কিছুদিন আগেই ‘ভূত তেরিকি’-তে অভিনয় করেছি। তখন ভূত নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে বটে! তবে আমি তেমন কিছু অনুভব করিনি। হয়েতো ‘মানুষ ভূত’ দেখেই আসল ভূতেরা ভয় পেয়েছিল। তাই আর ‘তেনারা’ সামনে আসেনি। তবে ভৌতিক অভিজ্ঞতা বলতে যা বোঝায় আমার কিন্তু একবার হয়েছিল। সেবার পাহাড়ে গিয়ে খুব ভয় পেয়েছিলাম। ১২ জন বন্ধু মিলে গিয়েছিলাম ইচ্ছেগাঁও-তে। সেখানের এক ঘটনার কথা ভাবলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়। 

উত্তরবঙ্গের ওই হোমস্টে-তে পৌঁছে আমরা অনেক গল্প শুনেছিলাম। যাকে বলে এক্কেবারে গা ছমছমে ভূতের গল্প। সন্ধেবেলা অনেককে অদ্ভুত অনুভূতির কথা বলাবলি করতে শুনেছি। কিন্তু ঠিক কী সেই অনুভূতি তা কেউ ভাষায় ব্যক্ত করতে পারছিলেন না। আমার এক বন্ধুকে হোম স্টে-র কেয়ারটেকার বলছিলেন, '১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়বেন।' সে যতই সতর্কবার্তা থাকুক, বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে এত তাড়াতাড়ি কি শুয়ে পড়া যায়! কেউই খুব একটা পাত্তা দেয়নি। আসলে কিছু মানুষ এসব নিয়ে সত্যি ভয় পায়। আর কয়েকজনের কাছে স্রেফ খিল্লির বিষয়। আমাদের মধ্যেও কেউ কেউ ‘ভূতটূত’ নিয়ে হাসাহাসি করে উড়িয়ে দিয়েছিল। কয়েকজন বিষয়টা বেশ সিরিয়াসলি নেয়। আমি বোধহয় ওই দ্বিতীয় তালিকাতেই ছিলাম। যদিও তখনও জানতাম না রাতে আমার সঙ্গে কী হতে চলেছে...

যে কোনও অফবিট পাহাড়েই শহরের জনকোলাহল থেকে দু-একদিনের জন্য প্রাণভরে বাঁচা যায় ঠিকই, কিন্তু সূর্য ডুবলে এক অসীম নিস্তব্ধতা গ্রাস করে। আর শুনশান পরিবেশ ভয়াবহ হয়ে উঠলে যেন সময় কাটতেই চায় না। সেই নিঝুম রাতে চলছিল ভূত নিয়ে আলোচনা৷ হঠাৎ খবর পাই ওই কটেজের একজনের বীভৎস জ্বর এসেছে। হাত-পা তুলতে পারছেন না। তাঁর এপিলেপ্সি ছিল কিনা জানি না। সবাই টেনশনে পড়ে গিয়েছিল। এরপর পরিবেশ আরও ছমছমে হয়ে যায়। আমরা  ঠিক করি রাতে এক জায়গায় সবাই মিলে ঘুমাবো। কিন্তু হোম স্ট-তে এত জায়গা ছিল না। তাই খানিকক্ষণ বাদে সকলেই নিজের রুমে চলে যায়। 

আমার রুমে গিয়ে কেমন একটা লাগছিল! বিছানায় শুয়ে পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছিলাম কেউ একজন কাঁদছে...দূর থেকে যেন ভেসে আসছে গোঙানির শব্দ। ঠকঠক করে কাঁপছিলাম। বন্ধুরা গায়ে হাত দিয়ে দেখে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে শরীর। জানি না কেন অন্যরা কোনও কিছু শুনতে পাচ্ছিল না। হয়েতো আমি সন্ধেবেলার নানা রকম ভৌতিক কথা বেশি চিন্তা করতেই এরকম অনুভব করেছিলাম। কিন্তু ঠিক কী হয়েছিল আজও বুঝতে পারিনি। 

শুধু কি পাহাড়, সমতলেও শুনেছি ভুতেদের আনাগোনা একইরকম। 'দাদুর কীর্তি'-তে কাজ করার সময়ে বারুইপুর রাজবাড়িতে বেশ ভয় লেগেছিল। ওই রাজবাড়ি অবশ্য অনেকেই বলেন 'ভূতূরে'। এছাড়াও ভূত নিয়ে অনেক ঘটনাই তো শুনেছি। কিন্তু সত্যিকারে ভূত দেখার 'দু:সাহস' হয়নি।