আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় ফুটবলে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকল দেশ। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন উইঙ্গার রায়ান উইলিয়ামস আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
যা ভারতীয় ফুটবলে ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়া (OCI) অন্তর্ভুক্তির পথে এআইএফএফের (AIFF) প্রথম বাস্তব পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বেঙ্গালুরু এফসির তারকা ও ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রীর মাধ্যমেই উইলিয়ামসের হাতে ভারতীয় পাসপোর্ট তুলে দেওয়া হয়।
মজার বিষয় হল, এই নাগরিকত্ব হস্তান্তরের মুহূর্তটি ছিল হাস্যরস ও আনন্দে ভরা যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে।
ভারতীয় পাসপোর্ট হাতে তুলে দেওয়ার আগে ছেত্রী রায়ানকে নিয়ে এক ছোট্ট ‘ইন্ডিয়ান স্ট্রিট ফুড ও পপ কালচার কুইজ’-এর পরীক্ষা নেন।
ফুচকা থেকে শুরু করে বলিউড সব প্রশ্নের উত্তর নিখুঁতভাবে দিয়ে উইলিয়ামস মজা করে ঘোষণা করেন, ‘এখন আমি একদম আপনাদেরই একজন!’
?utm_source=ig_embed&ig_rid=7e8fe5c4-be00-4aac-a582-5de4997b6089
আর সঙ্গে সঙ্গে করতালিতে ফেটে পড়ে বেঙ্গালুরু এফসির ড্রেসিং রুম। অন্যদিকে, নেপালে জন্ম নেওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভুত ডিফেন্ডার অভনীত ভারতীও একই পথে এগোচ্ছেন।
তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের আগে বেঙ্গালুরুতে জাতীয় দলের ট্রায়াল ক্যাম্পে রয়েছেন। তাঁর পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করবে তিনি চূড়ান্ত স্কোয়াডে জায়গা পাবেন কি না।
সদ্য ভারতীয় দল সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে হেরে ২০২৭ সালের এএফসি এশিয়ান কাপে খেলার সুযোগ হারিয়েছে। তারপর থেকে নতুন করে দল সাজানোর পরিকল্পনা করছেন কোচ খালিদ জামিল।
এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবে এর আগে বহুবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি ফুটবলারদের খুঁজে বের করার কথা বলেছেন, আর এবারই প্রথম সেই পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
দ্য টেলিগ্রাফ সূত্রে জানা গেছে, চৌবেই নিজে দুই খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো দ্রুত কাগজপত্রের কাজ শেষ করতে সচেষ্ট রয়েছে।
অন্যদিকে, ইএসপিএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রায়ান উইলিয়ামস এখন কেবল অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলের থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC)-এর অপেক্ষায় রয়েছেন।
যা এক সপ্তাহের মধ্যেই আসার কথা। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে একবার মাঠে নামা এই উইঙ্গার গত এক বছর ধরে ভারতের নাগরিকত্বের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন, কারণ দ্বৈত নাগরিকত্ব ভারতীয় আইনে অনুমোদিত নয়।
উইলিয়ামসের ভারতীয় যোগসূত্র তাঁর মায়ের মাধ্যমে, যিনি মুম্বইয়ে এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ২০২৩ সালে পার্থ গ্লোরি ছেড়ে তিনি বেঙ্গালুরু এফসিতে যোগ দেন এবং এরপর থেকেই পরিবারসহ ভারতে বসবাস শুরু করেন।
তাঁর যমজ ভাই অ্যারিন উইলিয়ামসও ২০১৭ সালে নেরোকা এফসির হয়ে খেলার সময় ভারতের হয়ে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারিতে সেই স্বপ্ন থেমে যায়।
মাঠে উইলিয়ামসের গতি, আক্রমণাত্মক ফুটবল ও ফিনিশিং দক্ষতা ভারতের জন্য এক বড় ঘাটতি পূরণ করতে পারে। খালিদ জামিলের দলে আক্রমণভাগে উইলিয়ামস হতে পারেন এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
অন্যদিকে, ইএসপিএনের তথ্য অনুযায়ী, অভনীত ভারতীকে আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে দলে ডাকা হয়েছে। ক্যাম্পে তাঁর পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করবে জাতীয় দলে ভবিষ্যৎ অন্তর্ভুক্তি।
অভনীত ভারতীয় পাসপোর্টধারী, ফলে তিনি ভারত ও নেপাল দুই দেশের পক্ষেই খেলার যোগ্য। দিল্লির শাস্ত্রী এফসি থেকে ফুটবল কেরিয়ার শুরু করে ১৪ বছর বয়সে তিনি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন গাইলাং ইন্টারন্যাশনালের অ্যাকাডেমিতে।
এরপর তিনি খেলেছেন পোল্যান্ড, পর্তুগাল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, চেক প্রজাতন্ত্র এবং বর্তমানে খেলেন বলিভিয়ার ক্লাব অ্যাকাডেমিয়া ডেল ব্যালমপাই বলিভিয়ানোতে।
ভারতে খেলার তাঁর একমাত্র সংক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতা ছিল কেরালা ব্লাস্টার্সের হয়ে। ভারতের রক্ষণভাগও বর্তমানে ট্রানজিশনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সন্দেশ ঝিঙ্গান কেরিয়ারের শেষ ভাগে পৌঁছেছেন।
এমন সময়ে বিদেশে খেলার অভিজ্ঞতা ও বহুমুখী ডিফেন্সিভ দক্ষতা নিয়ে ভারতীর আগমন কাজে লাগতে পারে।
জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হবে বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুতে, বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৮ নভেম্বর ঢাকায় ম্যাচের আগে। যদি উইলিয়ামস ও ভারতী দুজনেই চূড়ান্ত দলে জায়গা পান তাহলে তা ভারতীয় ফুটবলে ইতিহাস তৈরি করবে।
