আজকাল ওয়েবডেস্ক: চলতি অর্থবছরে ভারতে জাল ৫০০ টাকার নোটের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক বিষয়ক দফতরের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২,০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ার এক বছরের মাথায় ৫০০ টাকার নোটই এখন জাল নোট চক্রের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে।
তথ্য অনুসারে, নতুন মহাত্মা গান্ধী সিরিজের জাল ৫০০ টাকার নোট শনাক্ত হয়েছে ১,১৭,৭২২টি, যা ২০২৩–২৪ সালের ৮৫,৭১১টির তুলনায় প্রায় ৩৮ শতাংশ বেশি। ২০২২–২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯১,১১০টি। অর্থাৎ পরপর তিন বছর ধরে ৫০০ টাকার নোটে জালিয়াতির প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২,০০০ টাকার নোট বাতিলের পর উচ্চমূল্যের লেনদেনে ৫০০ টাকার ব্যবহার বাড়ায় অপরাধীরা এখন এই নোটকেই জাল মুদ্রা তৈরির প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে।
এদিকে নিম্ন মূল্যমানের নোটগুলোর চিত্র মিশ্র। ১০০ টাকার নোটে জালিয়াতির ঘটনা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। ২০২০–২১ সালে যেখানে ১,১০,৭৩৬টি জাল নোট ধরা পড়েছিল, ২০২৪–২৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫১,০৬৯— প্রায় অর্ধেকেরও কম। তবে বিপরীতে ২০০ টাকার নোটে সনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে। একই সময়ে জাল ২০০ টাকার নোট ২৪,২৪৫টি থেকে বেড়ে হয়েছে ৩২,৬৬০।
সামগ্রিকভাবে, দেশের সব ধরনের নোট মিলিয়ে জাল মুদ্রা সনাক্তের সংখ্যা কিছুটা কমলেও উদ্বেগ কমেনি। ২০২১–২২ সালে যেখানে মোট শনাক্ত হয়েছিল ২,৩০,৯৭১টি, ২০২৪–২৫ সালে তা কমে হয়েছে ২,১৭,৩৯৬টি। মোট শনাক্তের সংখ্যা সামান্য কমলেও ৫০০ টাকার নোটের আধিপত্য উল্লেখযোগ্য।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, পুরনো মহাত্মা গান্ধী সিরিজের ৫০০ টাকার নোট প্রায় বাজার থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই পুরনো সিরিজের মাত্র পাঁচটি জাল নোট শনাক্ত হয়েছে— যা প্রমাণ করে নতুন সিরিজের নোটই এখন জাল চক্রের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।
অর্থনীতিবিদদের মতে, নোটবন্দির পরে নতুন সিরিজ চালু হলেও আন্তর্জাতিক জাল মুদ্রা চক্র এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নকলকারীরা প্রযুক্তিগতভাবে আরও দক্ষ হয়ে উঠেছে। উচ্চমানের স্ক্যানিং ও প্রিন্টিং প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য অনুকরণ করা আগের তুলনায় সহজ হয়ে গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা ও উন্নয়ন করা হয়। আরবিআই আইনের ২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, নোটের নকশা, নিরাপত্তা সুতা, জলছাপ, কালির ধরন, মাইক্রোপ্রিন্ট ইত্যাদি পরীক্ষা করে প্রয়োজনে নতুন নকশা ও উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা হয়। মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, জালিয়াতদের থেকে প্রযুক্তিগতভাবে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে এই প্রক্রিয়া চলমান এবং ভবিষ্যতেও তা শক্তিশালী করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানান, জাল ৫০০ টাকার নোটের প্রচলন বাড়লে দৈনন্দিন লেনদেন, ব্যাংকিং নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তাই সচেতনতা বৃদ্ধি, ব্যাংক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নোট শনাক্তকরণ যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও নোটের নিরাপত্তাচিহ্ন সম্পর্কে আরও ওয়াকিবহাল হতে হবে।
