আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাঝে মাত্র আর একটা দিন। আলোর উৎসব দীপাবলিতে মাততে চলেছে বাংলা–সহ গোটা দেশ। আর এই দীপাবলিতে আতশবাজির বাজারে জমজমাট ভিড়। আতশবাজির বড় বাজার হিসাবে পরিচিত দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুরের চম্পাহাটি। কালীপুজো ও দীপাবলি উপলক্ষে নানান ধরনের আতশবাজির পসরা নিয়ে ব্যবসায়ীরা হাজির হয় এই বাজারে‌। প্রায় ১০০ থেকে ১৫০টি আতসবাজির দোকান রয়েছে এই অঞ্চলে। আতশবাজির দোকানে এখন জেলা ছাড়াও ক্রেতারা ভিড় জমিয়েছেন কলকাতা থেকেও। দীপাবলিকে রঙিন করে তুলতে নিজেদের পছন্দ মতো আতশবাজি কিনে বাড়ি ফিরছেন তাঁরা। 

চম্পাহাটির এই বাজারে প্রবেশ করলে একের পর এক চোখ ধাঁধানো আতশবাজির গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ক্রেতাদের। এতই ভিড়, এতই হৈচৈ! তবে কাঁচা মালের দাম বাড়ার কারণে গতবারের থেকে বাজির দাম যে এবছর বেড়েছে সেটা কিন্তু আতশবাজির বিক্রেতারা জানিয়ে রাখছেন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে পরিবেশ বান্ধব বাজি বেশি দেখা যাচ্ছে এই বাজারে। এবছর দীপাবলিতে চম্পাহাটির বাজির বাজারে এখন ‘‌রাজ’‌ করছে ‘‌ময়ূর বাজি’‌ ও ‘‌বিড়ি বাজি’‌। প্রায় প্রত্যেকটা দোকানেই এই বাজি সাজিয়ে রাখতে দেখা গিয়েছে। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, অনেকেই এসে এই দুটো বাজির খোঁজ করছেন। ফলে চাহিদাটা বেশ ভালই। এছাড়াও সমানতালে পাল্লা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে নতুন ফুলঝুরি এবং ‘‌মাল্টি কালার’‌ রং মশাল। রয়েছে কামান ও ‘‌স্কুল বাস’‌ বাজি। জেলার উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজনের চাহিদা রয়েছে শব্দবাজির‌। কিন্তু শব্দবাজি নিষেধ থাকার কারণে তাদের আর সেই বাজি জোগাড় করা হচ্ছে না। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শব্দবাজি বিক্রি করছেন বলে শোনা গেলেও সেটা কিন্তু সকলের সামনে নয়। আড়ালে আবডালে বা লুকিয়ে চুরিয়ে। 

এবার একনজরে জেনে নেওয়া যাক জেলার বা রাজ্যের অন্যতম বাজির বাজার চম্পাহাটির বাজারে বাজির কেমন দাম। নতুন ফুলঝুরি প্রতি প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা প্রতি প্যাকেট। মাল্টি কালার রং মশাল প্যাকেট পিছু দাম ৯০ টাকা। এছাড়াও ময়ূর বাজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা দামে। বিড়ি–বাজির প্রতি প্যাকেটের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। কামান বাজির দাম প্রতি প্যাকেট ৪০০ টাকা। স্কুল বাস বাজির দাম ২০০ টাকা। তুবড়ির দাম প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। রয়েছে বেশ বড় সাইজের তুবড়িও। যার দাম অবশ্যই একটু বেশি। প্রতি প্যাকেট তারকাটির দাম ১০ টাকা। একাধিক রঙের তারকাটির দাম প্যাকেট পিছু ৩০ টাকা। বিভিন্ন ধরনের পরিবেশবান্ধব বাজিরও রয়েছে চাহিদা। বিক্রেতারা জানান, পরিবেশ বান্ধব বাজির তুলনামূলকভাবে দূষণ অনেক কম। 

ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‌সারা বছর তো তেমন বিক্রি হয় না, তাই কালীপুজোর সময়টার অপেক্ষায় থাকি।’‌ এবারে বিক্রি বেশ ভালই হচ্ছে বলে তাঁদের দাবি। এই বাজারে বাজির সঙ্গে এসেছে নানা নতুন আলোর পসরাও। ঝলমলে ফুলঝুরি, ঝাড়বাতির মতো আলো বা বিভিন্ন রঙের ফোয়ারা। যা বাজির সঙ্গে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। 

এই উৎসবকে আলো আর নানান বাজির ঝলকে ভরিয়ে দিতে সাহায্য করছে এই বাজির বাজার। নিরাপদে, আনন্দে আর আলোর ছটায় কালীপুজোর উৎসবকে স্বাগত জানাচ্ছেন চম্পাহাটি হারাল বাজি বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। বাজি ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সৌরিস মন্ডল জানান, কালীপুজো উপলক্ষে জমজমাট হয়ে উঠেছে এই বাজি বাজার। ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকাংশ ক্রেতাই শব্দবাজি বর্জন করে পরিবেশ বান্ধব আতশবাজি ক্রয় করছেন। প্রশাসনের নজরদারি চলছে সর্বত্র সব সময়। যদি কোনও ব্যবসায়ীর কাছে শব্দবাজি পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক বা আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন বাজি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার জন্য সহযোগিতাও করছে। আরেক বাজি ব্যবসায়ী অর্জুন মন্ডল বলেন, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন এই বাজি বাজারে বাজি কিনতে আসছেন। আসছেন কলকাতা বা অন্য জেলার ক্রেতারাও। তিনিও দাবি করেন, শব্দবাজি ছাড়া পরিবেশবান্ধব বাজিই লোকে এসে খোঁজ করছেন। বেশি কিনছেন। বাজির দাম বাড়ার পিছনে তাঁর যুক্তি, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজির দাম সামান্য একটু বেড়েছে। তবে ক্রেতারা সহযোগিতা করছেন।

 


‌‌