আজকাল ওয়েবডেস্ক: অনেক নতুন বিনিয়োগকারী তাদের আর্থিক যাত্রার শুরুতে ভিন্ন ভিন্ন বিনিয়োগ বিকল্প নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। কেউ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন, আবার কেউ তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল আয়ের আশায় মিউচুয়াল ফান্ড বেছে নেন। মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে যারা নতুন, তাদের জানা জরুরি যে বিনিয়োগের পথ অনুযায়ী মিউচুয়াল ফান্ড দুটি বড় ভাগে বিভক্ত—রেগুলার মিউচুয়াল ফান্ড এবং ডাইরেক্ট মিউচুয়াল ফান্ড।
রেগুলার মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণত একজন ডিস্ট্রিবিউটর, এজেন্ট বা অ্যাডভাইজরের মাধ্যমে কেনা হয়। বিপরীতে ডাইরেক্ট মিউচুয়াল ফান্ড হল সেই স্কিম যা বিনিয়োগকারী নিজেই সরাসরি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম—যেমন গ্রো, জিরোধা অথবা AMC–র ওয়েবসাইট থেকে কেনেন। দুই ক্ষেত্রেই ফান্ড স্কিম একই থাকে; পরিবর্তন হয় শুধু বিনিয়োগের পথ বা রুট।
রেগুলার বনাম ডাইরেক্ট: কোনটি বেশি লাভজনক?
বিনিয়োগকারীদের জন্য ডাইরেক্ট মিউচুয়াল ফান্ড তুলনামূলক বেশি লাভজনক কারণ এতে এক্সপেন্স রেশিও কম থাকে। ডিস্ট্রিবিউটরের কমিশন বাদ পড়ে যাওয়ায় ফান্ড খরচ কমে এবং এর ফলে বিনিয়োগকারী দীর্ঘমেয়াদে বেশি রিটার্ন পান। অন্যদিকে রেগুলার মিউচুয়াল ফান্ডে ডিস্ট্রিবিউটর বা এজেন্টকে কমিশন দিতে হওয়ায় এক্সপেন্স রেশিও বেশি হয়, ফলে নেট রিটার্ন কিছুটা কমে যায়।
তবে এর অর্থ এই নয় যে রেগুলার ফান্ড অপ্রয়োজনীয়। বরং যারা নতুন, সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা পান বা নিজে গবেষণা করার মতো সময় পান না—তাদের জন্য রেগুলার ফান্ডই নিরাপদ ও সুবিধাজনক।
কারা রেগুলার মিউচুয়াল ফান্ড বেছে নেবেন?
১. পুরোপুরি নতুন বিনিয়োগকারী: যারা মিউচুয়াল ফান্ড বা বিনিয়োগ সম্পর্কে খুব কম জানেন, এবং কোথা থেকে শুরু করতে হবে তা বুঝে উঠতে পারেন না। তাদের জন্য ডিস্ট্রিবিউটরের গাইডেন্স অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
২. বহু অ্যাসেট ক্লাসে বিনিয়োগকারী: যাদের ইতিমধ্যেই শেয়ার, বন্ড, রিয়েল এস্টেট ইত্যাদির মতো একাধিক অ্যাসেটে বিনিয়োগ রয়েছে এবং সময়ের অভাবে নিজেদের গবেষণা করা হয় না; তারা রেগুলার ফান্ডের সাহায্য নিলে সুবিধা পান।
৩. যারা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে বিনিয়োগে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন: অনেক বিনিয়োগকারী তাদের অ্যাডভাইজরের পরামর্শেই আর্থিক সিদ্ধান্ত নেন। তারা সরাসরি বিনিয়োগে আগ্রহী নন এবং একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চান—তাদের জন্য রেগুলার ফান্ড উপযুক্ত।
কারা ডাইরেক্ট মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করবেন?
১. যারা কমিশন বাঁচাতে চান: ব্রোকার বা ডিস্ট্রিবিউটরের কমিশন না দিয়ে সরাসরি বিনিয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্ন পেতে চান।
২. যারা বিনিয়োগের মৌলিক ধারণা রাখেন: NAV, ফান্ড ক্যাটাগরি, ঝুঁকির স্তর, SIP–এর কার্যপদ্ধতি—এসব মৌলিক জ্ঞান যাদের আছে, তারা বিনা সহায়তায়ই ডাইরেক্ট ফান্ড বেছে নিতে পারেন।
৩. অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীরা: যাদের ইতিমধ্যেই Groww, Zerodha বা অন্যান্য ব্রোকিং প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তারা খুব সহজেই এই অ্যাপগুলির মাধ্যমেই ডাইরেক্ট ফান্ড কিনতে পারেন। এতে আলাদা করে প্রতিটি AMC–র ওয়েবসাইটে যেতে হয় না।
রেগুলার এবং ডাইরেক্ট—উভয় ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডই উপকারী, তবে বিনিয়োগকারীর অভিজ্ঞতা, সময়, জ্ঞান এবং সুবিধা–অসুবিধা বিবেচনা করে সঠিক বিকল্প বেছে নেওয়াই শ্রেয়। নতুনদের জন্য হাতে–কলমে সহযোগিতা পেতে রেগুলার ফান্ড ভালো, আর অভিজ্ঞ বা প্রযুক্তি–সচেতন বিনিয়োগকারীদের জন্য ডাইরেক্ট ফান্ড সবচেয়ে লাভজনক সিদ্ধান্ত হতে পারে।
