ভালবাসা এবং নিঃসঙ্গতার এক ঘনিষ্ঠ, পরীক্ষামূলক ভ্রমণ — ‘৮’। আট বছরের ছিন্নস্মৃতি, ব্যক্তিগত প্রতিফলন ও মুহূর্তের খণ্ডচিত্র জুড়ে তৈরি এই ছবিটি আবেগের অনিশ্চয়তাকে ধরতে চেয়েছে এক অনন্য ভঙ্গিতে।
কার্ল রজার্সের উক্তি, “ওয়াট ইজ পার্সোনাল ইজ মোস্ট ইউনিভার্সাল”— যেন এই ছবির মূল সুর। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে তৈরি হলেও, ‘৮’ তার সীমা ছাড়িয়ে এক সার্বজনীন আবেগে পৌঁছেছে। প্রচলিত সিনেমার গণ্ডি পেরিয়ে, এটি সময় ও স্মৃতির টুকরোগুলো জুড়ে তৈরি এক কাব্য। আট বছরের সময়সীমায় তৈরি এই ছবি সংযোগ ও বিচ্ছেদের মুহূর্তগুলোকে একসঙ্গে বুনেছে— বাস্তবতা ও কল্পনার সীমারেখা ঘুঁচিয়ে দিয়েছে।
ইন্ডি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের লড়াই, সৃজন প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তা, আর নিজের ভিতরের দ্বন্দ্ব— সবকিছুকে একত্র করে নির্মাতা নিজেকেই এই ছবির কেন্দ্রবিন্দু করেছেন। দর্শককে নিয়ে গিয়েছেন এক অন্তর্মুখী যাত্রায়, যেখানে গল্প নয়, মুখ্য উপাদান হয়ে উঠেছে অনুভূতি। ভালবাসা, হারিয়ে ফেলা, শহুরে একাকিত্ব— এই তিন থিম জুড়েই গড়ে উঠেছে ছবির আত্মা।
নির্মাতা অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটাই আমার সবচেয়ে ব্যক্তিগত কাজ। গত আট বছরের জীবনের উত্থান–পতনের মধ্যে দিয়ে তৈরি হয়েছে এই । এই সময়ে আমি চারটি ছবি বানিয়েছি, পেরিয়েছি সম্পর্কভাঙার কষ্ট। কিন্তু ‘৮’ কেবল আমার ব্যক্তিগত ডায়েরি নয়, বা ব্যর্থ প্রেমের গল্পও নয়। এটা স্মৃতির ফাঁকফোকরে লুকনো সেই অনুভূতিগুলোর অনুসন্ধান, যা সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে গেলেও থেকে যায়।”
লেখা, অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি, সম্পাদনা থেকে সাউন্ড— সব কিছুই একাই সামলেছেন অমিতাভ। তিনি বলেন, “এই কাজটিতে আমি গল্প বলতে চাইনি, অনুভূতি তৈরি করতে চেয়েছি।”
অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় একজন স্বাধীন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, যাঁর কাজ সম্পর্ক, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং অস্তিত্ববাদী নিঃসঙ্গতা নিয়ে। তাঁর গল্প বলার ধরন নীরব অথচ গভীর আবেগে পরিপূর্ণ।
তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘মনোহর অ্যান্ড আই’ (আমি ও মনোহর) ২০১৮ সালে কেরালা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ডেবিউ ছবির পুরস্কার পায়। এছাড়াও পুদুচেরি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্র ও জাফনা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা পরিচালকের মনোনয়ন অর্জন করে।
৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বাংলা প্যানোরামা বিভাগে নির্বাচিত একমাত্র সাদা-কালো ছবি ‘৮’। তবে শুধু রং নয়, এই ছবির আসল বিশেষত্ব এর ভাষা ও গঠন। প্রচলিত টলিউড ধারার বাইরে গিয়ে, এটি নির্মাতার আট বছরের অভিজ্ঞতাকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছে। মাত্র দুই অভিনেতা এবং অমিতাভ নিজে ক্যামেরার পিছনে থেকে তৈরি করেছেন এই ছবি— যেখানে তাঁর আগের কাজের দৃশ্যও জুড়ে দেওয়া হয়েছে মনোলগের সঙ্গে।
