আজকাল ওয়েবডেস্ক: আচমকা বজ্রাঘাতে রাজ্যজুড়ে মৃত্যু হল ১৬ জনের। এদের মধ্যে ৮ জনই বাঁকুড়ার বাসিন্দা। বাঁকুড়া ছাড়াও বর্ধমানে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ১, পুরুলিয়ায় ১ জন এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বেশির ভাগের মৃত্যুই মাঠে কাজ করতে গিয়ে হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে হঠাৎ করেই বদলে যায় আবহাওয়ার চিত্র। সকাল থেকে রোদ থাকলেও দুপুরের পর কালো করে মেঘ করে আসে বাঁকুড়া জেলায়। প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি বজ্রপাত এবার বাঁকুড়াবাসীর কাছে হয়ে উঠল অভিশাপ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রবল বৃষ্টি আর তার সঙ্গে বজ্রপাতে জেলার একাধিক ব্লকে শুরু হয় এক প্রকার প্রাকৃতিক তাণ্ডব। ফলত, মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বজ্রাঘাতে প্রাণ হারালেন অন্তত ৮ জন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে ভয় আর শোকের মেঘ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁকুড়ার কোতুলপুর, পাত্রসায়র, জয়পুর, ইন্দাস ও ওন্দা ব্লক।
মৃতদের মধ্যে রয়েছেন কোতুলপুর ব্লকের খিরি গ্রামের আসিয়া মোল্লা, পাত্রসায়েরের কাঁটাবন গ্রামের যুবক জীবন ঘোষ, জয়পুরের খোরকাসুলি গ্রামের উত্তম ভুঁইয়া (জগন্নাথপুর পঞ্চায়েত প্রধানের ভাই), ইন্দাস থানার বাঙালচক গ্রামের শেখ ইসমাইল, ওন্দার কামারকাটা গ্রামের নারায়ণ সাওয়ার, ভাদুলডাঙ্গা ও কল্যাণী এলাকার আরও দু’জন। জানা গিয়েছে, মৃতদের মধ্যে কেউ ছিলেন মাঠে চাষের কাজে, কেউ আবার বাড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। আচমকা বজ্রাঘাতে প্রাণ হারান। ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর স্থানীয় মানুষজন ছুটে যান ঘটনাস্থলে। অনেককে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
চিকিৎসকদের দাবি, বজ্রাঘাতে আহতদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার পর কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে গ্রামীণ জনজীবন। বহু পরিবার এখন আকাশ কালো হলেই ভয়ে কাঁপছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘আমরা এখন ঘর থেকে বেরোতেই ভয় পাচ্ছি। জানি না কখন কার মাথায় বাজ পড়ে!’ আবার অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘প্রশাসন কি আগে থেকেই সতর্ক করতে পারত না?’
পূর্ব বর্ধমানে মৃতদের মধ্যে রয়েছেন আউশগ্রামের সঞ্জয় হেমব্রম (২৮), মাধবডিহির সনাতন পাত্র (৬০), রায়নার অভিজিৎ সাঁতরা (২৫), মঙ্গলকোটের বুড়ো মাড্ডি (৬৪), খণ্ডঘোষের পরিমল দাস (৩২) এবং মদন বাগদি। এদিন পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের ভূমশোরের মাঠে পরপর তিনটি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। প্রথম বজ্রপাতে কেউ আহত হয়নি। দ্বিতীয় বজ্রপাতের ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন আহত হন। আহতদের মধ্যে আছেন বাবা শেখ নাসির ও দুই ছেলে ইব্রাহিম ও শেখ হাসিব। এর
পাশাপাশি আরেকটি যে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে সেখানে আহত হন বলগোনা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন শেখ। আহতদের উদ্ধার করে ভাতার গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা এলাকায় বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে লক্ষ্মীকান্ত পালের (৪২)। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের মোহনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ভগবতীপুরের কমল সরকার (৫৬)-এর প্রাণ হারিয়েছেন বজ্রাঘাতে। অন্যদিকে, ধান রোপন করতে গিয়ে পুরুলিয়ার ঝালদায় গুরিডি গ্রামে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে সুমিত্রা মাহাতোর।
আবহাওয়া দপ্ততরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তর বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে, আগামী কয়েকদিনও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত চলবে। বিশেষ করে, আগামী রবিবার পর্যন্ত জেলায় জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই সব পঞ্চায়েত এলাকায় মাইকিং করে সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চাষিরা যাতে বজ্রপাত চলাকালীন মাঠে না যান, সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও এদিন রাজ্যজুড়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
