পরমা দাশগুপ্ত
এক পৃথিবী মানুষের আজ অ-সুখ। অনেকেই যে যার মতো খারাপ আছে নিজের দুনিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়া হয়তো বা অন্য ছবি দেখায়। আসলের ঝুলি খুললে বোঝা যায়, হয়তো বা তার অনেকটাই ফাঁকি। তবু তারই মধ্যে কেউ কেউ ভাল থাকার লড়াই করার সাহসটুকু দেখায়। সুখ খুঁজে ফেরে স্বপ্ন আঁকড়ে ধরে। তেমন মানুষদের গল্পই তো বলতে ভাল লাগে। সে কাজটাই করেছে পারমিতা মুন্সীর ছবি ‘আমি যখন হেমা মালিনী’। যার কেন্দ্রবিন্দুতে বিগতযৌবনা এক নারীর সুখী সুখী বাঁচার সাধ।
ছবির মালিনী (পাপিয়া রাও) নিজেকে হেমা মালিনী মনে করে। ‘ড্রিমগার্ল’-এর মতোই সে সাজে, নাচে, গায়। আর খুঁজে বেড়ায় তার ধর্মেন্দ্রকে। সবটাই শেষ সম্বল গয়নাটুকুর ভরসায়। কারণ স্বামীহারা মধ্যবয়সিনীর যে নিজের বাড়িটুকুও নেই। অন্যের বাড়িতে সে কেয়ারটেকার হয়ে থাকে।
এহেন হেমা মালিনী একদিন তার ধর্মেন্দ্রকে খুঁজে পায়। জরাজীর্ণ এক হোমিওপ্যাথির ক্লিনিক চালানো ডাক্তার ধর্মেন্দ্র দত্ত (চিরঞ্জিত চক্রবর্তী)। রোগী হয়ে তার নাগাল পেয়ে সুখী সংসারের স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে মালিনী। এদিকে, ধর্মেন্দ্র ভুগছে কঠিন হৃদরোগে, অপারেশনের টাকাটুকুও তার হাতে নেই। শেষমেশ কি মিলন হবে দু’জনের? সে উত্তর পাবেন ছবিতে।
এ কাহিনি অবশ্য শুধু হেমা মালিনী আর তার ধর্মেন্দ্রর নয়। ধর্মেন্দ্রর ক্লিনিকে তার সহযোগী ইন্দ্রাণীরও (কাঞ্চনা মল্লিক)। ছাপোষা রোজনামচায় বসে অভিনয়ে নাম কুড়োনোর স্বপ্ন দেখা ইন্দ্রাণীর জীবন জুড়ে ছোট-বড় নানা সংগ্রাম। তবু সে রোজ আশাতেই বাঁচে।
এ গল্প উঠতি পরিচালক মানিক মুখার্জিরও (রাহুল অরুণোদয় ব্যানার্জি)। সে-ও বানিয়ে ফেলতে চায় স্বপ্ন দেখার ছবি। তার ছবির নায়িকাও যে হেমা মালিনী হতে চায়। কিন্তু ছবি তৈরির পথে অনেক বাধা, অনেক লড়াই। সে সব পেরিয়ে ছবিটা কি করা হয়ে উঠবে। সেই উত্তর খুঁজতে মানিক হাজির হয় জ্যোতিষী তথা ট্যারো কার্ড রিডার রোশনির (রোশনি দত্ত) কাছে।
নতুন এফএম স্টেশনের মালিক শেখর ঘোষ (ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়) আবার যৌনতা-নির্ভর কনটেন্টে ভর করে সেরা হওয়ার দৌড়ে নাম লেখাতে চায়। কারণ, তার নিজের জীবনে যৌনতাই যে অ-সুখের কারণ।
ছবি জুড়ে এমন টুকরো টুকরো গল্প বুনেছেন পারমিতা। যার মাঝখানটিতে বলিউডের চিরকালীন ড্রিমগার্ল চুপিসাড়ে দাঁড়িয়ে থাকেন স্বপ্ন হয়ে। কখনও মালিনী আর ধর্মেন্দ্রর প্রেমে-অপ্রেমে। কখনও বা মানিকের ছবি-বিলাসে। আর এই অন্যরকম ভাবনাটাই একটা আলাদা স্বাদ-গন্ধ বুনে দেয় ‘আমি যখন হেমা মালিনী’র রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
অভিনয়ে চিরঞ্জিত প্রায় একার কাঁধেই টেনে নিয়ে গিয়েছেন এ ছবিকে। হেমা মালিনী হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ পাপিয়াকেও ভাল লাগে। কাঞ্চনা, রাহুল, ভাস্বরেরা চোখ টানেন যে যার পরিসরে, নিজের মতো করে। ছোট্ট ছোট্ট চরিত্রে দেখা গিয়েছে চৈতী ঘোষাল, দেবলীনা দত্তদের। যদিও সংক্ষিপ্ততম উপস্থিতিতে তাঁদের বিশেষ কিছুই করার ছিলনা।
তবে এত চরিত্রের ভিড়ে, তাদের নিজস্ব গল্পগুলো বড্ড গা ঘেঁষাঘেঁষি করে। সাবপ্লটের ধাক্কাধাক্কিতে খাপছাড়া লাগে গল্পের বাঁধুনি। পাশাপাশি গল্পের বুননে, সংলাপে যৌনতার প্রাধান্য খানিকটা একঘেয়ে ঠেকে। এমন না হলে হয়তো আরও খানিকটা উপভোগ্য লাগত ছবিটা। তবে খামতি যেটুকুই থাক, ভাবনার নতুনত্বকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। সেখানেই পারমিতার জিত।
