প্রকাশ মণ্ডল,আলিপুরদুয়ার: জলদাপাড়া বন্যপ্রাণ বিভাগের জঙ্গলে হাতি চলাচলের জন্য পরিচিত করিডরগুলির ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সৌরচালিত সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো শুরু করল বন দপ্তর।
এই উদ্যোগের ফলে বনকর্মীরা রিয়্যাল টাইম-এ স্ক্রিনে হাতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন এবং কাছাকাছি গ্রামগুলিকে সতর্ক করতে এবং ঘটনাস্থলে স্থানীয় বনকর্মীদের দল পাঠাতে সক্ষম হবেন। যার ফলে হাতির হানায় মানুষের প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও বনাঞ্চল সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে সাইরেন বসানো হচ্ছে। যার ফলে, রাতের অন্ধকারে বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসা হাতির দল সম্পর্কে গ্রামবাসীদের সাইরেনের মাধ্যমে সতর্ক করা হবে।
উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহে জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা হাতির আক্রমণে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। জানা গিয়েছে, গত ২২ অক্টোবর বুধবার মধ্য খয়েরবাড়ি এলাকায় গভীর রাতে কালীপুজোর উৎসবের মাঝে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফেরার সময় সোনাই মুন্ডা ও তাঁর দেড় বছরের শিশুকে বুনো হাতি পদপিষ্ট করে হত্যা করে। সেইদিন এই ঘটনা ঘটার আগে ওই এলাকায় আরো একব্যক্তিকে পদপিষ্ট করে মারে হাতি। সেই সময় থেকেই ওই এলাকায় বুনো হাতির আনাগোনা আরো বেড়ে যায়।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মাদারিহাট মেঘনাদ সাহা নগর এলাকায় ফের হাতির হানায় সুখীরানী দাস নামে ৫৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের কথায় হাতির জন্য গোটা মাদারিহাট এলাকাই আতঙ্কিত। ঘন ঘন হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনা সামনে আশায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে মাদারিহাট এলাকায়।
ইতিমধ্যে জঙ্গলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ৩০টি সিসিটিভি লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে জলদাপাড়া বনদপ্তর। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের সহকারী বন্যপ্রাণ রক্ষকের মাদারিহাট-এর কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে বনকর্মীরা সর্বক্ষণ লাইভ ক্যামেরার মাধ্যমে বনাঞ্চলের বিভিন্ন হাতিদের উপর নজরদারি করবেন। যদি কোনো হাতি বা হাতির দল জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের জঙ্গল থেকে লোকালয়ে বেরিয়ে আসে, তৎক্ষণাৎ বনকর্মীরা উক্ত এলাকার বনকর্মী এবং গ্রামবাসীদের সতর্ক করবেন। সেইসঙ্গে যদি বনকর্মীদের নজর এড়িয়ে কোন হাতি লোকালয়ে চলে আসে, সেই ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষদের যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুমে একটি ফোন নম্বরও রাখা হবে। এছাড়াও পুলিশের জরুরি ১০০ নম্বরও এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে। যাতে জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত যোগাযোগ ও যৌথভাবে বিষয়টি সামাল দেওয়া যায়।
জানা গিয়েছে, কেউ যদি ১০০ নম্বরে ফোন করে এই সমস্যার কথা জানান তবে সেই কলটি বন বিভাগের কন্ট্রোল রুমে পাঠানো হবে। এরপর কন্ট্রোল রুম থেকে স্থানীয় বনরক্ষীদের বুনো হাতির উপস্থিতির খবর জানানো হবে।
বন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জলদাপাড়া বিভাগে প্রতি রাতে এলাকায় টহলদারির জন্য ২৯ টি বনরক্ষীদের দল মোতায়েন রয়েছে। যার মধ্যে ৯টি দল মাদারিহাট এবং তার সংলগ্ন এলাকায় কাজ করছে।
এই বিষয়ে জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের ডেপুটি ফিল্ড অফিসার প্রবীণ কাশোয়ান জানান, মানুষ বনাম হাতির সংঘাত ও ক্ষতি এড়াতে জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের সংলগ্ন গ্রামগুলিতে প্রতি রাতে নিয়মিতভাবে বন কর্মীরা প্রহরা দিয়ে থাকেন। মোট ২৯টি দল এলাকায় পাহাড়া দেয়। এরপরেও কর্মীদের নজর এড়িয়ে বুনো হাতির দল লোকালয়ে চলে যায়। সম্প্রতি লোকালয়ে হাতি হানায় বেশ কয়েকজন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। সেই কারণে সৌর বিদ্যুৎ পরিচালিত সিসিটিভি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে বনদপ্তর। বনাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ তিরিশটি হাতি চলাচলের পথে সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে। সেই ক্যামেরায় নজর রাখার জন্য একটি কন্ট্রোল রুম এক সপ্তাহের মধ্যে চালু হয়ে যাবে। এর ফলে বনকর্মীরা দ্রুত হাতি চলাচলের বিষয়ে স্থানীয় বন কর্মীদের খবর দিতে পারবেন। বনকর্মীরা দ্রুত সেই স্থানে পৌঁছে হাতিগুলিকে জঙ্গলমুখী করতে পারবে। এছাড়াও বৃহস্পতিবার থেকে মাদারিহাট অঞ্চলে আরও ৩টি নতুন বন রক্ষীদের দল পাহারার কাজ শুরু করছে। এর পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে হাতি চলে এলে সাইরেনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
