আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ভারত (আইএফএএফআই)-এ অভিনেতা রণবীর সিং-এর একটি সাম্প্রতিক পরিবেশনা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় তিনি প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। উৎসবে তিনি জনপ্রিয় কন্নড় ছবি 'কান্তারা: চ্যাপ্টার ১'-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের অনুকরণ বা মিমিক্রি করেন। এই সময় মূল ছবির অভিনেতা-পরিচালক ঋষভ শেট্টি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। রণবীরের এই পরিবেশনার পর সমাজমাধ্যমে এবং চলচ্চিত্র মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
গোয়ায় অনুষ্ঠিত এই চলচ্চিত্র উৎসবে ঘটা এই ঘটনাটি বিনোদন জগতে সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা এবং কোনও শিল্পকর্মের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর সীমানা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সমালোচকদের প্রধান উদ্বেগ ছিল, 'কান্তারা' ছবিটি দক্ষিণ ভারতের, বিশেষত কর্ণাটকের স্থানীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, দৈবত্ব বা 'ভূত কোলা' প্রথাকে তুলে ধরে। বহু মানুষের কাছে এই প্রথা গভীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার বিষয়। ফলে, উৎসবের মঞ্চে এই ধরনের একটি সংবেদনশীল দৃশ্যের হালকাভাবে অনুকরণ করাকে অনেকেই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উপহাস বা অমর্যাদা করার সমতুল্য বলে মনে করেন।
এই বিতর্ক তীব্র আকার ধারণ করলে, রণবীর সিং দ্রুত তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরির মাধ্যমে একটি জনসমক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা জারি করেন। তিনি জানান, তাঁর কাজ কাউকে আঘাত করা বা কোনও সংস্কৃতিকে অমর্যাদা করার উদ্দেশ্যে ছিল না। বরং, তাঁর পরিবেশনা ছিল ঋষভ শেট্টি এবং ছবিটি প্রতি তাঁর গভীর মুগ্ধতা ও প্রশংসার বহিঃপ্রকাশ।
নিজের বিবৃতিতে রণবীর সিং তাঁর আচরণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন যে, তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল ঋষভ শেট্টির অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সটিকে তুলে ধরা। তিনি লেখেন, 'আমার উদ্দেশ্য ছিল ঋষভ শেট্টির অবিশ্বাস্য অভিনয়কে তুলে ধরা। একজন অভিনেতা হিসেবে আমি জানি যে ওই বিশেষ দৃশ্যটি তিনি যে ভঙ্গিতে পরিবেশন করেছেন, তার জন্য তাঁকে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে। অভিনেতা হিসেবে তাঁর প্রতি আমার গভীরতম শ্রদ্ধা রয়েছে। আমি সর্বদা আমাদের দেশের প্রতিটি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং বিশ্বাসকে গভীরভাবে সম্মান করে এসেছি। যদি আমার কোনো কাজে কারও ভাবাবেগে আঘাত লেগে থাকে, তাহলে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।"
রণবীর সিং আরও জোর দিয়ে বলেন যে, তিনি 'কান্তারা: চ্যাপ্টার ১'-এর থিম এবং শৈল্পিকতার প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল।
এই ঘটনাটি আবারও চলচ্চিত্র জগতে জনসাধারণের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিত্বদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলিকে যখন জনসমক্ষে তুলে ধরা হয়, তখন সংবেদনশীলতা বজায় রাখা কতটা জরুরি, সেই বিষয়ে এই বিতর্কটি চলচ্চিত্রপ্রেমী এবং সাধারণ দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। সমালোচকরা মনে করেন, একজন শিল্পীর অনুকরণ ও উপহাসের মধ্যেকার সূক্ষ্ম পার্থক্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। বিনোদন এবং সাংস্কৃতিক শ্রদ্ধার মধ্যে এই পার্থক্য বজায় রাখার গুরুত্ব এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আরও একবার প্রমাণিত হল।
