গোপাল সাহা

কথায় বলে, ‘ভোটের আমি, ভোটের তুমি, ভোট দিয়ে যায় চেনা’! সেই ভোট নিয়ে যখন রাজনীতির আঙিনা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তখন সাধারণ মানুষ নাকাল হয়। এ বার দোসর হয়েছে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)। ফলে রাজনৈতিক চাপানোতরে মাত্রা বেড়েছে আরও।

অক্টোবর মাসের ২৭ তারিখ, জাতীয় নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) ঘোষণা করল ভোটার তালিকা সংশোধন এবং স্বচ্ছ করার জন্য শুরু হবে এসআইআর প্রক্রিয়া। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১২টি রাজ্যে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০০২ সালের ২৩ বছর পর। ২০০২ সালে দেশে বিজেপি সরকার, প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি এবং পশ্চিমবঙ্গের বাম সরকার, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই সময় এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে চাপানোতর ছিল যথেষ্ট। সেই প্রক্রিয়ায় প্রায় ২৯ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছিল তালিকা থেকে।

২০২৫-এর এসআইআর প্রক্রিয়ায় বঙ্গ রাজনীতির সুর শুধু সপ্তমে পৌঁছেছে। ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাবে, এই আতঙ্কে বহু মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। পাশাপাশি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে পূর্ব বর্ধমানের একজন বিএলও-র মানসিক চাপের কারণে মৃত্যু হয়েছে। জানা যাচ্ছে, বহু মানুষ এসআইআর আতঙ্কে ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সেই কারণে এসআইআর যাতে আরও সরলীকরণ করা যায় এবং মানুষ যাতে আতঙ্কিত না হন, মানুষের মধ্যে যে ভয় তৈরি হয়েছে তা দূর করা যায়, সেই উদ্দেশ্যে কেন্দ্র এবং নির্বাচন কমিশনকে একাধিকবার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তবে, তাতে কোনও ফল মিলেছে কি না তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু রাজনীতি হয়েছে ষোল আনা।

সোমবার রাজ্যের নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরের এক আধিকারিক সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, এনুমারেশন ফর্মে ছবির ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়। ছবির বিষয়টি ভোটারের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। বিএলও এবং বিএলএ-র বিরুদ্ধে এখনও কোনও এফআইআর জমা হয়নি বা শোকজ করা হয়নি। যদি কোনও অভিযোগ দায়ের হয় এবং তা প্রমাণিত হয় তাহলে কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও)-কে। প্রয়োজনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। 

রাজ্যের নির্বাচন কমিশন সূত্রে আরও খবর, প্রতিটি এলাকায় বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)-কে অবশ্যই প্রতিটি বাড়ি যেতে হবে। কোনও জায়গায় বসে ফর্ম বিলি করা চলবে না। 

এসআইআর শুরুর পর থেকেই বিজেপির অভিযোগ, মানুষের মনে ভয়ের সঞ্চার করছে তৃণমূল। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেই দাবি করছে শাসকদল। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের মুখপাত্ররা একাধিকবার জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি দেখা উচিত নির্বাচন কমিশনের। তৃণমূল এর সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত নয়। এটি তৃণমূল বা রাজ্য সরকারের দেখার কাজও নয়। কারণ, গোটা বিষয়টি নির্বাচন আধিকারিকের আওতাভুক্ত। 

তৃণমূল দাবি করেছে, রাজ্য সরকারকে বদনাম করার জন্য মানুষের মনে ভয়ভীতি ধরিয়ে রাজ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে বিজেপি। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি রাজ্যে ‘এসআইআর’-এর ভয় দেখিয়ে একটা অরাজকতা তৈরি করার প্রবল চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে এই সুযোগে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে পারে, কিন্তু আদতে তা সম্ভব হবে না। 

এই বিষয়ে রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “এই এসআইআর-এর জন্য বিজেপি বিপাকে পড়বে। তাদের ভোটব্যাঙ্ক নষ্ট হবে। কারণ, এসআইএর-এর জন্য বহু সংখ্যক মতুয়াদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে। বিজেপি নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনেছে।”

অন্যদিকে, সোমবার রাজ্যের নির্বাচন আধিকারিক দপ্তরে ডেপুটেশন দিতে উপস্থিত হয়েছিলেন সিডিউল কাস্ট ফেডারেশন ও মতুয়া ধর্ম মহাসঙ্ঘের প্রতিনিধিরা। তাদের মূল বক্তব্য, এসআইআর-কে সরলীকরণ করতে হবে এবং রাজ্যের মানুষের সুরক্ষা দিতে হবে। এর পাশাপাশি মমতাবালা ঠাকুরের অনশনের দিকেও নজর দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে কমিশনকে।