আজকাল ওয়েবডেস্ক: বুধবার ভারতের শেয়ারবাজারে বেঞ্চমার্ক সূচকগুলো উর্ধ্বমুখী ধারায় বন্ধ হয়েছে। দুপুরের পর থেকে শুরু হওয়া র্যাোলিটি দিনশেষেও বজায় থাকে, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতের শেয়ারগুলোর জোরে। বিশ্বের বাজারে ইতিবাচক মনোভাব, বিশেষত মার্কিন বাজারে আশাবাদী প্রবণতা, ভারতীয় বাজারকেও প্রভাবিত করেছে।
বুধবার মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্স ৫৯৫.১৯ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ৮৪,৪৬৬.৫১-এ বন্ধ হয়। অন্যদিকে, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নিফটি ১৮০.৮৫ পয়েন্ট বেড়ে ২৫,৮৭৫.৮০-এ শেষ হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “বিশ্বের শেয়ারবাজারে ঝুঁকি নেওয়ার আগ্রহ নতুন করে জেগে উঠেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য সরকারী শাটডাউন সমাধানের আশাবাদ এবং একই সঙ্গে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা নিয়ে বাড়তে থাকা প্রত্যাশা।” তিনি আরও জানান, মার্কিন শ্রমবাজারে শীতলতার ইঙ্গিতও বিনিয়োগকারীদের মনোবল বাড়াতে সহায়তা করেছে।
উদীয়মান বাজারগুলো এই ইতিবাচক মনোভাবের কারণে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ভালো পারফর্ম করেছে। ভারতীয় বাজারও সেই সুরেই এগিয়েছে, যেখানে বড়-মাপের কোম্পানির শেয়ারগুলো মূল ভূমিকা রেখেছে। বিশেষত, অটোমোবাইল, আইটি এবং ফার্মা খাতে শক্তিশালী অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে।
দেশের ম্যাক্রো অর্থনৈতিক ভিত্তি অত্যন্ত সহায়ক অবস্থানে রয়েছে। খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের মূল্যস্ফীতি (CPI এবং WPI) ক্রমান্বয়ে কমছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি দৃঢ়, এবং চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে কর্পোরেট আয়ের প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশাও ইতিবাচক। এসব কারণই বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাকে টেকসই করছে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্বের পরিস্থিতির উন্নতি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ায় ভারতের শেয়ারবাজারে আগামী দিনগুলোতেও স্থিতিশীল ইতিবাচক ধারা বজায় থাকতে পারে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বিনিয়োগকারীদের মনে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে। পাশাপাশি, ভারতীয় অর্থনীতির কাঠামোগত শক্তি এবং সরকারিভাবে প্রণীত বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালাও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এদিনের লেনদেনে আইটি খাত ছিল সবচেয়ে বড় অবদানকারী। ইনফোসিস, টিসিএস, উইপ্রো এবং এইচসিএল টেকের মতো শেয়ারগুলিতে শক্তিশালী ক্রয় দেখা যায়। অটো খাতে মারুতি সুজুকি, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা এবং টাটা মোটরসের শেয়ারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফার্মা খাতের মধ্যে সান ফার্মা ও ডিভিজ ল্যাবস ভালো পারফর্ম করেছে।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় মাপের শেয়ার বা ব্লু-চিপ স্টকে বিনিয়োগই বেশি নিরাপদ হতে পারে, কারণ এসব কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি দৃঢ় এবং তারা বিশ্বের অনিশ্চয়তার মধ্যেও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম।
অন্যদিকে, বাজারে কিছুটা মুনাফা তোলার প্রবণতা দেখা গেলেও সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব ইতিবাচকই রয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হতে যাওয়া মুদ্রাস্ফীতি ও শিল্প উৎপাদনের তথ্যের উপরও বাজারের দৃষ্টি থাকবে। এসব সূচক যদি ইতিবাচক থাকে, তাহলে বছরের শেষ প্রান্তিকেও বাজারে নতুন উচ্চতা দেখা যেতে পারে।
বিশ্বের মনোভাবের উন্নতি, আইটি খাতের জোরদার পারফরম্যান্স এবং দেশীয় অর্থনীতির মজবুত ভিত—এই তিন উপাদানই বুধবার ভারতীয় শেয়ারবাজারে দৃঢ় ঊর্ধ্বগতি আনতে সহায়ক হয়েছে।
