আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে বারওয়ান ব্লকে স্বাস্থ্য বন্ধু প্রকল্পের অধীনে চালু হওয়া মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট (MMU) এক উল্লেখযোগ্য সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গত ২১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগে এখনও পর্যন্ত ২৪টি স্বাস্থ্য শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে প্রায় ১১ হাজার মানুষ সরাসরি চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন। 

 

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুর্শিদাবাদের বারওয়ান ব্লকের হার্ড-টু-রিচ অর্থাৎ প্রত্যন্ত এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে বিডিও ও বিএমওএইচ-এর নেতৃত্বে সুপরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পগুলির আয়োজন করা হয়। একাধিক প্রস্তুতি বৈঠকের মাধ্যমে স্থান নির্বাচন, আগাম মাইকিং, জেলাস্তর থেকে আইটি পরিকাঠামোর জোগান এবং পঞ্চায়েত রাজ প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য দপ্তর ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা হয়। 

ক্যাম্প শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ জন মানুষ পরিষেবা গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে বয়স্ক ও প্রান্তিক মানুষজন তাঁদের দোরগোড়ায় চিকিৎসা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সাম্প্রতিকতম ২৪তম এমএমইউ ক্যাম্পটি বারওয়ান ব্লকের কুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রোহিগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। এই ক্যাম্পে রেকর্ড ১০৩২ জন মানুষের উপস্থিতি নথিভুক্ত হয়েছে। যা এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্য বন্ধু প্রকল্পের অধীনে একদিনে সর্বোচ্চ সাফল্য বলে জানা গেছে। 

 

এই শিবিরে প্রায় ২৫ জন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল দল পরিষেবা প্রদান করেন। দলে ছিলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, সাধারণ চিকিৎসক, শিশু বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র পিএইচএন, কমিউনিটি হেলথ অফিসার (CHO), অপটোমেট্রিস্ট, স্থানীয় আশা কর্মী এবং নেতৃত্বে ছিলেন বিএমওএইচ। পাশাপাশি চারজন ফার্মাসিস্ট, তিনজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও তিনজন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান চিকিৎসা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ বিতরণ ও নথিভুক্তিকরণে সহায়তা করেন। 

 

প্রশাসনের মতে, এই বিপুল সাড়ার পিছনে অন্যতম কারণ হল আশা কর্মীদের বাড়ি-বাড়ি প্রচার, স্থানীয় পঞ্চায়েতের সক্রিয় ভূমিকা এবং সুচারু প্রি-ক্যাম্প পরিকল্পনা। ক্যাম্পে বিনামূল্যে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা, ইসিজি, এনসিডি স্ক্রিনিং ও প্রয়োজনীয় ওষুধ-সহ চিকিৎসা পরিষেবা এক ছাতার তলায় দেওয়া হয়েছে। 

 

এছাড়াও রাজ্যের অন্যতম ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচি চোখের আলো প্রকল্পের অধীনে এই এমএমইউ ক্যাম্পগুলির মাধ্যমে চিহ্নিত প্রায় ৫০ জন রোগীর বিনামূল্যে ছানি অপারেশন ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে বহু মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফিরেছে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। 

 

সামগ্রিকভাবে, বুরওয়ান ব্লকে মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিটের এই উদ্যোগকে সহজপ্রাপ্য ও কার্যকর স্বাস্থ্য পরিষেবা মডেল হিসেবে স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে প্রশংসা করা হয়েছে।