আজকাল ওয়েবডেস্ক: চিরাচরিত রীতি ও পরম্পরা মেনে ব্রহ্ম উপাসনার মধ্য দিয়েই শুরু হল এ বছরের পৌষ উৎসব। এই উপলক্ষে শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলায় সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। সঙ্গীত, মন্ত্রপাঠ এবং উপাচার্যের ভাষণ ছিল উপাসনার প্রধান অঙ্গ। বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক, কর্মী-আধিকারিকদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ সাদা পোশাকে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সন্ধ্যায় মোমবাতির আলোয় ছাতিমতলা ও রবীন্দ্র ভবনকে সাজিয়ে তোলার প্রস্তুতি নিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।


পৌষ উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির মাঠে জমে উঠছে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। এ বছর বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের উদ্যোগেই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৩৫০টি স্টল বসেছে মেলায়। রাজ্য ও জেলা প্রশাসন মেলা আয়োজনে সব রকম সহযোগিতা করছে। এদিন বিশ্বভারতীর আমন্ত্রণে ছাতিমতলায় ব্রহ্ম উপাসনায় উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক ধবল জৈন এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। উপাসনা শেষে বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে "আগুনের পরশমণি" গান গেয়ে শোভাযাত্রার মাধ্যমে রবীন্দ্র ভবনে পৌঁছন। সেখানে উপাচার্য, জেলাশাসক ও জেলা সভাধিপতি কবিগুরুর চেয়ারে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান।


এরপরেই উপাচার্য অতিথিদের নিয়ে পূর্বপল্লির মাঠে বিশ্বভারতীর প্রদর্শনী ঘুরে দেখান। এবছর শিক্ষা বিভাগ, শারীর শিক্ষা বিভাগ, কলাভবন, রবীন্দ্র ভবন, চিনা ভবন, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেল-সহ বিভিন্ন বিভাগের প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করেছে। প্রদর্শনী পরিদর্শনের পর উপাচার্য, জেলাশাসক ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেলা প্রাঙ্গণের একাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্টলের উদ্বোধন করেন। মেলা প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য জানান, প্রশাসনের সহযোগিতায় এখনও পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে মেলা চলছে। বিশ্বভারতী ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হওয়ায় দর্শনার্থীদের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও পরিবেশবিধি মেনে চলার আবেদন জানান তিনি।


ছাতিমতলায় উপাসনা শেষ হতেই পড়ুয়াদের ভিড় বাড়তে থাকে পূর্বপল্লির মাঠে। সঙ্গীত ভবনের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী সুকন্যা মুখোপাধ্যায় ও সায়নী মণ্ডল জানান, এটাই তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষ। তাই বিদায়ের আগে মেলায় এসে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করতেই তাঁদের এই পরিকল্পনা। কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া, ঘোরাঘুরি ও নাগরদোলায় চড়াই তাঁদের মূল আকর্ষণ। মেলা উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তায় ঘেরাটোপ। সচেতনতার প্রচারের ফলে পরিবেশবিধি মেনে চলতে দেখা গিয়েছে দর্শনার্থীদের। প্রথম দিন ডোকরা শিল্প, রূপদস্তার গয়না, শীতের পোশাক ও হস্তশিল্পের দোকানগুলিতে তুলনামূলক বেশি ভিড় ছিল। সন্ধ্যায় নাগরদোলা ও বিভিন্ন রাইডে তরুণদের ভিড় বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই। আগামীকাল বুধবার শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জে অনুষ্ঠিত হবে পাঠভবন ও সমাবর্তন উৎসব।