আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভাইফোঁটার দিনে বোনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আজও অটুট। মুখে জলপাইয়ের বীজ নিয়ে টানা ২৬ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার আশোকনগরের কাচুয়া মোড় এলাকার বাসিন্দা জয়দেব বিশ্বাস। শোনা যায়, বোনের আবদারেই একদিন মুখে জলপাইয়ের বীজ নিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে তা আর মুখ থেকে ফেলেননি। আজও সেই জলপাই বীজই তাঁর মুখে রয়েছে—বোনের স্মৃতি হিসেবে।
৬৮ বছর বয়সি জয়দেব বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার (Power Distribution Corporation) প্রাক্তন কর্মচারী। প্রায় তিন দশক আগে ভাইফোঁটার দিনে বোন অগ্নিবীণা দেবী মজার ছলে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তুমি এই জলপাইয়ের বিচিটা কতক্ষণ মুখে রাখতে পারবে?” জয়দেব উত্তর দিয়েছিলেন, “যতক্ষণ না তুমি আমাকে ফেলতে বলবে, ততক্ষণ মুখেই রাখব।” সেই কথাই বাস্তবে পরিণত হয়। ১৯৯৬ সালের সেই দিন থেকে আজ অবধি মুখ থেকে জলপাইয়ের বীজ আর তোলেননি তিনি।
অগ্নিবীণা দেবী প্রতিবছর ভাইফোঁটার দিনে দাদাকে ফোঁটা দিতেন, নিজ হাতে রান্না করতেন নানা পদ—মাছ, মাংস, পায়েস, আর সঙ্গে থাকত তাঁর প্রিয় জলপাই চাটনি। ওই দিনই শেষবারের মতো জয়দেব জলপাই চাটনি খেয়েছিলেন। তার কিছুদিন পরই শুরু হয় এই অদ্ভুত প্রতিশ্রুতির গল্প। শুরুতে বীজটি মুখে রাখায় অস্বস্তি হতো, মুখ কেটে যেত, কিন্তু ধীরে ধীরে সেটাই অভ্যেসে পরিণত হয়।
দুঃখের বিষয়, ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি অগ্নিবীণা দেবী আত্মহত্যা করেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা জয়দেবের কাছে আনন্দ নয়, এক গভীর শোকের দিন। তবুও বোনের স্মৃতি আঁকড়ে তিনি আজও মুখে সেই জলপাই বীজ বহন করছেন। তাঁর কথায়, “বোন নেই, কিন্তু ওর স্মৃতি আছে। এই জলপাইয়ের বীজটাই আমার বোনের ভালোবাসার প্রতীক।”
জয়দেব বিশ্বাস আজও সেই জলপাই বীজ মুখে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, এমনকি দাঁত মাজা পর্যন্ত করেন। এক মুহূর্তের জন্যও তা বের করেন না। আশপাশের এলাকায় তাঁর এই কাহিনি এখন একপ্রকার কিংবদন্তি। প্রতিদিনই বাজার থেকে ফিরলে অনেকেই দেখতে আসেন—“বোনের স্মৃতি” হিসেবে মুখে রাখা সেই জলপাইয়ের বীজটি।
জয়দেবের মুখে হাসি, চোখে একফোঁটা জল। তিনি বলেন, “যতদিন বাঁচব, ততদিন মুখে রাখব এই জলপাইয়ের বীজ। এটাই আমার বোনের প্রতি ভালোবাসা আর প্রতিশ্রুতির প্রতীক।”
বছর ঘুরে ভাইফোঁটার দিন এলেই আশোকনগরের মানুষরা আজও স্মরণ করেন সেই মানুষটিকে, যিনি মুখে জলপাই বীজ রেখে এক বোনের ভালোবাসাকে অমর করে রেখেছেন।
