অমিতাভ বচ্চন শনিবার ব্লগে শোক প্রকাশ করেছেন। কিংবদন্তি অভিনেত্রী কামিনী কৌশল চলে গিয়েছেন ৯৮ বছরে। শুক্রবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিগ বি লিখেছেন, ‘আরও একটি ক্ষতি… পুরনো দিনের প্রিয় বন্ধু… যখন দেশ বিভক্ত হয়নি… কামিনী কৌশালজি… কিংবদন্তি শিল্পী, আমাদের সঙ্গে শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন।’

অমিতাভ আরও জানান, কামিনীর দিদি তাঁর মায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। বিগ বি লিখেছেন, ‘কামিনীজির দিদি আমার মায়ের খুব কাছের বন্ধু ছিলেন… তাঁরা সহপাঠী ছিলেন এবং এক আনন্দময়, সমমনস্ক গোষ্ঠী তৈরি করেছিলেন… ওঁর দিদি দুঃখজনকভাবে এক দুর্ঘটনায় মারা যান, এবং তখনকার প্রথা অনুযায়ী, এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে মৃত দিদির স্বামীকে বোনের স্বামীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও লেখেন, ‘একজন অত্যন্ত সৌম্য, আন্তরিক এবং প্রতিভাবান শিল্পী আমাদের ছেড়ে গিয়েছেন… ৯৮ বছর বয়সে… এক যুগের স্মৃতি হারিয়ে গিয়েছে… শুধুমাত্র চলচ্চিত্র জগত নয়, বন্ধুবৃত্তেও তার অনুপস্থিতি শূন্যতা তৈরি করেছে। একে একে সকলে আমাদের ছেড়ে যাচ্ছেন… এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক মুহূর্ত, যা শুধুমাত্র শোক ও প্রার্থনায় পরিপূর্ণ। তাঁর অভিনয় এখন শুধুই স্মৃতি।”

‘কৃষ্ণচূড়া’ খ্যাত অভিনেত্রী কামিনীর প্রয়াণে বহু বলিউড তারকা সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন। ‘কবীর সিং’-এ তাঁর সঙ্গে কাজ করা শাহিদ কাপুর ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘আলোর মাঝে শান্তিতে থাকুন ম্যাম।’
কিয়ারা আডবাণীও লিখেছেন, ‘আপনার সঙ্গে কাজ করা একটি প্রাপ্তি ছিল। আপনার নম্রতা এবং প্রতিভা প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং ভারতীয় সিনেমায় অমর ছাপ রেখেছে। শান্তিতে বিশ্রাম নিন, কামিনী কৌশলজি।’

কামিনীকে সর্বশেষ বড়পর্দায় দেখা গিয়েছিল ‘লাল সিং চাড্ডা’য়, যেখানে তিনি একটি ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ১৪ নভেম্বর, তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, পরিবার এই মুহূর্তে একান্তভাবে শোক পালনের জন্য সকলের কাছে সময় এবং গোপনীয়তা চেয়েছেন।

১৯২৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন কামিনী। তিনি ছিলেন বলিউডের প্রথম দিকের নারী সুপারস্টারদের মধ্যে একজন। তাঁর অভিনয় জীবন সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত। ১৯৪৬ সালে মুক্তি পাওয়া তাঁর প্রথম ছবি 'নীচা নগর' দিয়ে তিনি চলচ্চিত্র জগতে এক ঐতিহাসিক সূচনা করেন। এই ছবিটিই প্রথম কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পুরস্কার পাম ডি'অর জেতে, যা আজ অবধি একমাত্র ভারতীয় চলচ্চিত্রের রেকর্ড।

এরপর তাঁর কেরিয়ারে একের পর এক মাইলফলক তৈরি হয়। তিনি দিলীপ কুমার এবং রাজ কাপুরের মতো সেই সময়ের সেরা অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেন। 'শহীদ', 'নদীয়া কে পার', 'জিদ্দী', 'শবনম', 'আরজু'-সহ ৯০টিরও বেশি ছবিতে তাঁর শান্ত, মার্জিত উপস্থিতি এবং শক্তিশালী অভিনয় তাঁকে দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে দেয়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি নায়িকা থেকে চরিত্রাভিনয়ে স্থানান্তরিত হন এবং 'দো রাস্তে', 'প্রেম নগর'-এর মতো ছবিতে প্রশংসিত হন। এমনকী নব্বইয়ের দশকেও তিনি সিনেমা থেকে দূরে থাকেননি।