আজকাল ওয়েবডেস্ক: হঠাৎ করে তৈরি হওয়া মেঘ এবং তার থেকে হওয়া বৃষ্টিতে সম্প্রতি বেনজিরভাবে বানভাসি হয়েছিল কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকা। জমা জলে বিদ্যুতের ছেঁড়া তার পড়ে থাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন এলাকায় মৃত্যু হয়েছিল একাধিক ব্যক্তির। 


আর এবার ঘূর্ণিঝড় মান্থার ‘‌লেজের’‌ ঝাপটায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল মুর্শিদাবাদ জেলার বিস্তীর্ণ অংশ। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক স্কুল ছাত্রের। বহু এলাকায় ভেঙে পড়েছে বাড়ি। জলের তলায় ডুবে গিয়েছে বিঘার পর বিঘা চাষের জমি। 

ঘূর্ণিঝড় মান্থার প্রভাবে সম্প্রতি প্রবল বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায়। এই ঘূর্ণিঝড় ক্রমশ উত্তরবঙ্গের দিকে সরতে থাকায় শুক্রবার সন্ধে থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন অংশে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টিপাত, যা শনিবার সকালেও থামেনি। 

শুক্রবার রাতে প্রবল বৃষ্টির সময় সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে ধুলিয়ান পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিধান সরণি এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই কিশোরের নাম আবুল হাসান (১৩)। তার বাড়ি ফরাক্কার মহাদেবনগর এলাকায়। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধুলিয়ান হাইমাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবার চালানোর জন্য ওই কিশোর ধুলিয়ানের একটি সাইকেলের দোকানেও কাজ করত। শুক্রবার রাতে প্রবল বৃষ্টি চলার সময় ওই কিশোর দোকানের পাশে একটি ইলেকট্রিক পোলের গায়ে হেলান দিয়ে রাখা নিজের সাইকেলটি নিতে যায়। সেই সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়ে আবুল। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যে বিদ্যুতের খুঁটিতে আবুল নিজের সাইকেলটি ঠেস দিয়ে রেখেছিল, ঝড়ের প্রভাবে সেখানে একটি বিদ্যুৎবাহী তার ছিড়ে গিয়ে এই বিপত্তি ঘটে। বিদ্যুতের খুঁটিতে যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে ওই কিশোর বিষয়টি বুঝতে না পেরে নিজের সাইকেলটি ছুঁতেই সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। 

স্থানীয়রা আবুলকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে আবুলের পরিবারে পাঁচ ভাই এবং পাঁচ বোন রয়েছে। ইতিমধ্যেই সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশ ওই কিশোরের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। ধুলিয়ান পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুমিত সাহা বলেন, ‘‌এই ঘটনা কীভাবে ঘটল আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। ওই পরিবারের পাশে তৃণমূল কংগ্রেস সব সময় থাকবে।’‌ অন্যদিকে শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টিতে নতুন করে গঙ্গা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে সামশেরগঞ্জের উত্তর চাচন্ড এলাকায়। গঙ্গা নদীর ভাঙনে শুক্রবার গভীর রাতে সেখানে একটি আইসিডিএস কেন্দ্র ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন ওই এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই ভাঙন চলছে। নিরাপত্তার কারণে অস্থায়ীভাবে আইসিডিএস কেন্দ্রটি অন্যত্র সরানো হয়েছিল। সেই কারণে বড়সড় দুর্ঘটনায় এড়ানো সম্ভব হয়েছে। 

শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণে সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে নিমতিতা আন্ডারপাস। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন ওই আন্ডারপাসে এখন এতটাই জল রয়েছে যে তার ভেতর দিয়ে কোনও ছোট চার চাকা গাড়ি নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কিছু বাসিন্দা সাইকেলে করে অথবা হেঁটে ওই আন্ডারপাস দিয়ে যাতায়াত করছেন বলে জানা গিয়েছে। 

অন্যদিকে ‘‌মান্থা’‌ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মুর্শিদাবাদ জেলায় খারিফ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে মাঠে আমন ধান ছাড়াও  সর্ষে, বিভিন্ন রকমের শীতকালীন সবজি, টমেটো, ছোলা–সহ নানা রকম শস্য রয়েছে। শুক্রবার সন্ধে থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণের ফলে মুর্শিদাবাদ জেলার পাঁচটি মহকুমার কয়েক হাজার হেক্টর জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। 

সূত্রের খবর, প্রবল বর্ষণের ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন জঙ্গিপুর এবং সংলগ্ন লালবাগ ও কান্দি মহকুমার বিস্তীর্ণ অংশের কৃষকরা। 


সুতির কাশিমনগর এলাকার কৃষক রহমাতুল্লাহ শেখ বলেন, ‘‌আমার চাষের জমিতে ফুলকপি, টমেটো সহ কয়েক রকমের শীতকালীন সবজি লাগিয়েছিলাম। কিন্তু গতকাল রাত থেকে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে চাষের জমিতে প্রচুর জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এর ফলে সমস্ত শাকসবজি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’‌ 


জেলার বেশ কিছু প্রান্তে প্রবল বর্ষণের কারণে কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। ফরাক্কার বাহাদুরপুরে একটি কাঁচা বাড়ি ভেঙে বেশ কয়েকটি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার রাতে প্রবল বর্ষণের সময় ওই বাড়িটি ক্রমশ হেলে পড়তে থাকে। এই ঘটনা দেখতে পেয়ে বাড়ির লোকেরা কোনওক্রমে বের হয়ে আসতে পারলেও গবাদি পশুগুলোকে বের করা সম্ভব হয়নি। 

ফরাক্কা ব্যারেজ প্রকল্প আবাসনের এক বাসিন্দা জানান, ‘‌শুক্রবার রাতভর যে বৃষ্টি হয়েছে তা গত ১০ বছরে আমরা দেখিনি। মেঝের তলা থেকে জল উঠে এসে সমস্ত ঘর জলে ভরে গিয়েছে। সারারাত অনেক আবাসিক নিজেদের ঘর থেকে জল বের করেছেন।’‌