আপনি কি কখনও খেয়াল করেছেন, ঠান্ডা লাগলে বা প্রিয় কোনও গান শুনলে হাতে অনেক সময় আমাদের হাতের রোম খাড়া হয়ে যায়? এই ঘটনাকেই বলা হয় গুজবাম্পস বা বাংলায় রোম খাড়া হওয়া। এটি এমন একটি প্রাকৃতিক শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া, যা আমাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই ঘটে। যদিও এটি অদ্ভুত মনে হতে পারে, আসলে এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া একটি পুরনো প্রতিক্রিয়া। ঠান্ডা লাগুক, ভয় লাগুক বা কোনও আবেগঘন মুহূর্তে মন ভরে উঠুক— গুজবাম্পস হল শরীরের সেই প্রাচীন প্রতিক্রিয়া, যা আমাদের অনুভূতি এবং পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত।
গুজবাম্পস কী?
গুজবাম্পস হল ত্বকের উপর ছোট ছোট দানা বা উঁচু হয়ে যাওয়া অংশ, যা ঘটে রোমের গোড়ার ক্ষুদ্র পেশি সংকুচিত হলে। এতে রোম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায় এবং ত্বক খানিকটা উঁচু দেখায়— ঠিক যেমন হাঁসের ত্বক দেখতে হয়, সেখান থেকেই এর নাম এসেছে ‘গুজবাম্পস’। চিকিৎসা পরিভাষায় এই প্রতিক্রিয়াকে বলা হয় ‘পাইলোইরেকশন’।
কেন গুজবাম্পস হয়?
গুজবাম্পস সাধারণত তিনটি কারণে হয়—
ঠান্ডা লাগলে: শরীর তখন উষ্ণতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। চুল খাড়া হলে পশুদের শরীরে ঘন লোমস্তর তৈরি হয়, যা ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে। মানুষের ক্ষেত্রে এটি কেবল সেই পুরনো প্রতিক্রিয়ার একটি অবশিষ্ট রূপ।
আবেগজনিত প্রতিক্রিয়া: ভয়, আনন্দ, উত্তেজনা বা অনুপ্রেরণার মুহূর্তে শরীরের স্নায়ু ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। ভয় লাগলে শরীর ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। তখনই গুজবাম্পস দেখা যায়।
হঠাৎ স্পর্শ বা চমক: হঠাৎ ঠান্ডা লাগা, আবেগপূর্ণ গান শোনা বা অপ্রত্যাশিত কোনও উদ্দীপনা থেকেও গুজবাম্পস হতে পারে।
কীভাবে গুজবাম্পস হয়?
প্রতিটি চুলের গোড়ায় একটি ছোট পেশি থাকে— অ্যারেক্টর পিলি। স্নায়ু থেকে যখন সঙ্কেত যায় ঠান্ডা বা ভয়ের কারণে, তখন এই পেশি সংকুচিত হয়ে চুল টেনে তোলে। এটি সম্পূর্ণ অবচেতন বা স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া, যা আমরা ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।
মানুষ এখনও কেন গুজবাম্পস পায়?
আমাদের প্রাণী পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে এই প্রতিক্রিয়া জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা রাখত। ঠান্ডায় তারা গায়ের লোম খাড়া করে উষ্ণতা ধরে রাখত, আর ভয়ের সময় শরীর ফুলিয়ে নিজেকে বড় দেখাত, যাতে শত্রু ভয় পায়। মানুষের শরীরে লোম প্রায় বিলুপ্ত হলেও এই স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া রয়ে গেছে।
আজকের দিনে, মানুষ সাধারণত আবেগজনিত কারণেই গুজবাম্পস পায় — যেমন প্রিয় গান শুনলে, সিনেমার কোনও সংবেদনশীল দৃশ্যে বা গভীর স্মৃতিতে আপ্লুত হলে।
কখন উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?
সাধারণ অবস্থায় গুজবাম্পস একেবারেই ক্ষতিকর নয় এবং সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তবে যদি হঠাৎ বারবার গুজবাম্পস হয়, বা এর সঙ্গে জ্বর, অসাড়তা বা অন্যান্য শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গুজবাম্পস আমাদের শরীরের এক আশ্চর্য প্রতিক্রিয়া। ছোট হলেও এটি আমাদের প্রাচীন প্রাণী-প্রবৃত্তি এবং আবেগের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। ঠান্ডা, ভয় বা ভালোবাসা—যে কারণেই হোক না কেন, প্রতিবার গুজবাম্পস ওঠার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের মানবিকতার সূক্ষ্ম স্পর্শ।
