২০২৫ সাল কার্যত নিজের পকেটে ভরে নিয়েছেন দুলকার সলমন। একের পর এক ছবিতে সাফল্য দেখিয়ে দিচ্ছে ক্যালেন্ডার জুড়ে তাঁরই আধিপত্য। অভিনয়ে প্রশংসিত ‘কান্তা’, আর বক্স অফিসে রেকর্ড ভাঙা তাঁর নিজস্ব প্রযোজনার ছবি ‘লোকাহ: চ্যাপ্টার ১-চন্দ্রা’ সব মিলিয়ে বছরের অন্যতম প্রভাবশালী তারকাদের তালিকায় দুলকারের নাম প্রথম সারিতেই। কিংবদন্তি দক্ষিণী অভিনেতা মামুট্টির পুত্র হলেও দুলকার আজ শুধুই ‘স্টারকিড’ নন। মালয়ালাম, তামিল, তেলুগু ও হিন্দি -চার ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে তিনি তৈরি করেছেন নিজের স্বতন্ত্র পরিচয়। সম্প্রতি, নিজের এই যাত্রাপথ ফিরে তাকাতে গিয়ে দুলকার অকপটে কথা বললেন এমন এক অধ্যায় নিয়ে, যা খুব একটা গ্ল্যামারাস ছিল না বলিউডে তাঁর শুরুর দিনগুলো।

 

২০১৮ সালে ‘কারওয়া’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন দুলকার। সহ-অভিনয়ে ছিলেন প্রয়াত ইরফান খান ও মিথিলা পালকর। ছবিটি মুক্তির পর প্রশংসা কুড়োয় এবং আজও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে দর্শকের ভালবাসা পেয়ে চলেছে। তবে এত উষ্ণ অভ্যর্থনার পরেও, দুলকার সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, বলিউডে তাঁর প্রথম অভিজ্ঞতা মোটেও মসৃণ ছিল না। দুলকারের কথায়, হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকেই তিনি বুঝেছিলেন, এখানে উপস্থিতির চেয়ে অনেক সময় ধারণাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে ‘খুব বড় তারকা’ বলে বাইরে থেকে প্রজেক্ট না করলে, সেটে জায়গা বা সম্মান, কিছুই সহজে মিলত না।

 

তিনি আরও জানান, কোনও অভিনেতা যদি বড় এনট্যুরাজ বা জাঁকজমক নিয়ে না আসেন, তবে সেটে তাঁকে কার্যত উপেক্ষা করা হয়। দুলকার এমনও বলেন, সেই সময় তিনি এবং তাঁর মাত্র দু’জনের টিম ভিড়ঠাসা সেটে বারবার ধাক্কাধাক্কিতে পড়তেন। এমনকী মনিটরের পিছনে দাঁড়ানোর জায়গা বা একটা চেয়ার পাওয়াও নির্ভর করত, আপনি নিজেকে কতটা ‘স্টার’ হিসেবে তুলে ধরছেন তার ওপর।

 

দুলকার স্পষ্ট করেন, বিষয়টা প্রতিভার নয়। একেবারেই বাহ্যিক চেহারা আর স্ট্যাটাসের। তাঁর ভাষায়, অনেক সময় বলিউডে খ্যাতির সঙ্গে জুড়ে যায় বিলাসবহুল গাড়ি, একগুচ্ছ সহকারী আর বাহারি উপস্থিতি। তিনি এটাকে দুঃখজনক বলেই মনে করেন। “শক্তি ব্যবহার হওয়া উচিত কাজের পেছনে, স্ট্যাটাস প্রজেক্ট করার পেছনে নয়,” মন্তব্য দুলকারের।

 

এই প্রসঙ্গেই তিনি মালয়ালাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বলিউডের তুলনা টানেন। দুলকার জানান, কেরলের ইন্ডাস্ট্রি অনেক বেশি বাস্তববাদী, কোনও বাড়তি জাঁকজমক নেই। সেখানে এনট্যুরাজ কালচার প্রায় নেই বললেই চলে। অভিনেতারাই নিজের ছোটখাটো কাজ সামলে নেন। শুটিং লোকেশনের কাছে বাড়ির মালিকদের অনুমতি নিয়ে সেখানেই চেঞ্জিং রুম বা শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা... এটাই সেখানে স্বাভাবিক চর্চা।

 

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও তুলে ধরেন দুলকার। তাঁর মতে, মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেতারাই নিজেদের অতিরিক্ত বিলাসের খরচ বহন করেন। প্রোডাকশনের ওপর অযথা চাপ দেওয়ার প্রবণতা কম। অনেকেই ব্যক্তিগত পারিশ্রমিক থেকেই সেই খরচ চালিয়ে নেন। এতে বাজেট ফুলে ওঠে না, ইন্ডাস্ট্রিও থাকে মাটির কাছাকাছি।

 

নিজের জীবনদর্শন প্রসঙ্গে দুলকার বলেন, তিনি বরাবরই ‘লো-প্রোফাইল’ থাকতে পছন্দ করেন। শুটিংয়ে একাই যাতায়াত, নিজের ব্যাগ নিজেই গোছানো, এসবই তাঁর অভ্যাস। মজার ছলে তিনি বলেন, “একবার প্রোডাকশন ভাবতে শুরু করলে যে অভিনেতাকে এনট্যুরাজ চাই, তার পর সহকারীদেরও সহকারী হতে থাকে!”

 

দুলকার এটাও স্বীকার করেন, ইন্ডাস্ট্রির এই সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণও আছে। বলিউডের দর্শকসংখ্যা বিশাল, একাধিক রাজ্য জুড়ে তার প্রভাব। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে তারকা-কেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে। বিপরীতে মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রি সীমিত ভূগোলের মধ্যে কাজ করলেও সহযোগিতামূলক এবং বাস্তবধর্মী কাজের সংস্কৃতি ধরে রাখতে পেরেছে।

 

সবশেষে দুলকার স্পষ্ট করে বলেন, তিনি কোনও ইন্ডাস্ট্রিকেই আক্রমণ করছেন না। এটা শুধুই তাঁর ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ। দক্ষিণ ভারত থেকে বলিউড, একাধিক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার অভিজ্ঞতায় তিনি বুঝেছেন, প্রত্যেকের নিজস্ব শক্তি রয়েছে। আর নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটাই তাঁর যাত্রার সবচেয়ে বড় শিক্ষা।

 

কাজের দিক থেকে দুলকারের থামার লক্ষণ নেই। ‘কান্তা’ আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে নেটফ্লিক্সে স্ট্রিম হওয়ার কথা। পাশাপাশি ২০২৫ সালের ব্যস্ত ক্যালেন্ডারে আরও যোগ হচ্ছে নতুন মালয়ালম ছবি ‘আই অ্যাম গেম’। সাফল্যের গতি যে এখনই কমছে না, সেটাই স্পষ্ট।