আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারতীয় টাকার অভাবনীয়ভাবে দুর্বল ও অস্থির হয়ে উঠেছে, মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইতিহাসের নিম্নতম স্তরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ২০২৫ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত, ডলার-রুপি বিনিময় হার ৮৮.৬১ থেকে ৮৮.৮০ এর মধ্যে ওঠানামা করেছে—যা সেপ্টেম্বরে রেকর্ড হওয়া ৮৮.৯৭–এর সর্বনিম্ন স্তরের একেবারে কাছাকাছি।
গত এক মাসে টাকা মূলত ৮৭.৮ থেকে ৮৮.৮ প্রতি ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছে—অল্প কিছুটা শক্তিশালী হলেও, এটি এখনও বহু বছরের নিম্নস্তরে রয়েছে। গত এক বছরে টাকার মান প্রায় ৫% কমেছে, যার মূল কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের ঝুঁকি-বিরোধী মনোভাব, শক্তিশালী মার্কিন ডলার এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করে ভারত থেকে পুঁজি প্রত্যাহার।
যদিও ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও রাজস্বনীতি কিছুটা সুরক্ষা দিচ্ছে, তবু বহিরাগত প্রভাব—বিশেষত মার্কিন সুদের হার নীতি, তেলের দাম ও বৈদেশিক বাণিজ্য উত্তেজনা—রুপির গতিবিধিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া বারবার হস্তক্ষেপ করছে যাতে রুপি ৮৮.৮০-এর নিচে না নামে। বাজারে ধারণা তৈরি হয়েছে, নিকট ভবিষ্যতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই গুরুত্বপূর্ণ স্তরটি রক্ষায় সক্রিয় থাকবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে এই পতনের মূল কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অব্যাহত বিক্রয়। “টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কমলেও, ভারতীয় বাজারে তার প্রভাব পুরোপুরি প্রতিফলিত হচ্ছে না। টাকা আরও দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা পুঁজিপ্রবাহের জন্য নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।
টাকার দুর্বলতার মূল কারণ ডলারের শক্তি, সঙ্গে রয়েছে ভারতের কিছু ত্রৈমাসিক মাইক্রো অর্থনৈতিক দুর্বলতা। যেহেতু ভারত প্রায় সম্পূর্ণভাবে আমদানি করা সোনা ও অন্যান্য পণ্যের উপর নির্ভরশীল, তাই রুপির পতনে সোনার দাম বেড়ে যায় এবং আমদানি-নির্ভর শিল্পগুলোতে মুনাফার মার্জিনে চাপ পড়ে। তবে আইটি ও ওষুধ রপ্তানিমুখী খাতগুলো এতে কিছুটা লাভবান হয়।
টাকা দুর্বল হলে সাধারণত বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনা কেনায় ঝোঁকেন। ফলে দেশে সোনার দাম বেড়ে যায়, যদিও এর প্রভাব শেয়ারবাজারে মিশ্র হয়—কিছু খাত লাভবান হয়, অন্যদিকে কিছু খাতে ক্ষতি দেখা দেয়।
সোনার দাম বনাম শেয়ারবাজারের চাপ
টাকার পতন দ্বৈত ভূমিকা পালন করছে—একদিকে এটি সোনাকে শক্তিশালী সহায়তা দিচ্ছে, অন্যদিকে শেয়ারবাজারে চাপ সৃষ্টি করছে। দুর্বল টাকা সরাসরি আমদানিকৃত সোনার খরচ বাড়িয়ে দেয়, ফলে আন্তর্জাতিক দাম স্থিতিশীল থাকলেও দেশীয় বাজারে স্বর্ণের দাম উচ্চ থাকে।
টাকা যদি ৮৯-এর নিচে নেমে যায় এবং ডলার ইনডেক্স ১০০-এর উপরে ওঠে, তাহলে টাকা ৯০ স্তর পর্যন্ত দুর্বল হতে পারে। এতে সোনার দাম ১,২৪,০০০ প্রতি ১০ গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, আর শেয়ারবাজারে বিদেশি বিক্রির চাপ আরও বাড়তে পারে।
বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরতে হলে FY27 অর্থবছরে কোম্পানিগুলির আয় পুনরুদ্ধারের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেখা দিতে হবে। তবেই বাজার মূল্যায়ন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। অতএব, দুর্বল টাকা ভারতের অর্থনীতি ও বাজারের জন্য একদিকে ঝুঁকি, অন্যদিকে সম্ভাবনা—যেখানে রপ্তানিমুখী খাত কিছুটা সুবিধা পায়, কিন্তু আমদানি-নির্ভর খাত ও বিনিয়োগ প্রবাহে বাড়ে অনিশ্চয়তা।
