আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তর কোরিয়ায় আবারও শুরু হয়েছে কঠোর সামাজিক নিয়ন্ত্রণের এক নতুন পর্ব। এবার টার্গেটে পড়েছেন সেইসব নারী, যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে ‘পুঁজিবাদী’ সৌন্দর্যচর্চা—বিশেষ করে স্তন ইমপ্ল্যান্ট বা ডাবল আইলিড সার্জারির মতো প্রসাধনী অস্ত্রোপচার—করানোর অভিযোগে। দেশটির শাসক কিম জং উনের সরকার এই ধরনের অস্ত্রোপচারকে ‘অসাম্যবাদী’ ও ‘বুর্জোয়া ভোগবাদী প্রবণতা’র প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
‘অসাম্যবাদী কাজ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এই অস্ত্রোপচারকে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সম্প্রতি নারীদের ওপর এক অভূতপূর্ব নজরদারি শুরু করেছে। স্থানীয় মহল্লা কমিটির সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেসব নারীর শরীরে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়—বিশেষ করে স্তন বা চোখের আকৃতিতে—তাদের বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে। এরপর তাদেরকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ডেকে পাঠানো হচ্ছে।
সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, এই ধরনের অস্ত্রোপচার ‘বুর্জোয়া সংস্কারের প্রভাব’ এবং ‘পচা পুঁজিবাদী আচরণ’-এর বহিঃপ্রকাশ। যারা এই ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বা করিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। এই অভিযানের সূত্রপাত ঘটে সম্প্রতি সারিওন শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে এক প্রকাশ্য বিচারের মধ্য দিয়ে। সেখানে এক তথাকথিত চিকিৎসক ও দুই তরুণীকে আদালতের সামনে হাজির করা হয়। অভিযোগ—তারা অবৈধভাবে স্তন ইমপ্ল্যান্ট অস্ত্রোপচার করেছেন ও করিয়েছেন। জানা যায়, অভিযুক্ত চিকিৎসক চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখেই এই কাজ শুরু করেছিলেন।
আরও পড়ুন: কোমরে অসহ্য যন্ত্রণা, ৮টি জ্যান্ত ব্যাঙ চিবিয়ে খেলেন বৃদ্ধা! টোটকা মানতে গিয়েই শেষমেশ চরম পরিণতি
বিচারে প্রসিকিউশন পক্ষের দাবি, অভিযুক্ত নারীরা ‘বুর্জোয়া রুচির দ্বারা কলুষিত’ এবং ‘পুঁজিবাদী ভোগবাদের নোংরা প্রভাবে লিপ্ত’। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নিজের শরীরের আকৃতি ‘উন্নত’ করা, কিন্তু সেই মানসিকতা রাষ্ট্রবিরোধী ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করেন বিচারক।
বিচার চলাকালীন আদালতে প্রমাণ হিসেবে প্রদর্শন করা হয় অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম, চোরাই পথে আনা সিলিকন, এবং নগদ অর্থ। বিচারক বলেন, “অভিযুক্তদের মধ্যে কেউই সংগঠন ও গোষ্ঠীর প্রতি আনুগত্য দেখায়নি। তারা অহংকার ও অস্থির সৌন্দর্যলোভে অন্ধ হয়ে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা এক বিষাক্ত আগাছায় পরিণত হয়েছে।”
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি এনকে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উত্তর হুয়াংহে প্রদেশের এক সূত্র জানিয়েছে, বিচারের সময় উপস্থিত জনতার মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ কেউ বলেন, “এমন ডাক্তাররা টাকার জন্য যেকোনো কাজ করতে পারে।” আবার অনেকে সহানুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “যখন জীবিকার কোনো উপায় থাকে না, তখন মানুষ এমন কাজ করতেই বাধ্য হয়।” এই ঘটনার পর সারিওন ও আশপাশের অঞ্চলের বহু নারী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, তাদেরও শারীরিক পরিবর্তনের সন্দেহে তদন্ত বা তল্লাশির মুখোমুখি হতে হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপ কেবল শরীরচর্চা বা প্রসাধনবিরোধী নয়; এটি মূলত রাষ্ট্রের ‘আদর্শগত বিশুদ্ধতা’ রক্ষার নামে ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর আরেকটি দমনমূলক আঘাত। আধুনিকতার প্রতীকী বহিঃপ্রকাশকেও সেখানে দেখা হচ্ছে রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রশ্ন হিসেবে। কিম জং উনের প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে, উত্তর কোরিয়ায় রাষ্ট্র এখন শুধু মতাদর্শ নয়, মানুষের শরীর ও রুচিকেও কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়।
