আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লিতে লালকেল্লা এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তে মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানার অন্তর্গত নিম গ্রামের বাসিন্দা মইনুল হাসান নামে এক পরিযায়ী শ্রমিকের নাম ‘জড়িয়ে যাওয়ায়’ ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল এলাকা জুড়ে। বুধবার সকালে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে এনআইএ-র তদন্তকারীরা স্থানীয় নবগ্রাম থানার পুলিশ এবং ভিন্ রাজ্যের কয়েকজন পুলিশ আধিকারিককে নিয়ে মইনুলের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালান। তারপরেই এলাকায় ‘রটে’ যায় মইনুলের সঙ্গে দিল্লির সন্ত্রাসীদের যোগ পাওয়া গিয়েছে। ওই মামলার তদন্তেই এনআইএ-র গোয়েন্দারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিম গ্রামে এসে হাজির হয়েছিলেন। সেই রটনা নিয়ে মুখ খুললেন ওই পরিযায়ী শ্রমিক।
মইনুল এবং তাঁর পরিবারের তরফ থেকে বৃহস্পতিবার দাবি করা হয়েছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেউ বা কারা দিল্লি বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে দিতে চাইছে। পরিবারের আরও দাবি, মইনুলকে দিল্লি বিস্ফোরণ বিষয়ে এনআইএ-র তদন্তকারীরা কোনও প্রশ্ন করেননি। দিল্লি বিস্ফোরণ সংক্রান্ত কোনও নথি বা অন্য কোনও জিনিস তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়নি।
এনআইএ-র আধিকারিকদের দেওয়া ‘সার্চ এবং সিজার লিস্টের মেমোরান্ডাম’ দেখিয়ে ওই পরিবার বৃহস্পতিবার দাবি করে, আরসি-১৯/২০২৩/এনআইএ/ডিএলআই মামলার তদন্ত করার জন্য এনআইএ-র আধিকারিকেরা নিম গ্রামে এসেছিলেন। ওই মামলায় এনআইএ-র তরফ থেকে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনের ৩৮, ৩৯ এবং ৪০ ধারা এবং ১৪ (এ), ১৪ (বি) ফরেনার্স অ্যাক্ট এবং আইপিসি-র ৪৬৫ ৪৬৬ এবং ৪৭১ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। সূত্রের খবর, আল কায়দা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জনের গ্রেপ্তারির পর গুজরাট এটিএস ২০২৩ সালের মে মাসে এই মামলার শুরু করেছিল। পরে ওই বছর জুন মাসে এনআইএ এই মামলার তদন্তভার হাতে নেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিম গ্রাম বেলুড়ি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর বছর ছাব্বিশের মইনুল পরিবারের আর্থিক হাল ধরার জন্য পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করার জন্য ভিন্ রাজ্যে চলে যান। দিল্লি, মুম্বই, গুজরাট-সহ একাধিক রাজ্যে বিভিন্ন ঠিকাদারদের অধীনে মূলত পাইপ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন মইনুল। তবে বিয়ে করার পর বছর দু’য়েক ধরে মইনুল আর ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যান না। বর্তমানে সে মুর্শিদাবাদের নিম গ্রামের বাড়িতে থেকেই বিভিন্ন এলাকায় কাজ করেন। মইনুলের পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের নিজস্ব কোনও জমি জায়গা না থাকায় মইনুলের রোজগারের উপরে তাদের ভরসা করতে হয়। কিন্তু যেভাবে তাঁর নামের সঙ্গে দিল্লি বিস্ফোরণের ঘটনার নাম জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে তাঁর কাজ পেতে অসুবিধা হতে পারে বলে অভিযোগ।

এনআইএ-র ‘সার্চ এবং সিজার লিস্টের মেমোরান্ডাম’
মইনুল বলেন, “প্রায় আড়াই বছর আগে আমি যখন মুম্বইতে একজন কন্ট্রাক্টরের অধীনে কাজ করতাম সেই সময় ওই নির্মাণস্থলে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকও কাজ করতেন। এনআইএ-র গোয়েন্দারা তেমনই এক বাংলাদেশি নাগরিক সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য আমার কাছে এসেছিলেন। দিল্লি বিস্ফোরণের বিষয়ে এনআইএ-র গোয়েন্দা বা পুলিশের তরফ থেকে আমাকে কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি বা এই সংক্রান্ত কোনও তথ্যও আমার কাছে নেই। আমি সন্ত্রাসী নই।”
সূত্রের খবর, যে মামলায় এনআইএ-র গোয়েন্দারা মইনুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সেই মামলায় ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এনআইএ-র তল্লাশি শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাদের তরফ থেকে যে কাগজ মইনুলের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে তা দেখিয়ে তারা দাবি করেন, এনআইএ-র গোয়েন্দারা যাওয়ার আগে মইনুলকে সম্পূর্ণ ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছেন এবং তাঁরা লিখিতভাবে জানিয়ে গিয়েছে আমাদের বাড়ি থেকে কোনও রকমের অবৈধ নথি বা ইলেকট্রনিক গ্যাজেট উদ্ধার হয়নি।
নাম না প্রকাশের শর্তে নিম গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা দাবি করেছেন, মৃদুভাষী মইনুলকে তাঁরা কখনও কোনও অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখেননি। তবে দিল্লি বিস্ফোরণের পরই এনআইএ-র গোয়েন্দারা যে ভাবে তাঁর বাড়িতে হাজির হয়ে তল্লাশি চালিয়েছেন তাতে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, “এনআইএ-র তল্লাশি শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখেছি দিল্লি বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে মইনুলের কিছু যোগ মেলায় এই তল্লাশি চালানো হয়েছে। তাই ওই পরিবারের সঙ্গে আমরাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছি।
নবগ্রামের বিধায়ক কানাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “আমিও শুনেছি দিল্লি বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে ওই যুবকের কোনও যোগ নেই। এনআইএ-র গোয়েন্দারা তাঁকে ওই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদও করেনি। এলাকায় ওই যুবক সম্পর্কে খারাপ কোনও তথ্য গ্রামবাসীরা আমাকে জানাননি।”
