পল্লবী ঘোষ: যশোর রোডের শতাব্দী প্রাচীন শিশু গাছের নরম ছায়াপথ ছেড়ে পা রাখলাম মেঠো পথে। খানিক এগিয়েই জোড়া শিবমন্দির। তার অনতিদূরে ৩০০ বছরের পুরাতন দুর্গা দালান। ইতিমধ্যেই প্রতিমার গায়ে রূপসজ্জা শেষের দিকে। দেখলাম ব্যতিক্রমী এক মাতৃরূপ। ক্যালেন্ডার বলছে, এখন পাতাঝরার মরসুম। কিন্তু শরতের প্রতিচ্ছবিই চোখে পড়ছে চারিদিকে। শহরের মতো ঝলমলে আলো নেই এখানে। কিন্তু ঘন সবুজে ঘেরা, ধুলোমাখা পথের এক প্রান্তের এই পুজো মায়ামাখানো। যা ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে বহু ঐতিহ্য, ইতিহাস। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীনতম সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সিন্ধু নদের তীরে। সেই সভ্যতার অন্যতম দুই প্রধান কেন্দ্র হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো। মহেঞ্জোদারোর আবিষ্কারের সাথে যিনি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন, তিনি রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। বনগাঁর ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জোড়া শিবমন্দির পেরিয়েই ৩০০ বছরের পুরনো দালানে পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। উঠোন জুড়ে শিউলি ছড়ানো। বহরমপুর থেকে এসে বনগাঁ ছয়ঘরিয়ায় এই দালানেই দুর্গাপুজো শুরু করেন গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠাকুরদা। স্বপ্নাদেশ পেয়ে দুর্গাপুজো শুরু করেন গৌরহরি। দুর্গার যেমন মূর্তি তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন, সেই আদলেই প্রতিমা গড়ার আদেশ দেন। বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গার বৈশিষ্ট্য হল তাঁর হাত। দেবীর দুই হাত মানুষের মতো। বাকি আটটি হাত বিড়ালের থাবার মতো। তাই একে বলা হয় 'বিড়ালহাতি দুর্গা'। প্রতিপদ থেকে দুর্গা দালানের একপাশে চণ্ডীতলায় শুরু হয় ঘটপুজো। বোধন থেকে প্রাচীন রীতি মেনেই চলে দেবীর আরাধনা। দশমীতেই বরণের পরে মায়ের বিসর্জন হয়। তবে তার জন্য সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করেন বাড়ির সদস্যরা। পশ্চিমাকাশে সন্ধ্যাতারা উঠলে বাড়ির পিছনে নাওভাঙা নদীতে দেবীর বিসর্জন হয়। সময় যত এগিয়েছে, বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয় জৌলুস ক্রমশ কমেছে। কিন্তু এই শতাব্দীপ্রাচীন পুজোর প্রতি গ্রামবাসীদের আবেগে কখনও ভাটা পড়েনি।