গুগল বলছে ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার ৫৪ ছুঁয়ে ফেললেন তাব্বু। চু-য়া-ন্ন! অবশ্য তাঁকে দেখলে সেকথা বিশ্বাস করবে না কেউ না কি করতে চাইবে না? এখনও একের পর এক বড় বাজেটের ছবিতে নিজস্ব ছন্দে হাজির হন তিনি। দর্শকমহলে আজও তাঁর জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয় নয়া প্রজন্মের দর্শকপ্রিয় তারকাদের কাছে। বলিউড, হলিউডের পাশাপাশি বাংলা ছবিতেও কিন্তু কাজ করেছেন তাব্বু। একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন বাংলা ভাষা, ছবি, সংস্কৃতি তাঁর হৃদয়ের ভীষণ কাছের। ২০০২ সালে বাংলা ছবিতে কাজ করেছিলেন তব্বু। ছবির নাম ‘আবার অরণ্যে’। ছবি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন গৌতম ঘোষ। তারপর বাঙালি বধূ অসীমা গঙ্গোপাধ্যায়ের চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে মীরা নায়ারের ‘নেমসেক’ ছবিতে। এদিন তাব্বুর জন্মদিনে আজকাল ডট ইন-এর কাছে তাব্বুকে স্মৃতিমেদুর হলেন এই জাতীয় পুরস্কারবিজয়ী পরিচালক। তাব্বু-র ‘গৌতমদা’।
“তাব্বুকে ‘আবার অরণ্যে’ কাস্ট করার আগে মাত্র একটি ছবি দেখেছিলাম ওর। গুলজার পরিচালিত ‘মাচিস’। ওই ছবিতে তাব্বুর পারফরম্যান্স দেখেই আমি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম, আবার অরণ্যের জন্য যেরকম অভিনেত্রী খুঁজছি, তার জন্য ও-ই পারফেক্ট। তাব্বুর একটা অদ্ভুত ভাল গুণ আছে, ভাষা রপ্ত করার। চট করে শিখে ফেলতে পারে। তাব্বু বাংলা জানত না প্রথমে, কিন্তু আস্তে আস্তে ধরে ফেলেছিল। তবু ওর বাংলা উচ্চারণে একটা টান আছে, যা স্বাভাবিক। এই ছবিতেও তাব্বু ছিল একজন প্রবাসী বাঙালির চরিত্রে। আমেরিকায় বড় হয়েছে। ফলে ওঁর বাংলা উচ্চারণে ওই টানটা সেই চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে গিয়েছিল। কোনও অসুবিধেই হয়নি। আবার অরণ্যে- তাব্বুর বাবা-মা হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং শর্মিলা ঠাকুর। তাব্বু যেমন দীর্ঘাঙ্গী, ওর চোখ-মুখের আদলের সঙ্গে ওই দু'জনের একটা সূক্ষ্ম মিল আছে। তাই চরিত্রের সঙ্গে খুব সুন্দর মিশে গিয়েছিল ও। চমৎকার অভিনয়টাই না করেছিল!” 
“তাব্বুর অধ্যবসায় শেখার মতো। চিত্রনাট্যে শোনার সময় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বহু প্রশ্ন করেছিল আমাকে। যতটা সম্ভব নিজের অভিনীত চরিত্রটির সঙ্গে একাত্ম হতে চেয়েছিল। আবার শুটিংয়ের আউটডোরে বাকিদের সঙ্গে হইহই করে মিশে গিয়েছিল। একসঙ্গে থাকা, এক খাবার খাওয়া। এটাও ওর একটা বড় গুণ। শেখার মতো। বোম্বের অভিনেত্রী বলে ছিটেফোঁটা অহংকার অথবা কোনও নাকউঁচু ব্যাপার ওর মধ্যে ছিল না। আজও নেই। তাব্বু আমাকে বলেছিল, ' গৌতমদা, আপনি অন্য কাউকে দিয়ে আমার ডাবিং করবেন না। ভুলেও করবেন না। আমিই করব।' শুনে ভাল লেগেছিল। আমিও তো এই ব্যাপারটায় বিশ্বাসী। যাই হোক, রূপায়ণে বড় স্ক্রিনে ডাবিং করতে নিয়ে গিয়েছিলাম ওকে। আমাকে অনুরোধ করেছিল, 'গৌতমদা, তুমি আমার পাশে থাকবে সবসময়। একটা কিছু ভুল হবে, আমাকে তখুনি ধরিয়ে দেবে। তারপর দেখিয়ে দেবে। আমি তোমাকে চোখ-কান বুজে নকল করব।' আর করেওছিল!”
‘মনের মানুষ’-এর পরিচালক সামান্য থামলেন। তারপর বলে উঠলেন, “তাব্বু কিন্তু আমার এই আবার অরণ্যে ছবিতে অভিনয় করে প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছিল। প্রথমবারের জন্য তাব্বুর আন্তর্জাতিক পরিচিতি পেয়েছিল এই ছবির জন্যেই। এই ছবিটি ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছিল। আমার সঙ্গে সেবারে সেখানে গিয়েছিলেন শর্মিলা ঠাকুর এবং তাব্বু। এরপর মন্ট্রিয়লে দেখানো হয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মীরা নায়ার যখন নেমসেক ছবিতে তাব্বুকে কাস্ট করে তার আগে ও আবার অরণ্য দেখেছিল। মরোক্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার এই ছবিটি মীরা দেখেছিল, সেটা আমি জানি।” 
“খুব বুদ্ধিমান অভিনেত্রী ও। আগে বাড়িয়ে কিছু করে না। পরিচালক যা চায়, যেটুকু চায় তা বুঝে নিয়ে নিজের বুদ্ধি মিশিয়ে পারফর্ম করে। আর একটা...আর একটা অদ্ভুত মায়া আছে তাব্বুর মধ্যে। এমনিতেই তাব্বুর অধ্যবসায় শেখার মতো। যে ভাবে নিজেকে ধরে রেখেছে এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে, তা অনুপ্রেরণা জোগায় নতুন প্রজন্মকে। আর স্মৃতিশক্তিও দারুণ প্রখর। কবিতা ভালবাসে। গুলজার সাহেবের কবিতা তো খুব পড়ত এক সময়। এখনও নিশ্চয়ই পড়ে। আমাকে তো মাঝে মাঝেই ফোন করে বলে, ‘গৌতমদা, আপনার সঙ্গে কবে আবার ছবি করব?’ আপনাকে বলছি, তাব্বুকে নিয়ে আবার একটা ছবি তৈরির পরিকল্পনা আছে আমার করব। ভাষাটা বাংলা না হিন্দি হবে, এখনও সেই বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু ঠিক করিনি, তবে ছবি হবে।”
“তাব্বু আমার থেকে অনেকটাই ছোট। ও আমার ছোট্ট একটা মিষ্টি বোন। আমাদের মধ্যে দাদা-বোনের সম্পর্ক। ছোট বোনের জন্মদিনে তার দাদা যেমন ভালটুকু চায়, আমিও চাই ঠিক তেমনভাবে। ভাল থাকুক, দারুণ সব ছবিতে অভিনয় করুক আর আমাদের দেশের নাম উজ্জ্বল করুক।”
