আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে নিজের বাড়ি থাকা বহুদিন ধরেই জীবনের এক বড় মাইলফলক হিসেবে দেখা হয়। সমাজে প্রচলিত ধারণা হল—যে নিজের বাড়ি কিনেছে, সে জীবনে “স্থির” হয়েছে। কিন্তু আজকের প্রজন্ম এই মানসিকতাকে নতুন করে প্রশ্ন করছে—বিশেষ করে সেই চাপকে, যা তরুণদের খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি কেনার দিকে ঠেলে দেয়, অনেক সময় আর্থিক ঝুঁকি না বুঝেই।


ভাড়া বনাম EMI: স্বাধীনতা না বন্ধন?
আজকের তরুণ পেশাজীবীদের প্রায়ই বলা হয়—ভাড়া দেওয়া মানে টাকা নষ্ট করা। কিন্তু এই ধারণার আগে একবার ভেবে দেখা দরকার। ভাড়ার টাকা প্রতি মাসে খরচ হলেও, তা এক ধরনের স্বাধীনতা দেয়। অন্যদিকে, বাড়ির ঋণ মানে হল এক দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক বন্ধন। একবার আপনি হোম লোনের কাগজে সই করলেই, আপনার সঞ্চয়, চাকরির সিদ্ধান্ত, এমনকি জীবনযাত্রার ধরনও EMI ঘিরেই আবর্তিত হয়।


যে প্রশ্নগুলো আমরা করি না
বেশিরভাগ মানুষ হিসাব করে দেখে—প্রতি মাসে EMI দেওয়া যাবে কি না। কিন্তু খুব কমই কেউ ভাবে—যদি আয় বন্ধ হয়ে যায় বা পরিস্থিতি বদলে যায়, তখন কী হবে? ভারতে একটি বাড়ি শুধু সম্পত্তি নয়, এটি জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। পরিবারের পরিকল্পনা, ক্যারিয়ার সিদ্ধান্ত—সব কিছুই বাড়ির চারপাশে ঘোরে।


১৫–২০ বছরের ঋণের দায় নিলে ক্যারিয়ার বদলানো, ব্যবসা শুরু করা, কিংবা নতুন ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। এমনকি সঞ্চয়ও প্রায়ই EMI-এর নিচে চাপা পড়ে যায়। অনেক সময় বাড়ি কেনা হয় সমাজের চাপ বা পারিবারিক প্রত্যাশা থেকে—কারণ “নিজের বাড়ি মানেই সফলতা” এই ধারণা গভীরে গেঁথে গেছে।


নিজের বাড়ি থাকা মানে আর্থিক স্বাধীনতা নয়। নিজের সিদ্ধান্তের মালিক হওয়াই আসল স্বাধীনতা। অর্থাৎ, প্রশ্নটা আর শুধু “আমি কি EMI দিতে পারব?” এই সীমায় আটকে নেই। বরং এখন প্রশ্নটা হওয়া উচিত—“আমি কি সেই জীবনধারা বহন করতে পারব, যা এর সঙ্গে আসে?” ভারতের তরুণ প্রজন্মের কাছে এ এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে বাড়ি কেনা শুধু আর্থিক নয়, জীবনের পথনির্ধারণের সিদ্ধান্তও বটে।