ডিজিটাল দুনিয়ায় যখন এক ক্লিকেই ছবি, ভিডিও, কণ্ঠস্বর বা ব্যক্তিগত পরিচয় ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে, তখন ব্যক্তিস্বত্বা রক্ষার লড়াইটা দিন দিন আরও জরুরি হয়ে উঠছে। সেই বাস্তবতায় সম্প্রতি বলিউড অভিনেতা আর. মাধবনের ব্যক্তিত্ব অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। ২২ ডিসেম্বর আদালত আদেশ দেন, অভিনেতার নাম, ছবি, কণ্ঠস্বর বা পরিচয় অননুমোদিতভাবে ব্যবহার করা যাবে না। পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে অশালীন এবং বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট অপসারণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার মূল অভিযোগ, মাধবনের নাম ও চেহারা ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো বিজ্ঞাপন, বিভ্রান্তিকর ভিডিও এবং এমনকি ‘কেশরী ৩’-এর নামে একটি ভুয়ো ছবির ট্রেলার পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। অভিনেতার আইনজীবী স্বাতী সুকুমার জানান, এ ধরনের বহু কনটেন্ট আগে থেকেই রিপোর্ট করা হয়েছিল। আদালত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে জানায়, কিছু কনটেন্ট দ্রুত সরানো সম্ভব হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–ভিত্তিক কনটেন্ট আইনি দৃষ্টিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন।
শুধু মাধবন নন, এর আগে অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, করণ জোহর, কুমার শানু থেকে শুরু করে সলমন খান এবং সুনীল গাভাসকর সহ অনেক তারকাই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন নিজেদের পরিচয় ও ডিজিটাল অধিকার রক্ষায়। অভিষেক বচ্চন নিজেই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কন্যা আরাধ্যার গোপনীয়তা রক্ষার মামলায় সাফল্য পাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই পরে তিনি তার বাবার ডিজিটাল অধিকারও আইনি সুরক্ষায় নিয়ে আসেন। তাঁর ভাষায়, “ইন্টারনেট শক্তিশালী, কিন্তু একই সঙ্গে বিপজ্জনক জায়গাও। সীমা না টানলে অপব্যবহার বাড়তেই থাকবে।”
সম্প্রতি দক্ষিণ ভারতীয় তারকা জুনিয়র এনটিআর এবং অন্ধ্র প্রদেশের ডেপুটি সিএম পবন কাল্যাণও ব্যক্তিসত্ত্বা সুরক্ষায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালত অন্তর্বর্তী সুরক্ষা দিয়ে জানিয়েছে, বিস্তারিত নির্দেশ পরে দেওয়া হবে।
সব মিলিয়ে স্পষ্ট, ডিজিটাল যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে তারকাদের ব্যক্তিসত্ত্বা রক্ষা এখন শুধু নৈতিক নয়, বরং আইনি লড়াইয়েরও বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। দিল্লি হাইকোর্টের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সেই লড়াইয়ে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন হিসেবেই চিহ্নিত হল।
