আজকাল ওয়েবডেস্ক: অসম থেকে বাংলার মানুষকে কীভাবে এনআরসি নোটিস? এই প্রশ্ন বারে বারে তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তার মাঝেই সামনে এল এই একই ঘটনা। নদিয়ার দুই পরিবারকে অসম সরকার এনআরসির নোটিস পাঠিয়েছে।  


সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এসআইআর (State Inhabitants Register)নিয়ে যখন সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে, ঠিক সেই সময়ই নদিয়া জেলায় নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি অসম থেকে  আসা একটি NRC (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস)-এর নোটিস। এই নোটিস এসে পৌঁছেছে কৃষ্ণনগর ২ নম্বর ব্লকের ধুবুলিয়া থানার অন্তর্গত সোনাডাঙা মাঝের পাড়ার দুই পরিবারের কাছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সঞ্জু শেখ ও আরসাদ শেখ নামক দুই ব্যক্তি চলতি বছরের ৩ অক্টোবর একটি চিঠি পান, যা সম্পূর্ণ অসমিয়া ভাষায় লেখা ছিল। ভাষা বুঝতে না পেরে তাঁরা বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেখান। পরে জানা যায়, এটি অসম রাজ্য থেকে পাঠানো একটি NRC সংক্রান্ত নোটিশ। এই খবরে মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্কে ভেঙে পড়ে দুই পরিবার।

আরও পড়ুন: জোড়া ঘূর্ণাবর্তে বিপদ বাড়ছে বাংলার! আজ-কাল জেলায় জেলায় হলুদ সতর্কতা

জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর আগে সঞ্জু ও আরসাদ পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে অসমে গিয়েছিলেন। সঞ্জু এক মাস ও আরসাদ মাত্র ১৫ দিন কাজ করার পর নদিয়ায় ফিরে আসেন এবং তারপর আর কখনও অসম যাননি। এত বছর পর হঠাৎ করে তাঁদের নামে NRC-র নোটিস আসায় তাঁরা যেমন হতবাক, তেমনই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।

নোটিসে কী লেখা আছে? তা পরিষ্কারভাবে বোঝা না গেলেও স্থানীয়দের সাহায্যে অনুমান করা যাচ্ছে, তাঁদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করার জন্যই এটি পাঠানো হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, দীর্ঘদিন আগে মাত্র কিছুদিনের জন্য অসমে যাওয়া ব্যক্তিদের নাম কীভাবে NRC তালিকায় উঠল? তাঁদের নাম কীভাবে সেই রাজ্যের ভোটার বা বসবাসকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হল? এই প্রশ্ন ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।

আরও পড়ুন: ভোট থেকে উৎসব, বিজেপির কথায় গৈরিকীকরণের চেষ্টা! মমতার হুঁশিয়ারি, 'আগুন নিয়ে খেলবেন না'  

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা— এই ধরনের নোটিস আরও কারও কাছে আসতে পারে। অন্য রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাওয়ার পর যদি এমন জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কাজের খোঁজে বাইরে যাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই।

বর্তমানে দুই পরিবার প্রশাসনিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁরা চাইছেন, স্থানীয় প্রশাসন তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তুলে ধরুক। 
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য,  এসআইআরের নেপথ্যে কি এনআরসি-র উদ্দেশ্য লুকিয়ে রয়েছে? বৃহস্পতিবার এই প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন, 'এসআইআর-এর নামে ভোট কাটার চক্রান্ত চলছে। অসম সরকার কী করে বাংলার বাসিন্দাদের নোটিস পাঠাতে পারে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, এসআইএর কাজ শুরু হওয়ার আগে, বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কী করে বলেন, দেড় কোটি ভোটার বাদ দিতে হবে? তাহলে কি পরিকল্পনা হচ্ছে পার্টি অফিসে?'