আজকাল ওয়েবডেস্ক:  কেবলমাত্র রক্ষণাবেক্ষণ এবং  সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে মুর্শিদাবাদ জেলার  পর্যটন মানচিত্র থেকে মুছে যেতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী আহিরন  বিল। সুতি থানা এলাকায় ৬৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই আহিরন বিল এক সময় শীতকালে  দেশি-বিদেশি পরিযায়ী পাখিদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠত। ২০০৫ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী প্রণব মুখার্জি এখানে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা দেখে  পাখিরালয় গড়ে তোলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজও অধরা রয়ে গিয়েছে। অগ্রহায়ণ মাসের ভরা শীতেও পোচার্ড, লেসার হুইশলিং টিল, বিন গুজ-এর মতো পরিযায়ী পাখিদের অপেক্ষায় দিন গুনছে আহিরন বিল। 

 

বিলের এই রুগ্ন দশার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে সরাসরি অভিযোগের তির উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার দিকে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে রাখায় সংস্কারের অভাবে এখন ধুঁকছে একসময় পাখিদের স্বর্গরাজ্য এই বিল। বর্তমানে কচুরিপানা ও আগাছায় ভরে গিয়েছে জলাভূমি। তাই পরিযায়ী পাখিরাও মুখ ফিরিয়েছে তাদের এই শীতকালীন আবাসস্থল থেকে।


 
গত কয়েক বছর ধরে ঠিকমতো বিল সংস্কার না হওয়ায় পরিযায়ী পাখিদের দেখা পাওয়া এখানে এখন দুর্লভ। যে আহিরণ বিলে একসময় শীতের ভোরে কুয়াশার চাদর সরতেই অগুন্তি পাখিদের দেখা মিলত, সেই বিল এখন একটি অপরিষ্কার জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। তাই পরিযায়ী পাখি তো দূরের কথা, বছরভর যারা ভরিয়ে রাখত এই বিল , সেই ডাহুক, মুর হেন, জ্যাকনা, নিদেনপক্ষে পানকৌড়ির ঝাঁকও তেমন দেখা যাচ্ছে না এই মুহূর্তে।

বিলে পরিযায়ী পাখি না আসার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন আহিরণ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাবিনা বিবি। তিনি বলেন,"এক সময় পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই আহিরন বিল সংস্কারের অভাবে এখন মৃতপ্রায়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে রাখাতেই এই বিলের সংস্কার আমরা করতে পারছি না।" তিনি জানান,"এই বিল সংস্কারের জন্য যে অর্থ প্রয়োজন তা পঞ্চায়েতের পক্ষে খরচ করা সম্ভব নয়। প্রায় এক বছর আগে জেলা পরিষদের তরফে বিলটি সংস্কার এবং কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে সেই কাজেরও কোনও অগ্রগতি হয়নি বলেই আমরা জানি।"


   
তৃণমূল পরিচালিত সুতি-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হাজেরা সুলতানা বলেন ,"এই বিলে একসময় জল টলটল করত। শীত পড়তেই পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে উঠত গোটা এলাকা। প্রচুর মানুষ বিদেশী পাখিদের দেখতে এবং ছবি তুলতে বিলের আশেপাশে জড়ো হতেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই চিত্রটা সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে।"


পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা বন্ধ হওয়ায় পর্যটকরাও আর আসেন না আহিরন বিল দেখতে। বিলকে কেন্দ্র করে তৈরী হওয়া ছোটখাটো হোটোলেগুলোর ব্যবসাও কমেছে।  


হাজেরা বলেন ,"বিলের জল ফিডার ক্যানেলের সঙ্গে মিশে যাওয়ার কারণে শীতের সময়ও এখন আর আহিরন বিলে জল থাকছে না। বিল থেকে জল বেরিয়ে যাওয়া বন্ধ করার জন্য একটি ছোট বাঁধ তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। বিলের জল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এখন সেখানে বিভিন্ন রকম ডালের চাষ করেন বেশ কিছু পরিবার।"  

 

কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার অভিযোগকে নাকচ  করে বিজেপির জঙ্গিপুর সংগঠনিক জেলা সভাপতি সুবলচন্দ্র ঘোষ বলেন, "প্রণব মুখার্জি এই বিল সংস্কারের উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করার জন্য যে মাটি বিলে ফেলা হয়েছিল তা নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও গত কয়েক বছরে বিলের আশেপাশে বেশ কিছু বেআইনি ইটভাটা তৈরি হয়েছে।   ইটভাটার ধোঁয়া পরিবেশ দূষিত করছে। আর এই দূষিত পরিবেশের কারণেও পরিযায়ী পাখিরা এখানে আসা বন্ধ করেছে।"