আজকাল ওয়েব ডেস্ক: হল ভর্তি দর্শক, সিলভার স্ক্রিনে হুড়োহুড়ি, পপকর্নের গন্ধ—একটা সময়ে এগুলোই ছিল প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখার মন্ত্রমুগ্ধ করা অভিজ্ঞতা। কিন্তু আজ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এক নিঃশব্দ সংকট। একের পর এক মাল্টিপ্লেক্স ফাঁকা পড়ছে, দর্শক হারাচ্ছে হল। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের রমরমা, টিকিটের দাম, মৌলিক গল্পের অভাব—সব মিলিয়ে আজ প্রেক্ষাগৃহ যেন পরিণত হয়েছে এক বিস্মৃত চর্চায়।
তবে এই অবস্থায় যেখানে সিনেমার প্রতি নিবেদিতপ্রাণরা ‘থিয়েটার-কালচার’-এর জন্য লড়ছেন, সেখানে একজন অস্কারজয়ী কিংবদন্তি পরিচালক মার্টিন স্করসেসি একেবারে ভিন্ন পথ ধরেছেন—একটি নিঃশব্দ প্রতিবাদ। যিনি ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’, ‘গুডফেলাস’, ‘দ্য আইরিশম্যান’-এর মতো মাস্টারপিস উপহার দিয়েছেন, তিনিই এখন আর হলমুখো হন না। না, তিনি সিনেমার প্রতি ভালবাসা হারাননি—বরং হারিয়ে যাওয়া সিনেমা অভিজ্ঞতাটার জন্যই এই দূরত্ব।
সম্প্রতি প্রখ্যাত ফিল্ম ক্রিটিক পিটার ট্র্যাভার্স-এর সঙ্গে এক আলাপচারিতায় স্করসেসি জানান, কেন তিনি এখন আর প্রেক্ষাগৃহে যান না। পরে এই প্রসঙ্গে ট্র্যাভার্স বলেন, “আমি ওঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম—‘তুমি এখন আর প্রেক্ষাগৃহে যাও না কেন?’ শোনামাত্রই উনি একেবারে ‘রেজিং বুল’ মুডে চলে গেল। ফোনে কথা, টিকিট কেটে বেরিয়ে স্ন্যাক্স আনতে যাওয়া, সোডার বড় গ্লাস নিয়ে ঢোকা, আর এসবের মধ্যে অভিনেতাদের সংলাপই শোনা যায় না—এই নিয়েই ভীষণ বিরক্ত উনি।”
স্করসেসির চোখ একটু থমথমে হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমরাও হয়তো একসময় প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে দেখতে কথা বলতাম। কিন্তু সেই কথা ছবি নিয়েই হতো—গল্প, দৃশ্য, সেই আনন্দ নিয়ে আলোচনা। এখন তো কেউ সিনেমার প্রতি মন- নেই!”
এই কোলাহলের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে স্করসেসি গড়ে তুলেছেন নিজের এক ব্যক্তিগত সিনেমা আশ্রম—একটি সিনেমার ঘর! বাড়ির ভেতরেই বানিয়েছেন অত্যাধুনিক স্ক্রিনিং রুম, দেওয়াল সাজিয়েছেন ক্লাসিক সিনেমা পোস্টার আর স্মারক সংগ্রহে। সেখানেই এখন তিনি পুরনো সিনেমা দেখেন, নতুন ছবির আবিষ্কারে মগ্ন থাকেন, একেবারে নিজের ছন্দে।
তাঁর এই সরে যাওয়া আসলে এক রকম ভালবাসারই প্রতিফলন। এই ‘সিনেমার সাধু’ সিনেমাকে ছাড়েননি—সিনেমার সেই হারিয়ে যাওয়া পরিবেশ, শ্রদ্ধা আর একাগ্রতার অভাবকেই যেন বিদ্রোহ জানিয়েছেন নিঃশব্দে।
সিনেমা কি তবে একান্তের অভিজ্ঞতায় পরিণত হচ্ছে? নাকি আমাদেরই ফিরিয়ে আনতে হবে সেই হারানো হল-কালচার?
