আজকাল ওয়েবডেস্ক: এসআইআর এর চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী বিএলও। মাল ব্লকের রাঙ্গামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। নিউ গ্ল্যান্ড কো চা বাগান এলাকার ১০১ নম্বর পাটে ঘটল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। বুধবার ভোরবেলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন শান্তিমনি এক্কা (৪৮)। তিনি ছিলেন এলাকার একজন আইসিডিএস কর্মী ও একই সঙ্গে বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)। তাঁর এই হঠাৎ মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা এলাকায়।
পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ, এসআইআর সংক্রান্ত কাজের অতিরিক্ত চাপ ও মানসিক যন্ত্রণা তিনি বহুদিন ধরেই সহ্য করতে পারছিলেন না। নিয়মিতভাবে বাড়িতে ফিরে কান্নাকাটি করতেন শান্তিমনি। দীর্ঘদিনের অবসাদে, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বলেই দাবি স্বামী ও সন্তানের। তাঁদের কথায়, কাজের চাপ এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে তিনি প্রচণ্ড মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। এদিন ভোরেই এই চাপ আর সহ্য করতে না পেরে তিনি নিজের ঘরের পিছনে এক কোনায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ।
ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই মালবাজার থানার আইসি সৌম্যজিৎ মল্লিকের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে। মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা শান্তিমনি এক্কাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, গতমাস থেকেই দেশজুড়ে ১২টি রাজ্যে চালু হয়ে যাচ্ছে এসআইআর। ৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর চলবে এনুমারেশন ফর্ম প্রক্রিয়া। ৯ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ। ৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি অভিযোগের ভিত্তিতে শুনানি, ৭ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে শেষবার ২০০২ সালে এসআইআর হয়েছিল। সেই সূচিতে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের আর কোনও কাগজ দিতে হবে না। কারওর নিজের নাম না থাকলেও বাবা-মায়ের নাম থাকে, তা হলেও আর কাগজ দিতে হবে না। কমিশনের সাইটে গিয়ে এই ‘ম্যাচিং’ ভোটাররা নিজেরাই করতে পারবেন।
যাদের বাবা-মায়ের নাম তালিকায় থাকবে না, তাঁরা প্রথমে জেলাশাসককে জানাতে পারবেন, তারপর তাঁদের প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে। তার সঙ্গে তিনটে ফর্ম রয়েছে কমিশনের। ফর্ম ৬, ফর্ম ৭ অথবা ফর্ম ৮ পূরণ করতে হবে তাদের। ফর্ম ৬ তালিকায় নতুন নাম সংযোজনের জন্য, ফর্ম ৭ নাম তালিকা থেকে সরানোর জন্য এবং ফর্ম ৮ ভোটার স্থানান্তকরণ বা কোনও সংশোধনের জন্য।
এর আগে, প্রথম পর্যায়ে বিহারে এসআইআর ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। দ্বিতীয় দফায় মোট ১২টি রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআর-এর দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। তালিকায় রয়েছে সেই সব রাজ্য, যেখানে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানালেন, দ্বিতীয় দফায় এসআইআর হবে- বাংলা, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, পুদুচেরি, আন্দামান-নিকোবর, গোয়া, গুজরাট, তামিলনাড়ু, লাক্ষাদ্বীপ, কেরলে। সোমবার বিকেলে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিল, সফল প্রথম দফার এসআইআর।
পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর শুরু হবে মঙ্গলবার থেকে। বিহারে ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়ে গেছে। বিহার রাজ্যে সম্প্রতি ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় প্রায় ৭ কোটি ৪২ লক্ষ নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
রাজ্যটি দুই দফায় ভোট দেবে — ৬ ও ১১ নভেম্বর, ভোটগণনা হবে ১৪ নভেম্বর। স্থানীয় নির্বাচনের কারণে কিছু রাজ্যে দেরিতে করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। পিটিআই সূত্রে আরও জানা গেছে, যেসব রাজ্যে স্থানীয় সংস্থার নির্বাচন বর্তমানে চলছে বা শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, সেসব রাজ্যে এই সংশোধন প্রক্রিয়া আপাতত পিছিয়ে দেওয়া হবে।
কারণ স্থানীয় নির্বাচনের কাজে প্রশাসনিক যন্ত্রপাতি ইতিমধ্যেই ব্যস্ত রয়েছে। এদিকে, অনেক রাজ্যই আগের ভোটার তালিকা অনলাইনে প্রকাশ করেছে। যেমন দিল্লির প্রধান নির্বাচন দপ্তরের ওয়েবসাইটে ২০০৮ সালের ভোটার তালিকা এবং উত্তরাখণ্ডে ২০০৬ সালের তালিকা পাওয়া যায়।
অধিকাংশ রাজ্যেই ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে শেষবার নিবিড় ভোটার তালিকা সংশোধন করা হয়েছিল। সেই পুরনো তালিকাগুলিই এখন মূল রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে পুরনো ভোটারদের নামের সঙ্গে বর্তমান ভোটারদের তথ্য মিলিয়ে দেখা যায়।
এই ভোটার তালিকা সংশোধনের মূল উদ্দেশ্যগুলির একটি হল বেআইনি বিদেশি অভিবাসীদের নাম চিহ্নিত ও অপসারণ করা। এজন্য ভোটারদের জন্মস্থান যাচাই করার কাজেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও ময়ানমার থেকে আগত অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যে তৎপরতা চালানো হচ্ছে, সেই প্রেক্ষিতে এই সংশোধন প্রক্রিয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
