আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত এক সপ্তাহে ভারতের সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার মোট ১,৭২০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ওপার বাংলায় ফেরত পাঠিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এঁরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছিলেন বলে খবর বিএসএফ সূত্রে। জানা গিয়েছে, এই ব্যক্তিদের প্রত্যেককেই উত্তর ২৪ পরগনার হাকিমপুর চেকপোস্ট থেকে ফেরত পাঠানো হয় বাংলাদেশে।
বিএসএফ সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, হাকিমপুর বর্ডার থেকেই ভারতের তরফে এই ১৭২০ জনের দায়িত্ব হস্তান্তর করে দেওয়া হয় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসের কাছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভারতে থাকা বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে বিএসএফ একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে। হাকিমপুর চেকপোস্টে পৌঁছনোর পর প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিকের বায়োমেট্রিক নথিভুক্ত করা হচ্ছে।
প্রত্যেক নাগরিকের পরিচয় ও কাগজপত্র জেলা প্রশাসনের কাছে, বিশেষ করে রাজ্য পুলিশের কাছে পাঠানো হচ্ছে। পুলিশ তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আগে যাচাই করে নিচ্ছে কোনও ব্যক্তির অপরাধমূলক যোগাযোগ বা আগের কোনও ক্রাইম রেকর্ড রয়েছে কী না।
ওই যাচাই প্রক্রিয়ায় অনুমোদন মিললেই তাঁদের বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠানো হচ্ছে। তবে নথি যাচাই ও প্রশাসনিক ছাড়পত্র পেতে সময় লাগায় দীর্ঘক্ষণ চেকপোস্টে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বহু বাংলাদেশিকে।
এ কারণেই হাকিমপুর চেকপোস্টে মানুষের লম্বা লাইন ও ভিড় দেখা দিচ্ছে। এমনটাই জানা গিয়েছে, বিএসএফ সূত্র মারফত। দক্ষিণবঙ্গের বিএসএফ মুখপাত্র ডিআইজি এন কে পাণ্ডে জানিয়েছেন, "এটা একটা পদ্ধতি। একটা নির্দিষ্ট গাইডলাইন অনুযায়ী হয়। যে বা যারা দেশে ফেরার জন্য সীমান্তের কাছে অপেক্ষা করছেন তাঁদের সম্পর্কে আগে খোঁজ নেওয়া হবে তাঁরা কোনো অপরাধ করে লুকিয়ে ছিলেন কি না। যদি না থাকে তবে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসারে তাঁরা ফিরে যাবেন।"
সীমান্তের কাছে জড়ো এই বাংলাদেশী বাসিন্দাদের একটি অংশের অভিযোগ, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একটি অংশ তাঁদের কাছে খাবার বিক্রি করতে প্রথমে অস্বীকার করেছিলেন। যার জন্য তাঁরা মহিলা ও শিশুদের নিয়ে খুব অসুবিধায় পড়েছিলেন।
এই পরিস্থিতিতে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বাসিন্দা ও সমাজসেবীরা। এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের উদ্যোগে এই বাংলাদেশীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে শুকনো খাবার, পানীয় জল ও বিস্কুট, লজেন্সের মতো জিনিস।
স্থানীয় বাসিন্দা ওহিদুল গাজী জানিয়েছেন, এসআইআর শুরু হওয়ার পর প্রথম প্রথম এই এলাকা দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জন অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশী যাতায়াত করত। এখন প্রতিদিন প্রায় ১০০র কাছাকাছি বাংলাদেশী সীমান্তের কাছে এসে হাজির হচ্ছেন।
যাঁদের মধ্যে একদিকে যেমন আছেন বয়স্ক মহিলারা তেমনি আছেন শিশুরাও। রাতের অন্ধকারে ঠান্ডায় তাঁদের কষ্ট হচ্ছে দেখে তাঁদের জন্য ত্রিপল টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে একবেলা করে তাঁদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সীমান্তে আটকে থাকা বাংলাদেশের সাতক্ষীরার বাসিন্দা মেহেদী হাসান রহমান জানান, বেশ কয়েকবছর আগে তিনি বিএসএফকে ফাঁকি দিয়ে এই দেশে প্রবেশ করেন।
এপারে এসে তিনি গানবাজনা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর বাবা কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে দিন যাপন করছিলেন। কিন্তু এসআইআর চালু হওয়ার পর এবার দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
