গত মঙ্গলবার স্বামী পিটার হাগ–এর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ এনেছেন অভিনেত্রী সেলিনা জেটলি। আদলতেরও দ্বারস্থ হয়েছেন অভিনেত্রী! মুম্বই আদালতে মামলা করে স্বামীর থেকে চেয়েছেন ৫০ কোটি টাকার খোরপোশ। সন্তানদের জন্য মাসিক ১০ লক্ষ টাকার দাবিও করেছেন। অভিনেত্রীর দাবি, স্বামীর কারণে দীর্ঘদিন কাজ করতে না পেরে তাঁর উপার্জনে ‘মারাত্মক ক্ষতি’ হয়েছে।

 

সেলিনার আইনজীবীর দাবি অনুযায়ী, বিচ্ছেদের আবেদনে তিনি যে কারণগুলির উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে-মানসিক ও মৌখিক নির্যাতন, শারীরিক হিংসা, মানসিক নিয়ন্ত্রণ, জোরজবরদস্তি এবং আর্থিক নিয়ন্ত্রণ।

 

 

 

তবে এই মুহূর্তে একা একটি মামলাই নয়, সেলিনার জীবনে চলছে একাধিক আইনি লড়াই। একদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাঁর ভাইকে ‘অবৈধভাবে আটক’ করে রাখার অভিযোগে সহায়তা চেয়ে মামলা, অন্যদিকে মুম্বইয়ে সম্পত্তি সংক্রান্ত দেওয়ানি মামলা, পাশাপাশি অস্ট্রিয়ায় পিটারের দায়ের করা বিচ্ছেদের মামলা।

এক সাক্ষাৎকারে সেলিনার আইনজীবী নীহারিকা কারঞ্জাওয়ালা বলেন, “এই মুহূর্তে সেলিনার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ সন্তানের হেফাজত। অস্ট্রিয়ান আদালতে চলা মামলায় তিনি সেই লড়াই লড়ছেন। সন্তানরাই তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার।” তিনি আরও জানান, গার্হস্থ্য হিংসার মামলাতেও সন্তানের হেফাজত এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগের অধিকার চাওয়া হয়েছে। তবে স্বস্তির খবর “দু’দিন আগে অস্ট্রিয়ান আদালত প্রতিদিন এক ঘণ্টা ফোনে সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি দিয়েছে।”

 

এর আগে সেলিনা ও সন্তানদের মধ্যে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিলেন পিটার, রয়েছে এমনই অভিযোগ।

 

সেলিনার স্বামীর বিরুদ্ধে কি করা হয়েছে পরকীয়ার অভিযোগও? সত্যিটা কী বলছেন আইনজীবী? পরকীয়ার প্রশ্নে নীহারিকার বক্তব্য বেশ স্পষ্ট -বিয়ের সময় সেলিনা সরাসরি কোনও সম্পর্কের প্রমাণ পাননি। তবে প্রথম যমজ সন্তানের জন্মের পর পিটারের বোনের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, “ যখন সেলিনার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন পিটার, তখন নিজেকে ‘সিঙ্গল’ বলে দাবি করেছিলেন। তবে সত্যিটা ছিল অন্য। আসলে তখন অন্য এক নারীর সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন পিটার।”

 

আইনজীবীর কথায়, এই বিয়ে কোনওদিনই সুখের ছিল না। বিশেষত ২০১৭ সাল ছিল সেলিনার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অধ্যায়। তখন তিনি দ্বিতীয়বার যমজ সন্তানের মা হতে চলেছেন। সেই সময় গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে প্রয়াত হন তাঁর বাবা। যমজ সন্তানের জন্মের দিনই এক শিশুর মৃত্যু হয়।  এরপর পাঁচ মাসের মধ্যেই ক্যানসারে মারা যান তাঁর মা!  এই তিন ধাক্কায় সেলিনা গভীর অবসাদে চলে যান।

 

নীহারিকার দাবি, পিটার সেলিনার সমস্ত ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড নিজের দখলে রেখেছিলেন, তাঁর সঞ্চয় দিয়ে সংসার চালাতেন।সম্পত্তি বিক্রি, ভাড়ার টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নেওয়া-সবই করা হয়েছে সেলিনার অজান্তে।চাকরি হারানোর পর পরিবারের জায়গা বদল-মুম্বই, দুবাই, সিঙ্গাপুর হয়ে শেষমেশ অস্ট্রিয়ার এক দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম।“সেখানে তাঁকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল। ভাষা জানতেন না, বাবা-মা মারা গিয়েছেন, শিশু সন্তান...এক কথায় তিনি ছিলেন একেবারে একা,” বলেন নীহারিকা।

 

পিটারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ, তিনি নাকি সেলিনার পাসপোর্ট ও সব নথি নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছিলেন! একদিন সেই নথির হদিশ পেয়ে, এক প্রতিবেশীর সাহায্যে সেলিনা কোনওরকমে ভারতে ফিরে আসেন আর এখানেই তারপর তাঁর আইনি লড়াই শুরু। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতে এসে নভেম্বরে কারঞ্জাওয়ালা অ্যান্ড কোং–এর সঙ্গে পরামর্শ নেন তিনি।

এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই, এই বহুমুখী আইনি যুদ্ধের শেষে সেলিনা কি আদৌ ফিরে পাবেন তাঁর সন্তানদের?