‘পঞ্চায়েত’ খ্যাত অভিনেতা আসিফ খান মাত্র ৩৪ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আপাতত তিনি স্থিতিশীল, এবং ইনস্টাগ্রামে নিজেই জানালেন তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা—জীবন কতটা অনিশ্চিত আর কৃতজ্ঞতা কেমন জীবনের কেন্দ্রে থাকা উচিত।

 

ইনস্টাগ্রামে তিনি লেখেন,“ গত ৩৬ ঘণ্টায় আমার চোখ খুলে গেছে। জীবন খুব ছোট, প্রতিটি দিনকে গুরুত্ব দিতে শিখুন। এক মুহূর্তেই সব বদলে যেতে পারে। আপনার চারপাশে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের গুরুত্ব বুঝুন, তাঁদের ভালবাসুন।” তিনি আরও লেখেন—“গত কয়েক ঘণ্টা ধরে আমি এমন কিছু শারীরিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে গেছি যার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। তবে এখন আমি অনেকটাই সুস্থ এবং সুস্থতার পথে। আপনাদের ভালবাসা আর প্রার্থনার জন্য কৃতজ্ঞ। খুব শীঘ্রই ফিরছি।” অভিনেতার এই পোস্ট দেখার পর থেকেই নেটিজেনদের ভালবাসা, প্রার্থনা আর শুভেচ্ছায় ভরে গেছে তাঁর কমেন্ট বক্স।

 

এবার আসিফ সম্পর্কে আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে কথা বললেন পঞ্চায়েত সিরিজের তাঁর সহ-অভিনেতা অশোক পাঠক। সিরিজে যিনি 'বিনোদ' নামে দর্শকের কাছে পরিচিত এবং জনপ্রিয়। অভিনেতার কথায়, “আমি আসিফের বিষয়ে  প্রথম জানতাম না। গতকাল রাতে খবর পেয়েছি। শোনামাত্রই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছিলাম। আপনাকে জানিয়ে রাখি, আসিফ একজন একদম ঠিক আছে। আগের থেকে অনেক ভাল। ভয়ের বা চিন্তার কোনও কারণ নেই।  একটু আগেই কথা হয়েছে ওর সঙ্গে। আস্তে আস্তে হলেও দিব্যি কথাবার্তা বলল ফোনে। আজ বিকেলেই আসিফকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছি।”

 

সামান্য থেমে অশোক আরও বললেন, “মানুষ হিসেবে খুব ভাল আসিফ । মজা করতে ভালবাসে। খোলা মনে আড্ডা দিতে পারে। বহু সময় একসঙ্গে কাটিয়েছি আমরা। আবারও ওর সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি আমি।”

 

অন্যদিকে, পঞ্চায়েত-এ বিনোদ যাঁর ছায়াসঙ্গী সেই ‘বনরাকস’ অর্থাৎ অভিনেতা দুর্গেশ কুমার-ও আসিফকে নিয়ে খুব চিন্তিত। শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তার ফাঁকে ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে তাঁর গলা বেশ উদ্বিগ্নই শোনাল। আজকাল ডট ইন-কে দুর্গেশ কুমার বললেন, " খারাপ লাগছে না, খানিক চিন্তাও হচ্ছে। আমি খোঁজখবর নিয়েছি। এখন আসিফ ভাল আছে শুনে একটু নিশ্চিন্ত। এই বয়সে কী যে হল...কী বলব বলুন তো! ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক আসিফ। এখনও আড্ডা মারা বাকি আছে অনেক। একসঙ্গে কাজও করতে হবে। দেখি, সময় পেলেই হাসপাতালে ছুটব আসিফকে দেখতে। নইলে পরে ওর বাড়িতে যাব।" 

 

প্রসঙ্গত, এইমুহূর্তে ‘পঞ্চায়েত’-এর বিনোদ চরিত্রে অশোক পাঠককে কে না চেনেন! সেই সহজ, সাদামাটা মুখ, তীক্ষ্ণ সংলাপ আর অদ্ভুত সারল্যে ভরা অভিনয় আজ দর্শকের হৃদয়ে অমর হয়ে আছে। তবে এই খ্যাতির পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ লড়াই—আর সেই লড়াইয়েরই এক বেদনার্ত অভিজ্ঞতা এবার সামনে আনলেন অশোক নিজে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অশোক পাঠক জানান, তিনি একবার একটি বড় বাজেটের হিন্দি ছবির জন্য অডিশন দিচ্ছিলেন। তখনই তাঁকে বলা হয়, “একটা ফেসিয়াল করিয়ে মুখটা একটু উজ্জ্বল করে এনো, তাহলেই তোমাকে নেওয়া হবে।”তিনি আরও বলেন—“আমি তো ভাবলাম, অভিনয় না ফর্সা মুখ—কোনটা বেশি দরকার?”

তবে ‘পঞ্চায়েত’-এ অভিনয় করতে চাননি অশোক! বন্ধুর জোরাজুরিতে খেলেন বিনোদের চরিত্র। শুরুতে ‘পঞ্চায়েত’-এ বিনোদের চরিত্র করতে একেবারেই রাজি ছিলেন না অশোক। তাঁর মনে হয়েছিল চরিত্রটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু এক বন্ধু জোর করে বলেন—“এই চরিত্র কর, দেখবি মানুষ মনে রাখবে।”

আর সেই ভবিষ্যদ্বাণী একশো ভাগ সত্যি! আজ তাঁর মুখের ছোট, ছোট সংলাপও এতটাই জনপ্রিয় যে দর্শক তা মুখস্থ বলে দিতে পারে। বিনোদের চরিত্র তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।