএলজে’-এর সেই চিরপরিচিত রোম্যান্টিক মুহূর্ত, যা দেখে আজও অগুনতি দর্শকের চোখ ভিজে ওঠে। মূর্তি উন্মোচনের সময় শাহরুখ কালো স্যুটে ছিলেন চিরচেনা স্টাইলিশ, আর নীল শাড়িতে রাজকীয় সৌন্দর্যে ভাসছিলেন কাজল। দু’জনে একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যেন ৩০ বছর আগের স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন।
এক কথায়, লন্ডনের বুকে বলিউডের ইতিহাস। রাজ আর সিমরানের ব্রোঞ্জ মূর্তি। ৩০ বছরে পা দেওয়া ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ (ডিডিএলজে)-কে ঘিরে আবেগ, নস্টালজিয়া আর গর্ব, সব একসঙ্গে ধরা দিল লেস্টার স্কোয়ারে।

“বড়ে বড়ে দেশোঁ মে, অ্যায়সি ছোটে ছোটে বাতে তো হোতি রহতি হ্যায়, সেনোরিটা!” এই অমর সংলাপেই যেন নতুন করে প্রাণ পেল শাহরুখ খান-কাজল অভিনীত রাজ-সিমরন। বৃহস্পতিবার লন্ডনের বিখ্যাত লেস্টার স্কোয়ারে ‘সিনস ইন দ্য স্ক্যোয়ার’ ট্রেইলের অংশ হিসেবে উন্মোচন হল তাঁদের ব্রোঞ্জের মূর্তি। আর সেখানেই ইতিহাস-প্রথম ভারতীয় ছবি হিসেবে ভাস্কর্যে সম্মান পেল ডিডিএলজে।
এই বিশেষ মুহূর্ত উদযাপন করতে গিয়ে উচ্ছ্বাস লুকোননি নির্মাতারা। এক আবেগী বার্তায় জানানো হয়, ‘ডিডিএলজে’-এর ৩০ বছরের যাত্রা শুধু একটি ছবির সাফল্যের গল্প নয়, এ এক প্রজন্মের স্মৃতি, প্রেম আর স্বপ্নের সহযাত্রী। যুক্তরাজ্যের দর্শকদের ভূমিকার কথাও আলাদা করে স্বীকার করা হয়েছে তাঁদের ভালবাসাতেই এই সম্মান সম্ভব হয়েছে বলে জানানো হয়।
মূর্তি উন্মোচনের মুহূর্তের ছবি পোস্ট করে এক্স-এ একটি পোস্ট করেছেন শাহরুখ নিজেও। বাদশা লিখলেন, “লন্ডনের লেইস্টার স্ক্যোয়ারে রাজ-সিমরনের ব্রোঞ্জের মূর্তি উদ্বোধন করতে পেরে যারপরনাই উত্তেজিত। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির ৩০ বছরের পূর্তি এভাবেই উদ্যাপন করা হল...ইউনাইটেড কিংডমের প্রত্যেককে ধন্যবাদ যাঁরা এই ব্যাপারটি সম্ভব করলেন।
রাজ এবং সিমরনের সঙ্গে একবার দেখা করে যাবেন যদি লন্ডনে থাকেন...”

১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি শুধু বক্স অফিস সাফল্যই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও ভারতীয় চলচ্চিত্রের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিল। ইউরোপের রাস্তায় প্রেমকাহিনি, ভারতীয় সংস্কৃতি আর আধুনিকতার মেলবন্ধন, এক কথায় ডিডিএলজে বলিউডকে নিয়ে গিয়েছিল বিশ্বদরবারে। আজ ৩০ বছর পর সেই যাত্রার স্মারক হিসেবে লন্ডনের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে রাজ-সিমরন।
উদ্যোক্তাদের তরফে এক বার্তায় ভক্তদের আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে, যখনই লন্ডনে আসবেন, এসে দেখা করুন রাজ আর সিমরনের সঙ্গে। নতুন স্মৃতি তৈরি করুন পুরনো প্রেমের ছবির পাশে। লেস্টার স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে হয়তো আবার মনে পড়বে, কেন ডিডিএলজে শুধু একটি রোমান্টিক ছবি নয়, বরং সময় পেরিয়েও বেঁচে থাকা এক অনুভূতি।
বলিউডের ইতিহাসে এ শুধু সম্মান নয়, এক প্রতীক। ভারতীয় সিনেমা যে বিশ্বসংস্কৃতির অংশ-রাজ আর সিমরনের এই ব্রোঞ্জ মূর্তি যেন সেই ঘোষণাই করছে, নিঃশব্দে কিন্তু দৃঢ়ভাবে।
