আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলা থেকে ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন একাধিক শ্রমিক। রাজ্য পুলিশ সুবিধার্থে নতুন হেল্পলাইন নম্বরের উদ্যোগ নিয়েছেন। বাংলা থেকে ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে সম্প্রতি অনেকে নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন। নানারকম হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে  যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁদের বা তাঁদের পরিবারের লোকজন এই সমস্যার কথা কাকে জানাবেন, কীভাবে জানাবেন, সেই বিষয়ে তাঁদের কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। 

বাংলা থেকে ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া নাগরিকরা যদি কোনও ধরণের সমস্যায় পড়েন, তাঁদের বা তাঁদের পরিবারের কাছে রাজ্য পুলিশ নতুন সমাধানের কথা বলেছেন। তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় জানানোর কথা বলা হয়েছে। এমনকি জেলার কন্ট্রোল রুমেও জানাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, পরিবারগুলির সুবিধার্থে রাজ্য পুলিশ চালু করছে একটি হেল্পলাইন। হেল্পলাইন নম্বর হল ৯১৪৭৭২৭৬৬৬ (9147727666)। খবর অনুযায়ী এই নম্বরে শুধু হোয়াটস্যাপ করা যাবে। প্রয়োজনমত মেসেজ করে প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য এখানে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তারা জানিয়েছে নিজের নাম-ঠিকানাসহ সবটা করতে হবে। এইভাবে প্রতিটি তথ্য যাচাই করে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ মাধ্যমে রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। 

দেশ জুড়ে একের পর এক রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে নিগ্রহের ঘটনা বেড়ে চলেছে। এর জেরে ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়ার জন্য এবার 'পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট' বা পিসিসি নেওয়ার ঢল নামল মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে। বিগত কয়েক মাস ধরেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে 'বাংলাদেশি' সন্দেহে পুলিশের কাছে হেনস্থা হতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের। কখনও তাঁদের ভাগ্যে জুটছে মারধর আবার কখনও 'বাংলাদেশি' তকমা দিয়ে তাঁদের জোর করে বাংলাদেশে 'পুশব্যাক' করে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ টানা একবছর লাগাতার ধর্ষণ, এরপর জ্যান্ত কবর! ওড়িশায় তরুণীর সঙ্গে যা ঘটল শুনলে গা শিউরে উঠবে...

বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা নিয়ে ইতিমধ্যে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী  ২৭ জুলাই রাজ্যের সমস্ত জেলায় 'ভাষা আন্দোলন' শুরু করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস, যার সূচনা বীরভূম জেলা থেকে মুখ্যমন্ত্রী  মমতা ব্যানার্জী নিজেই করতে পারেন।

রাজ্যের শাসক দল পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে এসে দাঁড়ালেও ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে পুলিশি হেনস্থার হাত থেকে বাঁচতে জেলা পিসিসি পোর্টালে আবেদন জানিয়ে উপযুক্ত 'পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট' নিয়ে তবেই ভিন রাজ্যে কাজে যেতে চাইছেন মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকরা। 

প্রসঙ্গত, এতদিন পর্যন্ত দেশের বাইরে কাজ করতে যেতে, সেনাবাহিনীতে যোগদান করা কিংবা অন্য রাজ্যে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার মতো কিছু কাজের জন্য সাধারণত এই 'পুলিশ ক্লিয়ারেন্স  সার্টিফিকেটের' প্রয়োজন পড়ত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের মধ্যে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার জন্য মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকরা ভরসা রাখছেন এই 'পুলিশ ক্লিয়ারেন্স  সার্টিফিকেটের' ওপর।  বৈধ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড এমনকি বাড়ি ঘরের দলিল থাকা সত্ত্বেও নিজের দেশের মধ্যেই নিজেদের ভারতীয় হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশে যথেষ্টই হতাশ এই জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা।

 পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ শহরের বাসিন্দা নাজমুল। জানা গিয়েছে জীবিকার খোঁজে নাজমুল চার মাস আগে গিয়েছিলেন হরিয়ানায়। সেখানে একটি হাউসকিপিং-এর চাকরি পেয়ে ওখানেই চলে যান। নাজমুল নিজের মা-বাবাকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন হরিয়ানায়। সব মিলিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই দিন কাটছিল তাঁদের। কিন্তু চলতি মাসের ১৯ জুলাই সেই শান্তি ভেঙে পড়ে এক আকস্মিক ঘটনায়। সেই দিনই নাজমুল ও তাঁর পরিবারের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ এক দুর্দশা।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জানা গিয়েছে, নাজমুলের অভিযোগ হরিয়ানা পুলিশ হঠাৎ করেই তাঁর বাড়িতে পৌঁছয়। তাঁদের পরিচয়পত্র দেখতে চায়। 'আমি সব পরিচয়পত্র দেখাই,' জানিয়েছেন যুবক। তবু তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় সঙ্গে যেতে বলা হয়। এরপর পুলিশ তাঁকে ও আরও কিছু বাঙলা ভাষার মানুষকে একটি গাছতলায় বসিয়ে রাখে।

জানা গিয়েছে সেখানে পুলিশ তাঁদের প্রশ্ন করে, 'তুমি কবে বাংলাদেশ থেকে এসেছ?' এই প্রশ্নে স্তব্ধ হয়ে যান নাজমুল। তিনি বলেন, 'আমি ভারতীয় নাগরিক, বনগাঁর ভোটার। আমাকে কেন বাংলাদেশি বলা হচ্ছে?' তিনি জানান। মুর্শিদাবাদ ও মালদার আরও কয়েকজন জনৈককেও একইভাবে আটক করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে বনগাঁর পুলিশ সুপার দিনেশ কুমার জানিয়েছেন, '২১ জুলাই আমরা বিষয়টি জানতে পারি। পরিবারের সদস্যরা আমাদের জানিয়েছে, এবং সঙ্গে সঙ্গেই আমরা স্থানীয়ভাবে তদন্ত শুরু করি ও সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি হরিয়ানা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিই। ২২ জুলাই আমি হরিয়ানার জোনাল ডিসিপিকে অনুরোধ করি, তারপর নাজমুলকে মুক্তি দেওয়া হয়।'