১ আগস্ট পথকুকুরদের নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালত যে রায় দিয়েছিল, দেশজুড়ে প্রবল আলোচনা-সমালোচনা হয় তার। দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ, পশুপ্রেমীরা। ২২ আগস্ট শীর্ষ আদালত ১১ তারিখের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়। সঙ্গে দেওয়া হয় বেশকিছু নির্দেশ। দেশজুড়ে যখন পথকুকুর, স্থানান্তর এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক দিনের পর দিন আরও তপ্ত হচ্ছে, তখন বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক মোহিত চৌহান বেছে নিয়েছেন একেবারে অন্য পথ। যুক্তির ময়দানে কণ্ঠ না তুলে তিনি বেছে নিয়েছেন সুরের ভুবন। তাঁর নতুন গান ‘মেরি আওয়াজ’ যেন সেই সব অবলা প্রাণীর হয়ে কথা বলার চেষ্টা যাদের নিয়ে কথা হয়, যাদের সরিয়ে দেওয়া হয়, কখনও অপরাধীর তকমাও জোটে… কিন্তু কচ্চিত যাদের কথা শোনা হয়।

 

শিল্পী জানিয়েছেন, এই গান কোনও পরিকল্পিত প্রজেক্ট নয়,  প্রচারের নয়া কৌশলের অভিসন্ধিও এতে নেই। বরং এই গান জন্ম নিয়েছে তাঁর গভীর অস্বস্তিবোধ থেকে। প্রকৃতি আর প্রাণীদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতায় তাঁর মনে জমে থাকা যন্ত্রণাই নাকি রূপ নিয়েছে গানে। মোহিতের কথায়, "সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা  ধীরে ধীরে প্রাণীদের ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে দেখা ভুলে যাচ্ছি, দেখছি ‘সমস্যা’ হিসেবে। সেই বোধ থেকেই জন্ম দুঃখ, সহমর্মিতা আর দায়িত্ববোধের মিশেলের এই গানের।

 

বিশেষ করে পথকুকুরদের ‘রিলোকেশন’ বা স্থানান্তর নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কই জোর ধাক্কা দিয়েছিল তাঁকে। মোহিতের মনে হয়েছে, এই আলোচনার ভাষা ক্রমশ করুণাহীন হয়ে উঠছে, যেখানে প্রাণীদের অস্তিত্বই যেন মুছে যাচ্ছে। “এই বিষয়টা সামনে আসতেই জমে থাকা আবেগ গানের পথ খুঁজে নেয়। মনে হল, হয়তো আমি-ই ওদের কণ্ঠ হতে পারি,” বললেন রকস্টার ছবিখ্যাত গায়ক।

 

 

মোহিতের উদ্বেগ কেবল নীতিনির্ধারণ নয়, বরং মানুষের সংবেদনশীলতার ঘাটতি। তাঁর আক্ষেপ, মানবিকতার বদলে ‘সমস্যা মেটানোর’ কঠোর ভাষায় ঢেকে যাচ্ছে জীবনের মূল্য। সেই কারণেই তিনি গানকে করেছেন প্রতিবাদের ভাষা।

 

 

 

প্রার্থনা গেহলটের লেখা এই গান অভিযোগ তোলে না, বরং সামনে দাঁড় করায় একটা আয়নার মতো। মোহিতের বিশ্বাস, ভারতের সংস্কৃতিতে সহমর্মিতা, করুণা, সহঅস্তিত্বের যে মূল্যবোধ ছিল, এই গান সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। নীতিনির্ধারণ কতটা বদলাবে, বলতে পারেন না তিনি। তবে যদি কয়েকজন মানুষও একটু থামেন, ভাবেন, আর একটু বেশি দয়ালু হন, তবেই তিনি বুঝবেন গান তার কাজ করেছে।

 

মোহিত চৌহান বরাবরই কোমল, আবেগঘন কণ্ঠের জন্য প্রিয়। ‘তুম সে হি’, ‘মাসাক্কালি’, ‘কুন ফায়া কুন’-এর মতো গান তাঁর সিগনেচার। সরলতা, সততা আর শান্ত সুরের জন্যই তাঁর গান এতদিন পরও মানুষের মনে থেকে যায়। এবার সেই সুরেই তিনি প্রশ্ন তুললেন,  আমরা শুধু নিজেদের কথা ভাবব না কি সহানুভূতির হাতও বাড়াবো?