আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে সোনার দাম উৎসবের সিজনের শুরুতেই নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে চলেছে। ধনতেরাসের ঠিক আগে দেশীয় বাজারে সোনার দাম আবারও রেকর্ড ছোঁয়ার পথে। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার উত্থানের জেরে দেশীয় বুলিয়ন বাজারেও দাম বেড়েছে দ্রুতগতিতে।


১৫ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে পৌঁছেছে ১,২৮,৩৬০ টাকায়। ২২ ক্যারেট সোনার দাম ১,১৭,৬৬০ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট সোনার দাম ৯৬,২৭০ টাকা। অর্থাৎ, সোনার সব ক্যাটেগরিতেই বুধবার বড় উত্থান দেখা গেছে। ২৪ ক্যারেট সোনার দাম এখন ১.৩ লক্ষের সীমা স্পর্শ করতে চলেছে — যা ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সর্বোচ্চ স্তর।


বিশ্ববাজারে এই বছর সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দাম বেড়েছে ৫৮% থেকে ৮০% পর্যন্ত যা পণ্যবাজারে অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স। এই তীব্র উত্থানের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে:
বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ধারাবাহিক সোনা কেনা,
গোল্ড-ভিত্তিক ETF-এ বিনিয়োগ বৃদ্ধি,
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের ধারাবাহিক সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত।

আরও পড়ুন: বিহারে প্রথম দফার ভোটে ৫৭ জনের প্রার্থীতালিকা দিল জেডিইউ, আরও অস্বস্তিতে এনডিএ শিবির


এছাড়াও, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক চাপের সময় সোনার “নিরাপদ আশ্রয়” হিসেবে চাহিদা আরও বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে নতুন বাণিজ্য উত্তেজনা, ফেডের ওপর রাজনৈতিক চাপ এবং মার্কিন সরকারের আংশিক শাটডাউনের ফলে আতঙ্কিত। পাশাপাশি, অতিরিক্ত সরকারি ঋণের বিপরীতে “ডিবেসমেন্ট ট্রেড” হিসেবে অনেকেই সোনায় বিনিয়োগ করছেন।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে, আর সেটাই সোনা ও রুপোর বুলিশ ট্রেন্ডকে জোরদার করছে। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদে অর্থ স্থানান্তর করছেন। মার্কিন-চিন বাণিজ্য দ্বন্দ্ব এবং সয়াবিন আমদানিতে পাল্টা প্রতিশোধের হুমকি বিনিয়োগকারীদের আরও সতর্ক করেছে।”


এছাড়া মার্কিন সরকারের শাটডাউন অর্থনৈতিক আস্থাকে নষ্ট করেছে। তাছাড়া, ফেড চেয়ার জেরোম পাওয়েল কর্মসংস্থান হ্রাসের ইঙ্গিত দিয়ে বছরের মধ্যে আরও সুদহার কমার সম্ভাবনার কথা বলেছেন। এই সব কারণ মিলিয়ে সোনার দাম বাড়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।


ধনতেরাসের আগে সোনা কেনা উচিত?
যাঁদের ক্রয় ধনতেরাস, বিয়ে বা উপহার দেওয়ার মতো সাংস্কৃতিক উপলক্ষের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের কাছে আবেগ ও ঐতিহ্যের গুরুত্ব মূল্যবৃদ্ধির চেয়ে বেশি। তাই দাম যাই হোক, উৎসবের আনন্দে সোনা কেনা বন্ধ হবে না। তবে যারা যাঁরা বিনিয়োগ হিসেবে সোনা কিনছেন, তাঁদের একবারে বড় পরিমাণ না কিনে ধাপে ধাপে কেনা উচিত। বর্তমান বিশ্বের অনিশ্চয়তায় বাজারের দিকনির্দেশ অনুমান করা কঠিন। ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করলে টাইমিং রিস্ক কমে এবং বাজারে যুক্ত থাকার সুযোগ বজায় থাকে।


বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেডের ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণ, বিশ্বের মন্দার আশঙ্কা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সোনার দামকে আরও কিছুদিন উচ্চ পর্যায়ে রাখবে। তাই এই ধনতেরাসে সোনা কেনা কেবল ঐতিহ্যের অংশ নয় — অনেকের কাছে এটি হয়ে উঠছে এক কৌশলগত বিনিয়োগেরও প্রতীক।