গোপাল সাহা: ২২০৮ টি বুথে যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল এবং এনুমারেসন ফর্ম বিতরণ ও জমা নিয়ে যে শুন্য সংখ্যা জানানো হয়েছিল সেই পরিমাণ বর্তমানে কমে গিয়েছে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তর সূত্রে খবর ২২০৮ টি বুথের বদলে কমে গিয়ে বর্তমানে ৪৮০ টি বুথ সংখ্যায় এসে দাঁড়িয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর এই সংখ্যাটা দু-একদিনের মধ্যে শূন্যতে এসে দাঁড়াবে। পূর্বে যা ভোটার সংখ্যা এবং যে পরিমাণ ফর্ম বিতরণ হয়েছে সবটাই পূরণ হয়ে জমা এসেছিল। এবার সেই সংখ্যাটা কমে গিয়ে ৪৮০ টি বুথের সংখ্যা এসে দাঁড়াল। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর সেটি দু একদিনের মধ্যে সংখ্যাটা শূন্যতে পরিণত হবে।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক দপ্তর সূত্রে আরও খবর, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তিনজন আধিকারিক এই মুহূর্তে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরে পৌঁছেছেন এবং সরাসরি বৈঠকে বসবেন সি ইউ ও মনোজ আগরওয়াল ও ইলেকট্রোরাল রোল অবসার্ভার সুব্রত গুপ্ত সঙ্গে। মূলত রাজ্যের এস আই আর প্রক্রিয়ায় বিএলও দের কাজ এবং তথ্য আপলোড নিয়ে সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হবে বলে সূত্রের খবর।
সোমবারই ওই সব জেলার কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ওই সংক্রান্ত রিপোর্ট এসেছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, বিলি হওয়া সব এনুমারেশন ফর্ম পূরণ হয়ে ফেরত এসেছে, এমন বুথের সংখ্যা ২,২০৮ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৮০-তে। সব চেয়ে বেশি এ রকম বুথ রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। ওই জেলার রায়দিঘিতে ৬৬টি, কুলপিতে ৫৮টি, মগরাহাটে ১৫টি এবং পাথরপ্রতিমায় ২০টি বুথে সব ফর্ম পূরণ করার পরে ফেরত এসেছে। অর্থাৎ সেখানে গত এক বছরে কোনও ভোটারের মৃত্যু হয়নি। কেউ স্থানান্তরিতও হননি।
কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্যে এমন বহু বুথও রয়েছে, যেখানে হাতে গোনা কয়েকটি এনুমারেশন ফর্ম পূরণ হয়ে ফেরত আসেনি। বাকি প্রায় সমস্ত ফর্মই জমা পড়েছে। একটি মাত্র ফর্ম ফেরত আসেনি, রাজ্যে এমন বুথের সংখ্যা ৫৪২। দু’টি ফর্ম জমা পড়েনি এমন বুথ রয়েছে ৪২০টি। সেই হিসাবও প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, ২৮০৮ টি বুথের বিষয়টি নির্বাচন কমিশন এআই এর মাধ্যমে ডিটেক্ট করে এবং পরবর্তীতে ম্যানুয়ালি সেটাকে নজরদারি এবং ডেটা এন্ট্রি মাধ্যমে স্বচ্ছতা সামনে আনে এবং সংখ্যাটি এসে দাঁড়ায় ৪৮০ টি বুথে।
উল্লেখযোগ্য আরও বিষয়, রাজ্যে মূলত তিনটি জেলার তিনটি কেন্দ্রে - কুচবিহারের দিনহাটা- যেখানে পার্ট নম্বর ১১০ এর ৭৮২টি ভোটার সংখ্যা , যেখানে সবকটিই প্রযেনি ম্যাপিং হয়েছে। অর্থাৎ যেখানে কোন ২০০২ সালের ভোটার নেই। প্রত্যেকেই নতুন ভোটার এবং তাদের পরিবারের বাবা-মা কিংবা ঠাকুমা কেউই জীবিত নেই, এমনটাই তথ্যভিত্তিতে প্রমাণ করছে।
একই সঙ্গে রাজ্যের আরও দুটি কেন্দ্র দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি ৪৮ নম্বর পার্ট, যেখানে ভোটার সংখ্যা ৭৬৮ জন, এবং হুগলির পান্ডুয়া ৫৩ নম্বর পার্ট, যেখানে ভোটার সংখ্যা ৬৬৮ জন। এই তিনটি জেলার তিন কেন্দ্রেই কোন ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় কারুর নাম নেই। প্রত্যেকেই নতুন এবং ২০২৫ সালের ভোটার। এই তথ্য জানার পরেই নির্বাচন কমিশন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, যা কোনওভাবেই অসম্ভব। নির্বাচন কমিশন পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন রাজ্যের আরও কোন কোন জায়গায় এই ধরনের ভুতুড়ে কান্ড ঘটেছে। খুব শীঘ্রই এই সমস্ত ভুলভ্রান্তি সংশোধনের কথাও জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তর জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনার ফলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বি এল ও আধিকারিকদের কাজে গাফিলতি। কোনরকম ভুল ভ্রান্তি বা গাফিলতি কোন অবস্থাতেই বরদাস্ত করা হবে না। যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্ত ভুলভ্রান্তি সংশোধন করতে হবে অন্যথায় কড়া আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন নির্বাচন কমিশন।
