চরম সঙ্কটে পঞ্জাব। সাম্প্রতিক বন্যা ভয়াবহ ধ্বংস ডেকে এনেছে। হাজারও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, ভেঙে পড়েছে পরিকাঠামো। প্রাকৃতির বিপর্যয়ে তছনছ চারদিক। এই বিপর্যয়ের মাঝেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন অক্ষয় কুমার। এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানান, তিনি ‘ডোনেশন’ অর্থাৎ অনুদান শব্দটিই অপছন্দ করেন। তাঁর মতে, সাহায্য করা মানে শুধু দান নয়, বরং মানবিক দায়িত্ব পালন।
অক্ষয় বলেন, “আমি আমার মতামতে অটল আছি। হ্যাঁ, আমি পঞ্জাবের বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণসামগ্রী কিনতে পাঁচ কোটি টাকা দিচ্ছি। কিন্তু আমি কে, যে কাউকে ‘ডোনেট’ করব? সুযোগ পেলে সাহায্যের হাত বাড়াতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। আমার কাছে এটা সেবা, আমার একেবারে ছোট্ট অবদান। আমি প্রার্থনা করি, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় দ্রুতই আমার পঞ্জাবের ভাইবোনদের জীবন থেকে কেটে যাক।”
অভিনেতার এই পদক্ষেপ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষত, তিনি তাঁর অবদানকে ‘সেবা’ বলে উল্লেখ করেছেন, ‘ডোনেশন’ নয়—এই বিনয়ী দৃষ্টিভঙ্গি অনেকের হৃদয়ে দাগ কেটেছে।
এটাই প্রথম নয় যে ‘খিলাড়ি কুমার’ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালেন। এর আগেও তিনি বহুবার মানবিক উদ্যোগে অংশ নিয়েছেন। চেন্নাইয়ের বন্যা, কোভিড-১৯ মহামারি, কিংবা সেনাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, সব ক্ষেত্রেই অক্ষয় তাঁর উদারতা দেখিয়েছেন। এমনকি তিনি ‘ভারত কে বীর’ উদ্যোগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা শহীদ সৈনিকদের পরিবারের সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
পঞ্জাব সরকার ভারী বৃষ্টিপাত এবং নদীর জল ফুলেফেঁপে ওঠার কারণে ২৩টি জেলাকেই বন্যা আক্রান্ত বলে ঘোষণা করেছে। প্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯০ হেক্টর কৃষিজমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, ১৪০০-রও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং এর ফলে ৩.৫ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গুরদাসপুর জেলা, যেখানে ৩২৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এরপর রয়েছে অমৃতসর (১৩৫টি গ্রাম) এবং হোশিয়ারপুর (১১৯টি গ্রাম)। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করতে কেন্দ্র সরকার দু’টি মূল্যায়নকারী দল পাঠিয়েছে।
অনেক তারকাই পঞ্জাবের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সোনু সুদ একটি হেল্পলাইন চালু করে তাঁর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। গায়ক-অভিনেতা অম্মি ভির্ক ক্ষতিগ্রস্ত ২০০টি বাড়ি পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রণদীপ হুডা সরাসরি গুরদাসপুরে গিয়ে খাদ্য এবং পানীয় বিতরণের কাজ তদারকি করেছেন। দিলজিৎ দোসাঞ্ঝ গুরদাসপুর এবং অমৃতসরের দশটি গ্রাম দত্তক নিয়ে সেখানে খাদ্য, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের সহায়তা দিচ্ছেন। এছাড়াও করন আওজলা, গুরদাস মান, বাব্বু মান, রণজিৎ বাওয়া, সতিন্দর সরতাজ ও কপিল শর্মার মতো অনেক তারকা আর্থিক সাহায্য ও মাঠপর্যায়ে কাজের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করেছেন।
