দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই ভারতকে অনেকেই ‘ডায়াবেটিসের রাজধানী’ বলে থাকেন। আপনি যদি ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন, তবে মনে প্রায়ই প্রশ্ন জাগে— গুড় বা মধু কি খাওয়া যায়? অনেকে বলেন, এগুলো প্রাকৃতিক, তাই চিনির থেকে বেশি নিরাপদ। কিন্তু বাস্তবতা হল— গুড় এবং মধু দুটোই মূলত শর্করা, শুধু রূপ এবং স্বাদে আলাদা। দুটোতেই গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এগুলো সাধারণত নিরাপদ নয়।

এখন প্রশ্ন— ডায়াবেটিসে গুড় ও মধু কি সত্যিই ক্ষতিকর? এ নিয়ে আয়ুর্বেদ কী বলে জেনে নেওয়া যাক—

গুড় ও মধু খেলে রক্তে শর্করার কী প্রভাব পড়ে?

ডায়াবেটিসে শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, বা ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করে না। ফলে গুড় বা মধু খেলে এর গ্লুকোজ খুব দ্রুত রক্তে মিশে যায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে দেখা দিতে পারে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে হার্ট, কিডনি ও স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই চিকিৎসকরা সাধারণত বলেন, প্রাকৃতিক হোক বা কৃত্রিম,  যে কোনও ধরনের মিষ্টি ডায়াবেটিস রোগীদের এড়ানো উচিত।

গুড় ও মধু নিয়ে আয়ুর্বেদের মত

আয়ুর্বেদও বলে, মিষ্টি খাওয়া উচিত সীমিত পরিমাণে। মধুকে ‘যোগবাহি’ বলা হয়— এটি ওষুধের কার্যকারিতা বাড়ায়, তবে তখনই যখন শরীরের হজম ক্ষমতা ভাল থাকে।

গুড়কে শক্তিবর্ধক মনে করা হয়, কিন্তু এটি কফ বৃদ্ধি করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনুকূল নয়। তাই আয়ুর্বেদও ডায়াবেটিসে মিষ্টি খাবার সীমিত বা বর্জন করার পরামর্শ দেয়।

ডায়াবেটিস রোগীরা কী করবেন?

খাবারের পর হালকা হাঁটাহাঁটি করুন, যাতে রক্তে শর্করা হঠাৎ না বাড়ে।
মধু কখনও গরম জল, চা বা দুধে মেশাবেন না— এতে মধুর গুণ নষ্ট হয়।
চাইলে ডায়াবেটিক-ফ্রেন্ডলি গুড় বা স্টিভিয়া ব্যবহার করতে পারেন, যা দ্রুত শর্করা বাড়ায় না।
মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা হলে মেথি ভেজানো জল, দারুচিনি, তুলসি-নিমের মিশ্রণ
ইত্যাদি উপকারী হতে পারে, যা ক্রেভিং কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিসে সঠিক খাদ্যাভ্যাসই সবচেয়ে বড় ওষুধ— তাই মিষ্টি বেছে নেওয়ার আগে অবশ্যই সচেতন হওয়া জরুরি।

গুড় এবং মধু যতই প্রাকৃতিক হোক না কেন, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তা নিরাপদ নয়। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে মিষ্টি খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা ও সংযমই সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি। আয়ুর্বেদ হোক বা আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা— উভয়েই জোর দেয় স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প বেছে নেওয়া, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা এবং শরীরের সঙ্কেত শুনে চলার উপর। তাই সুস্থ থাকার জন্য মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ নয়, বরং সঠিক জীবনযাপনের দিকেই নজর দেওয়াই হবে ডায়াবেটিস রোগীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।