প্রায় আট বছর ধরে চলা এক আইনি লড়াইয়ের অবশেষে পরিসমাপ্তি ঘটল সোমবার। ২০১৭ সালের বহুচর্চিত অভিনেত্রী নির্যাতন মামলায় মালয়ালম অভিনেতা দিলীপকে বেকসুর খালাসের রায় দিল কেরালার এরনাকুলাম জেলা ও দায়রা আদালত। তবে একই সঙ্গে মামলার প্রথম থেকে ষষ্ঠ অভিযুক্তকে ধর্ষণ, অপহরণ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক গুরুতর ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

 

 

সোমবার সকাল ১১টায় বিচারপতি হানি এম ভার্ঘিস এই রায় ঘোষণা করেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দিলীপের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহের ঊর্ধ্বে প্রমাণ করা যায়নি। ফলে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। কিন্তু মামলার মূল অভিযুক্তরা পালসার সুনিসহ ছ’জন  ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় দোষী প্রমাণিত হন। এর মধ্যে রয়েছে গণধর্ষণ, বেআইনি আটক, শালীনতা ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ, অপহরণ এবং পোশাক ছিঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা।

 

২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, কেরালার কোচিতে এক শীর্ষস্থানীয় মালয়ালম অভিনেত্রীর গাড়ির মধ্যেই প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার তদন্ত ঘিরে শুরু হয় রাজনৈতিক, আইনি ও চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম বিতর্কিত অধ্যায়।

 

মামলায় মোট ১০ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিচার চলে। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম চার্জশিট জমা পড়ে। দীলীপকে সেই বছরের জুলাইয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তদন্তকারীদের দাবি ছিল, জেল থেকে পালসার সুনি তাঁকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। পরে অক্টোবরে তিনি জামিন পান।

 

পরবর্তী বছরগুলোতে মামলায় একাধিক মোড় আসে। সিবিআই তদন্তের দাবি খারিজ হয়। নতুন করে তদন্তের নির্দেশ, মেমোরি কার্ড ঘিরে বিতর্ক, তদন্তকারী অফিসারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ, সব মিলিয়ে এই মামলা কেবল আদালতের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি।

 

বিচার প্রক্রিয়ায় ২৬১ জন সাক্ষীকে জেরা করা হয়, গৃহীত হয় ৮৩৪টি নথি। তদন্তকারী অফিসারকে একাই জেরা করা হয়েছে ১০৯ দিন ধরে। সেই দীর্ঘ প্রক্রিয়াতেই আজ আদালতের চূড়ান্ত রায়। এই রায় একদিকে দিলীপের জন্য স্বস্তির, অন্যদিকে কেরালার অন্যতম মর্মান্তিক অপরাধ মামলায় দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তার বহিঃপ্রকাশ। তবে একইসঙ্গে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, এত দীর্ঘ সময়ে ন্যায়বিচারের পথ কতটা কঠিন, আর কতটা জটিল।