রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মমতাশঙ্কর এবং রিয়্যালিটি শো। আপাতত এই তিনের মধ্যে একটাই যোগসূত্র! তা হল, বিতর্ক। শুধু বিতর্ক নয়, বলা উচিত গনগনে বিতর্ক। জি বাংলার ডান্স বাংলা ডান্স রিয়্যালিটি শোয়ের মঞ্চে চণ্ডালিকা র একটি নৃত্যাংশ পরিবেশন করা হয়। সেখানে তেরে বিনা জিন্দেগি সে গানটির প্রয়োগ নিয়ে তীব্র বিতর্ক ছড়ায় সমাজমাধ্যমে। মঞ্চে সেই নৃত্য পরিবেশনা করেছিলেন শোয়ের প্রতিযোগী অনুষ্কা চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে সঙ্গত করেছিলেন অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত নৃত্যনাট্যে কেন আঁধি ছবির জনপ্রিয় গান ব্যবহৃত করা হল সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকে নিন্দার রব উঠেছে সমাজমাধ্যমে। এখানেই শেষ নয়। রিয়্যালিটি শোয়ের ওই পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মমতাশঙ্কর।  কী করে তাঁর মতো একজন বর্ষীয়ান নৃত্যশিল্পীর উপস্থিতিতে এ ধরনের নৃত্য পরিবেশন করা হয় আর কী করেই বা তাঁর মতো নৃত্যশিল্পী এমন একটি উপস্থাপনা দেখে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করলেন তা নিয়েও সরব নেটপাড়া। 

নৃত্যশিল্পী তথা অভিনেত্রী ইন্দ্রানী দত্ত আজকাল ডট ইন-কে বললেন, “আসলে কিছু কিছু ব্যাপারে সঙ্গে আমাদের ভক্তি শ্রদ্ধা ভালবাসা এতটাই জড়িয়ে রয়েছে যে তার জন্য একটা আলাদা আসন থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-ও তাই। ওঁর কর্মকান্ডকে, সৃষ্টিকে একভাবে দেখতে গেলে পুজো করি আমরা। তাই ওঁর সৃষ্টির সঙ্গে হিন্দি গানের দোসর হওয়াটা মেনে নিতে আপত্তি আছে। তার মানে এই নয় যে হিন্দি গানে আমার ব্যক্তিগত আপত্তি আছে। অনেকসময় তো আমি হিন্দি গানেও পারফর্ম করি, শোনার পাশাপাশি। হিন্দি নিয়ে আমার কোনও বিদ্বেষ নেই! কিন্তু কোথাও যেন এই ব্যাপারটা মেনে নিতে অসুবিধে হচ্ছে। মনটাকে খুব উদার করেও মেনে নিতে অপারগ আমি। চণ্ডালিকা না বলে ওই হিন্দি গান ব্যবহার করলে অসুবিধে ছিল না। কিন্তু রবি ঠাকুর, চণ্ডালিকা নামটাকে ব্যবহার করে এই বিষয়টা করতে আমাদের ভাবাবেগে তা আঘাত করেছে। গুরু পরম্পরায় যেহেতু আমাদের শিক্ষা চলে, তাই খারাপ লাগাতার ভিতটা আরও গভীরে প্রোথিত...”


ঘটনাটি জানার পর নৃত্যশিল্পী শ্রীনন্দাশঙ্কর অল্প কথায়, স্পষ্ট করে আজকাল ডট ইন-কে প্রথমে জানালেন তিনি এই বিষয়টির সঙ্গে অবগত নন। কারণ প্রথমত তিনি মুম্বইয়ে থাকেন, দ্বিতীয়ত বাংলা রিয়্যালিটি শো তিনি দেখেন না। শিল্পীর কথায়, “দেখুন, বিষয়টি আমি একেবারেই জানি না। আর সত্যি কথা বলতে কী, ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ রিয়্যালিটি শো একদমই দেখি না। তবে যা শুনলাম, তা অদ্ভুত লাগছে। এককথায়, মেলাতেই পারছি না। কল্পনাতীত আমার কাছে! কিন্তু কী জানেন, আজকাল সব ধরনের কন্টেন্ট দেখারই দর্শক থাকে। আমার ব্যক্তিগতভাবে ব্যাপারটা পছন্দ হচ্ছে না কিন্তু ক্রিয়েটিভ পৃথিবীতে, সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় সবকিছু দেখার দর্শক আছেন। তাই তাঁরা হয়তো দেখবেন। তাঁদের ভাল- লাগবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ফালতু ব্যাপার দেখি আমরা কিন্তু সেগুলো কি থামানো যায়? তবে শেষে আবার বলছি, ব্যক্তিগতভাবে ব্যাপারটা আমার পছন্দ হচ্ছে না একেবারেই।” 

 

 

নৃত্যশিল্পী ডোনা গাঙ্গুলি বললেন, “এরকম করা উচিত নয়। একান্ত হিন্দি গানের প্রয়োজন হলে ওই গানটির-ই হিন্দি অনুবাদ করে তা প্রয়োগ করতে পারত। আমি-ই তো চিত্রাঙ্গদা-র হিন্দি অনুবাদ করে পারফর্ম করেছিলাম। রবি ঠাকুর স্বয়ং নিজে 'শ্যামা'র ইংরেজি অনুবাদ করে রেখেছিলেন। গীতাঞ্জলি-ও তাই। আমার মনে হয়, পরম্পরা বজায় রাখা উচিত।”

 

অন্যদিকে, মঙ্গলবার রাতে একটি ভিডিও পোস্ট করে মমতাশঙ্করের দাবি, তিনি প্রথমেই জানিয়েছিলেন এই নৃত্য উপস্থাপনা তাঁর এতটুকুও ভাল লাগেনি। তাঁর কথায়, “কোনও রিয়্যালিটি শোয়ের বিচারক হতে যেতে পছন্দ করি না, কারণ এই ধরনের প্রতিযোগিতায় আমার বিশ্বাস নেই। তবুও যেতে নয় নিজেদের স্বার্থে, সম্পর্কের খাতিরে। আর এখানে আমার বক্তব্য এডিট করে দেখানো হয়েছে! যাঁরা দেখে ইটা বিরক্ত হয়েছেন, বিশ্বাস করুন আমিও ঠিক ততটাই বিরক্ত। তবে আমাকে যাঁরা অল্প হলেও চেনেন, ভরসা করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই এটুকু  বিশ্বাস করবেন এ ধরনের উপস্থাপনার আমি কখনওই প্রশংসা করতে পারি না!” দৃঢ় গলায় বলেছেন বর্ষীয়ান শিল্পী।