আজকাল ওয়েবডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সমালোচনার পরের দিনই মুখ্যমন্ত্রীকে মায়ের মতো বললেন দুর্গাপুরে নির্যাতিতা ডাক্তারি পড়ুয়ার বাবা। কোনও ভুল বলে থাকলে ক্ষমাও চান তিনি। এর পাশাপাশি মেয়ের জন্য ন্যায়বিচারের দাবিও জানান। 

ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে মমতার একটি বিশেষ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতা পড়ুয়ার বাবা বলেন, “আমি চাই এই ঘটনায় যথাযথ তদন্ত হোক। আমার মেয়ের যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক। যত তাড়াতাড়ি পারি আমরা বাংলা ছেড়ে ওড়িশা চলে যাব৷ আর ফিরে আসব না। আমার মেয়ের মতো বাংলার আর কোনও মেয়ে যেন শিকার না হয়।”
 
বুধবার তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মায়ের মতো। তাঁকে প্রণাম। যদি তাঁর বিরুদ্ধে ভুল কিছু বলে থাকি, ক্ষমা করে দিন। মেয়েকে ন্যায়বিচার দেওয়ার চেষ্টা করবেন”। তিনি আরও বলেন, “আমি সিবিআই তদন্তের দাবি করে আসছি। আমার মনে হয় সেটাই ভাল হবে। তবে সেটা বাংলার সরকারের উপরে নির্ভর করছে।”

গত শুক্রবার রাতে সহপাঠীর সঙ্গে কলেজ থেকে বেরিয়ে ওই ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ। শনিবার থেকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ওই সহপাঠীকে। কলেজ লাগোয়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচ জনকে। ধৃতদের বয়ান এবং নির্যাতিতার বয়ানের সঙ্গে ছাত্রের বয়ানে বিস্তর ফারাক মেলে। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ ঘটনার পুনর্নিমানের সময় ধৃতদের সঙ্গে ওই ছাত্রকেও ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। সেখানেও তাঁর বয়ান অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এরপরেই তাঁকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে ধৃতদের পেশ করা হয়। কিন্তু তাঁদের হয়ে কোনও আইনজীবী সওয়াস করতে চাননি। বিচারক ধৃতকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া নির্দেশ দেন। ধৃত ছ’ বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, একই উদ্দেশ্যে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে অপরাধ ঘটানো, সম্পত্তি ছিনতাই, ভয় দেখিয়ে জোর করে অর্থ, সম্পত্তি বা সুবিধা আদায়ের ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।

আরও পড়ুন: হস্টেল রুম থেকে মিলল ১১টি কন্ডোম! দুর্গাপুরে মেডিকেল ছাত্রী ধর্ষণকাণ্ডে নয়া মোড়

বৃহস্পতিবার এই ধর্ষণকাণ্ডে নয়া মোড় এসেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সহপাঠীর হস্টেল রুমে তল্লাশি চালিয়ে ১১টি অব্যবহৃত কন্ডোম উদ্ধার হয়েছে। পাশাপাশি, ঘটনাস্থল হিসেবে চিহ্নিত পরাণগঞ্জের জঙ্গল থেকে আরও একটি অব্যবহৃত কন্ডোম উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, সহপাঠী ছাত্রটি একটি সম্পূর্ণ কন্ডোম প্যাকেট কিনেছিল, যার মধ্যে ১১টি তার ঘরে পাওয়া গেছে এবং একটি ঘটনাস্থল থেকে।

পুলিশ জানিয়েছে, এই কন্ডোম উদ্ধারের বিষয়টি মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। কারণ, এই সূত্র থেকেই পরিষ্কার ইঙ্গিত মিলছে যে সহপাঠী ছাত্রটিই ওই ছাত্রীকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়েছিল। তবে ঘটনার প্রকৃত ধরণ জানতে পুলিশ অপেক্ষা করছে ফরেনসিক পরীক্ষার ফলাফলের জন্য।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, গত ১০ অক্টোবর রাতে দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্র ও ছাত্রী এক সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে যায়। দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে ছিল গত পাঁচ মাস ধরে। সেই রাতেই পরাণগঞ্জের জঙ্গলে তাঁদের ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলে বিজড়া গ্রামের পাঁচ যুবকের মধ্যে তিনজন। পরবর্তীতে আরও দুই যুবক সেখানে পৌঁছয়। পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা প্রথমে ছাত্র-ছাত্রী দুজনের কাছ থেকে টাকা দাবি করে। কিন্তু তাদের কাছে দাবি করা টাকা না থাকায় সহপাঠী যুবক নির্যাতিতাকে সেখানে রেখে টাকা আনতে যায় বলে অভিযোগ। এরপর কী ঘটেছিল, তা নিয়েই এখন তদন্তের মূল দিক নির্দেশিত হচ্ছে। যুবক তখনই কি বান্ধবীকে ফেলে চলে গিয়েছিল, নাকি তাঁর সামনেই ধর্ষণ করা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। নির্যাতিতার বয়ান অনুযায়ী, তাঁকে একজনই ধর্ষণ করেছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের মধ্যে কে সেই ব্যক্তি? পুলিশের দাবি, ফরেনসিক রিপোর্ট ও ডিএনএ পরীক্ষার পরেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।