মিল্টন সেন, হুগলি,৩০ জুলাই: হুগলি জেলা আদালতে একের পর এক সাজা। মাত্র মাস খানেকের মধ্যেই পর পর ফাঁসির সাজার পর এবারে স্ত্রী'কে খুনে দোষীর যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডের সাজা শোনাল জেলা আদালত। সম্প্রতি দেনা পাওনা সংক্রান্ত গোলমালের জেরে নিজের স্ত্রীকে পুড়িয়ে খুন করে স্বামী। স্ত্রীর মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে দোষী সাব্যস্ত স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দিলো চুঁচুড়া জেলা আদালত। 

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,২০১৯ সালে পাণ্ডুয়া থানার অন্তর্গত তিন্না এলাকার বাসিন্দা রিনা হালদারের সঙ্গে বিয়ে হয় তিন্না এলাকারই এক বাসিন্দা কলোনি এলাকার বাসিন্দা সুখরঞ্জন হাওলাদারের। মৃতার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ বিয়ের পর থেকেই তাঁদের মেয়েকে দেনা পাওনার জন্য ক্রমাগত অত্যাচার করত সুখরঞ্জন।

 অভিযোগ, ২০২১ সালের ২১ মার্চ ভোর বেলায় রীনার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার জেরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার বাবা। সম্পূর্ণ দগ্ধ অবস্থায় গৃহবধুকে প্রথমে পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে রিনা দেবী পুলিশকে তাঁর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেন। পরে চুঁচুড়া হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই গৃহ বধূর।

মৃতার বাবা যতীন হালদার পাণ্ডুয়া থানায় জামাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্য সরকারি আইনজীবী শংকর গাঙ্গুলি বলেন, মৃতার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পাণ্ডুয়া থানার পুলিশ। ৯০ দিনের মাথায় চার্জাশিট জমা দেওয়া হয়। প্রথমে মামলা মুখ্য পিপি দেখছিলেন। পরে তাঁরই তত্ত্বাবধানে সেই মামলা প্যানেল পিপি প্রশান্ত আগরওয়াল করেন। বুধবার চুঁচুড়ার তৃতীয় দায়রা আদালতের বিচারক কৌস্তভ মুখার্জী অভিযুক্ত সুখরঞ্জন হাওলাদারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেন। 

প্রসঙ্গত, চলতি বছরে বিস্কুট কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমিকার নাবালক ছেলেকে খুন করে অভিযুক্ত। ঘটনা ঘটেছিল ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, সৌম্যজিৎ দাস নামে বছর এগারোর কিশোরকে শ্বাসরোধ করে খুন করে কিশোরের মায়ের প্রেমিক অরবিন্দ তাঁতি। কিশোরের মায়ের সঙ্গে তার বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তার পর ব্যান্ডেল লিচু বাগান এলাকার বাসিন্দা ফ্রিজ মিস্ত্রী অরবিন্দ তাঁতির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তার মায়ের। তারপর মা ছেলেকে নিয়ে ব্যান্ডেল লালবাবা আশ্রমে ভাড়া থাকতে শুরু করেন। সেখানে অরবিন্দর সঙ্গে নিয়মিত অশান্তি ঝগড়া লেগেই থাকত।

 ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে লালবাবা আশ্রমের ভাড়া বাড়ি ছেড়ে হুগলি ৩ নং কৃষ্ণপুরে ছেলেকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে চলে আসেন নাবালকের মা। সেখানেও এসে অরবিন্দ অশান্তি করত। মাকে শিক্ষা দিতে ছেলেকে খুনের পরিকল্পনা করে অভিযুক্ত। এরপর ৬ জানুয়ারি সন্ধেয় সৌম্যজিৎ নিখোঁজ হয়। তার পরের দিন হুগলি স্টেশন লাগোয়া রেল লাইনের কাছে একটি মন্দিরের পাশে কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মামলার তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক প্রসেনজিৎ ঘোষ ঘটনার তদন্ত করে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখ আদালতে চার্জশিট জমা করেন।

এরপর চুঁচুড়া আদালতের প্রথম অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সঞ্জয় শর্মা অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন। ঘটনার জেরে মামলার সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড। সঙ্গে দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস জেল। ২০১ ধারায় দুই হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিনমাস কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ মা হওয়া নিয়েই প্রশ্ন? এক মুহূর্তে দক্ষ পেশাজীবীকে চাকরি থেকে বাতিল করলেন এইচ আর, ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য 

একইসঙ্গে আদালতের তরফে সালসার কাছে কিশোরের মাকে দুই লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। মামলার সরকারি আইনজীবী সুব্রত ভট্টাচার্য বলেছেন, সঠিক সময়ে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসার। চার্জ ফ্রেম হওয়ার পর ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আদালত অভিযুক্ত অরবিন্দ তাঁতিকে যাবজ্জীবন সাজা শুনিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে হুগলি জেলা মুখ্য সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গাঙ্গুলি বলেছেন, চুঁচুড়া আদালতে একের পর এক সাজা হচ্ছে। তার কারণ পুলিশের সঠিক তদন্ত এবং সরকারি আইনজীবীদের দক্ষতার ফলেই এটা সম্ভব হচ্ছে।

ছবি পার্থ রাহা।